Wednesday, March 18, 2015

দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল:যুগান্তর

অবরোধ-হরতালে ভয়াবহ সহিংসতায় সারা দেশে মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। দুর্বৃত্তদের পেট্রলবোমায় মারা যাচ্ছেন অসহায় মানুষ। কথিত বন্দুকযুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। আন্দোলনকারীদের হামলায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীও মারা যাচ্ছেন। সব মিলে চলমান আন্দোলনে এ পর্যন্ত ১৫৪ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে পেট্রলবোমা ও আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ৬৬ জন। কথিত বন্দুকযুদ্ধ, আইনশৃংখলা রক্ষাকা
রী বাহিনীর সদস্যদের গুলি, গণপিটুনি ও ট্রাকচাপা এবং রাজনৈতিক সংঘর্ষে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের মোট ৬৩ নেতাকর্মী মারা গেছেন বলে বিএনপি দাবি করেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যোগ হয়েছে গুম আতংক। বিশেষ করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ হওয়ার পর বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। গত ২ মাসে ৩৬ নেতাকর্মী গুম হন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। এরমধ্যে চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। আদালতে তোলা হয়েছে ১৪ জনকে। এখনও খোঁজ মেলেনি সালাহ উদ্দিনসহ ১৮ জনের। এই ১৮ জনের মধ্যে ১১ জনের পরিবার যুগান্তরের কাছে অভিযোগ করেন, আইনশৃংখলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তাদের স্বজনদের তুলে নিয়ে গেছে। বাকি ৭টি পরিবারের সঙ্গে যুগান্তরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে ৫ জানুয়ারির পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে  এ ৭ জন নিখোঁজের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গুম সম্পর্কে পরিবারগুলোর অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে র‌্যাব। এদিকে হরতাল-অবরোধের সময় বিএনপি-জামায়াতের হামলায় ক্ষমতাসীন দলের ২৫ নেতাকর্মী খুন হয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।  বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এবং যুগান্তরের প্রতিনিধিদের নিজস্ব  অনুসন্ধান এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে তৈরি করা তালিকা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। পেট্রলবোমা ও পুলিশের হামলায় আহত হয়েছেন প্রায় দেড় হাজার মানুষ। এদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। এদের মধ্যে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সারা দেশের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নেন ৩৫০ জন। এমনকি সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও দুর্বৃত্তদের হামলা থেকে রেহাই পাননি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান আন্দোলন কর্মসূচি ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নেয় আইনশৃংখলা বাহিনী। তারা জিরো টলারেন্স দেখিয়ে সারা দেশে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব থেকে শুরু করে কেন্দ্র ও তৃণমূলের নেতাকর্মী আটক এবং গ্রেফতার হন। নাশকতার ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৩৫ হাজার নেতাকর্মীকে ১ হাজার ৪০০ মামলার আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় ১৬ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে আটক ও গ্রেফতার  করা হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। যদিও সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, এ সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়। নির্যাতন করা হয় পরিবারের সদস্যদেরও বলে ২০ দলীয় জোট সূত্র নিশ্চিত করেছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে আটকের পর নিখোঁজের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতী মাহমুদ খান যুগান্তরকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’ র‌্যাব সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে যথাযথ আইন মেনে আসামি গ্রেফতার করে। যে কোনো আসামিকে আটকের পর তথ্যপ্রমাণসহ নির্দিষ্ট সময়ে সংশ্লিষ্ট থানায় সোপর্দ করা হয়। এক্ষেত্রে র‌্যাব সদস্যরা সব সময়ই আইনের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল থাকেন। আটকের পর অধিকাংশ নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের অভিযোগ র‌্যাবের বিরুদ্ধে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুফতী মাহমুদ খান বলেন, র‌্যাব আইনের বাইরে কিছু করে না।   আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর নিখোঁজের বিষয়ে স্বজনদের অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন যুগান্তরকে বলেন, কেউ মামলার আসামি বা সন্দেহভাজন হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করবে এটাই স্বাভাবিক। পুলিশ আটকের পর কাউকে খুঁজে না পাওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে পুলিশ সদর দফতর থেকে স্বপ্রণোদিত হয়েই বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হয়। কারণ কেউই আইনের বাইরে নয়। ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোথাও পুলিশ আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষার অধিকার পুলিশের রয়েছে। জানুয়ারি থেকে কথিত বন্দুকযুদ্ধ, গণপিটুনি, গুলিবিদ্ধ ও ট্রাকচাপায় বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ৬৩ নেতাকর্মী খুন- দাবি বিএনপির : যুগান্তর  প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন,  ৫ জানুয়ারি  নির্বাচনের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটে এ পর্যন্ত আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কথিত বন্দুকযুদ্ধ, গণপিটুনি, গুলিবিদ্ধ হয়ে, ট্রাকচাপায় ৫৩ জন মৃত্যুবরণ করেন। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা মারিয়া ইউনিয়নের ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি মজির উদ্দিন ৫ জানুয়ারি বানেশ্বর বাজারে মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। একইদিন শিবগঞ্জের কানসাটে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করতে গেলে পুলিশের গুলিতে জামশেদ আলী নামে একজন বিএনপি কর্মী খুন হন। জামশেদ শিবনারায়ণপুরের মমতাজ আলীর ছেলে। ৭ জানুয়ারি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে পুলিশের গুলিতে মারা যান মিজানুর রহমান রুবেল ও মহিউদ্দিন বাবুর্চি। ওইদিন বিকালে ২০ দলের মিছিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। তাদের নোয়াখালীর মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর তারা দু’জন মারা যান। রুবেল চৌমুহনী বড়পোল এলাকার দোকান মালিক ছিলেন। আর মহিউদ্দিন যুবদল কর্মী। ১৪ জানুয়ারি লোহাগড়া উপজেলায় ট্রাকের চাপায় মারা যান মোহাম্মদ জুবায়ের নামে এক শিবিরকর্মী। জামায়াতের অভিযোগ, পুলিশ তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে। র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কানসাটের শ্যামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি মতিউর রহমান নামে ছাত্রদল নেতা খুন হন ১৫ জানুয়ারি। শ্যামপুরের বাজিতপুর গ্রামের অনুসাক আলী ওরফে মন্টু মিয়ার ছেলে সে। ১৯ জানুয়ারি রাতে ঢাকার মতিঝিলে বন্দুকযুদ্ধে খুন হন জামায়াত নেতা ইমরুল কায়েস। তিনি নড়াইল পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার ছিলেন। নড়াইল শহর জামায়াত নেতা আনোয়ার হোসেন মোল্লার ছেলে কায়েস। খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জনি ২০ জানুয়ারি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। তার শরীরে একাধিক গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়। তিনি ইয়াকুব আলীর ছেলে। তার মৃত্যুর সময় স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন। একদিন আগে জনির স্ত্রীর একটি পুত্র সন্তান হয়েছে। লক্ষ্মীপুর সদর ছাত্রদল সাবেক নেতা সোলায়মান উদ্দিন জিসান র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে মারা যান। আবদুল কালাম আজাদ ও সুলতান বিশ্বাস ২৫ জানুয়ারি রামপুরার বনশ্রীতে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। আজাদের বাড়ি ভোলায়। গত ২২ ডিসেম্বর তিনি নিখোঁজ হন। তারা দু’জন পেশাদার ছিনতাইকারী বলে পুলিশ দাবি করে। আসাদুল্লাহ তুহিন নামে চাঁপাইয়ের ছাত্রশিবিরের নেতাকে ২৬ জানুয়ারি র‌্যাব পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরের দিন সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। তুহিনের বাবা ইমাদুল হক অভিযোগ করেন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিকল্পিতভাবে তার ছেলেকে হত্যা করেছে। র‌্যাবের দাবি তাদের গাড়ি থেকে পালানোর সময় ট্রাকের ধাক্কায় তার মৃত্যু হয়। নবাবগঞ্জ সিটি কলেজ শাখা শিবিরের সভাপতি ছিলেন তুহিন। রাজশাহীর ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক জামায়াত নেতা নুরুল ইসলাম শাহীন ২৮ জানুয়ারি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। তিনি রাজশাহীর পদ্মা প্রিন্টিং প্রেসের মালিক ছিলেন। রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে সে। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নোওয়াকাটি গ্রামের রফিকুল ইসলাম ২৮ জানুয়ারি মধ্যরাতে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। পুলিশের দাবি তিনি আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। নান্দাইল উপজেলা ছাত্রদল নেতা আসিফ পারভেজ তপনের মরদেহ ২৯ জানুয়ারি ময়মনসিংহ থেকে উদ্ধার করা হয়। তিনি কিশোরগঞ্জ কলেজে এলএলবিতে পড়ালেখা করতেন। রাজশাহী মহানগরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আইনুর রহমান মুক্তাকে ২৯ জানুয়ারি আইনশৃংখলা বাহিনীর পরিচয়ে গ্রেফতার করা হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। পরের দিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার গুলিবিদ্ধ মরদেহ পাওয়া যায়। ভোলা চরফ্যাশন উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম মুকুলের গুলিবিদ্ধ লাশ ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর রূপনগর থেকে উদ্ধার করা হয়। তার বাবা মোস্তফা কামাল চরফ্যাশন উপজেলা জামায়াতের আমীর। এমদাদুল্লাহ নামে এক শিবিরকর্মী ৩০ জানুয়ারি মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। সে ঢাকা কলেজ পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র ছিল। সে ৯৩ নম্বর ওয়ার্ড (শাহআলী) ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিল বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তার গ্রামের বাড়ি জামালপুর সদরের বানিয়ারপাড় গ্রামে। সিরাজগঞ্জের উল্লাহপাড়ায় স্থানীয় জামায়াত নেতা সাইদুল ইসলাম ১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন। পরের দিন তিনি মারা যান। সাইদুর উল্লাপাড়া সদর ইউনিয়ন জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক ও ঢেউটিন ব্যবসায়ী ছিলেন। যশোরের মনিরামপুর যুবদল নেতা ইউসুফ মিয়া ও লিটন আলীকে ২ ফেব্রুয়ারি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় বলে তার স্বজনরা অভিযোগ করেন। পরের দিন ট্রাকচাপায় তাদের মৃত্যু হয় বলে পুলিশ জানায়। মুজাহিদুল ইসলাম জিহাদ ও শাখাওয়াত হোসেন রাহাত নামে দু’জন ৪ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ীতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। ৪ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে ভাসানটেক বালুর মাঠে বিএনপি কর্মী আল আমিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৮ জানুয়ারি থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। ৪ ফেব্র“য়ারি ভাসানটেকে গাজী মোহাম্মদ নাহিদ নামে এক বিএনপি কর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়। বন্দুকযুদ্ধে তিনি মারা যান বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরে মনির হোসেন নামে একজন বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। তিনি একটি কার্টন ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। তার ভাই ইসরাফিল জানান, আগের রাতে পুলিশ পরিচয়ে বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়। সাতক্ষীরা জামায়াতকর্মী শহিদুল ইসলাম ৬ ফেব্র“য়ারি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। তিনি সাতক্ষীরা জামায়াত নেতা নূর আলীর ছেলে। একই দিন শিবির কর্মী শাহাবুদ্দিন পাটোয়ারী কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। শাহাবুদ্দিন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা শিবির সভাপতি ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিবির নেতা সাহাবুদ্দিন রিপন ৬ ফেব্র“য়ারি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। তিনি ক্রুপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ৭ ফেব্র“য়ারি মো. বাচ্চু নামে জামায়াতের এক কর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ৮ ফেব্র“য়ারি মিরপুরের তালতলায় বন্দুকযুদ্ধে মারা যান জসীমউদ্দিন নামে এক শিবির নেতা। বিএনপি কর্মী রাজু আহমেদ ৮ ফেব্র“য়ারি যশোরে ক্রসফায়ারে মারা যান। ৯ ফেব্র“য়ারি যাত্রাবাড়ীতে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান রাসেল নামে একজন। তিনি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করতেন। বিএনপি নেতা মো. সোহেল মিয়াকে ৮ ফেব্রুয়ারি তার চৌদ্দগ্রামের বাসা থেকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়। পরের দিন দাউদকান্দিতে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। কুমিল্লা সদরে কালা স্বপন নামে একজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।  ট্রাকচাপায় তার মৃত্যু হয় বলে জানানো হয়। তার বাবার নাম বাবুল মিয়া। চৌদ্দগ্রামের জগমোহনে তার বাসা। ১৫ ফেব্রুয়ারি  সীতাকুণ্ড উপজেলায় পুলিশের গুলিতে ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. আরিফ হোসেন আরিফ (২৪) নিহত হন। মাগুরার ছয়ঘরিয়া ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান ১৫ ফেব্র“য়ারি পুলিশের গুলিতে মারা যায়। ১৪ ফেব্র“য়ারি দিনাজপুরের নাশরাতপুর ইউনিয়ন শিবিরের সভাপতি মতিউর রহমান যৌথ বাহিনীর অভিযানে গুলিবিদ্ধ হন। পরের দিন তিনি মারা যান। ১৭ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা সদরের শিবিরের সাবেক সভাপতি মোস্তফা মঞ্জিল ক্রসফায়ারে মারা যান। ১৭ ফেব্রুয়ারি খুলনার ডুমুরিয়ার বিএনপি কর্মী আবু সাইদকে তার বাসা থেকে আটক করে পুলিশ। পরের দিন যশোরের মনিরামপুরে তার গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। একইদিন মনিরামপুরে স্থানীয় বিএনপি কর্মী বজলুর রহমান বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। যুবদল নেতা মঈনউদ্দিন চৌধুরী বাবলুর মরদেহ ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে উদ্ধার করা হয়। তার শরীরে সাতটি গুলির চিহ্ন ছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের আগৈলঝাড়ায় বন্দুকযুদ্ধে মারা যান ছাত্রদল নেতা টিপু হাওলাদার ও যুবদল নেতা কবির মোল্লা। আগের দিন তাদের ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। টিপু বরিশাল জেলা ছাত্রদলের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। কবির বরিশাল জেলা যুবদলের রাজনীতি করতেন। শ্রমিক দল নেতা আবদুল ওয়াদুদ বেপারি ২৩ ফেব্র“য়ারি রাজধানীর বাঙলা কলেজের কাছে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। একই রাতে মিরপুরের কাজীপাড়া এলাকায় বাপ্পী, রবিন ও সুমন রবি দাস নামে তিনজন গণপিটুনিতে মারা গেছে বলে পুলিশ দাবি করলও তাদের তিনজনের শরীরে অসংখ্য গুলির চিহ্ন ছিল। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এরা শ্রমিক দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ২৩ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ সদরে পলাশ হোসেন ও দুলাল হোসেন নামে দু’জনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ডিবি পরিচয়ে তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। তবে পুলিশ তা অস্বীকার করেন।  ২৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীনগর এলাকায় মো. শাহীন নামে স্থানীয় এক বিএনপি কর্মীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ৪ মার্চ ফেনীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ছাত্রদল নেতা আরিফুর রহমানকে না পেয়ে তার বাবা মফিজুর রহমানকে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় ভয়ে তিনি হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান। ৮ মার্চ রংপুরের মিঠাপুকুরে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান স্থানীয় জামায়াত নেতা নাজমুল হক লাবলু। ইসরাফিল আহমেদ নামে লক্ষ্মীপুরের বশিকপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা ১১ মার্চ নিখোঁজ হন। পরের দিন নোয়াখালীর ডেইলা বাজার এলাকায় তার গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। মাগুরার শালিখার শতখালী এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে শালিখার ছয়ঘরিয়া এলাকায় ১৬ ফেব্র“য়ারি সন্ধ্যার প্রাক্কালে বিএনপি সমর্থক মশিয়ার রহমান (৪০) নামের এক রংমিস্ত্রি পুলিশের ওপর বোমা হামলার কথিত অভিযোগে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। বিভিন্ন সংঘর্ষে নিহত : পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৫ জানুয়ারি নাটোর ছাত্রদল নেতা রাকিব মুন্সী, রায়হান হোসেন রানা নিহত হন। ১৫ জানুয়ারি নোয়াখালী সোনাইমুড়িতে মোর্শেদ আলম পারভেজ নামে এক ছাত্রদল নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৮ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের হাতে খুন হন সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। ২৭ জানুয়ারি ভোলার চরফ্যাশনে ছাত্রদল নেতা হারুনুর রশিদ ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের হামলায় গুরুতর আহত হন। ওইদিনই তিনি হাসপাতালে মারা যান। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে যুবদল নেতা ইমাম হোসাইন রুবেল ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের হামলায় নিহত হন। মো. সোহেল নামে বেগমগঞ্জে যুবদল কর্মীকে প্রতিপক্ষরা গুলি করে হত্যা করে।  যশোর সদরে মো. ডলার নামে এক বিএনপি কর্মীকে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা কুপিয়ে হত্যা করে ২৫ ফেব্রুয়ারি। ৪ মার্চ লক্ষ্মীপুরে সোহেল রানা নামে বিএনপি কর্মী দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন। ইসলাম হোসেন নামে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা যুবদল নেতাকে ট্রাকচাপায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। তার বাবার নাম ইবরাহিম হোসেন। তিনি ঋষিকুল ইউনিয়ন যুবদলের নেতা ছিলেন।    গুলিতে পঙ্গু অর্ধশত জন : গত ২ মাসে পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে অর্ধশত জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের সবারই স্থায়ী পঙ্গু হওয়ার আশংকা রয়েছে। ৯ জানুয়ারি রাজধানীর শ্যামপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, ১২ জানুয়ারি উত্তরার আজমপুরের মুন্সী মার্কেটের সামনে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বিএনপি কর্মী হাজী ফায়েজ আলী, ২০ জানুয়ারি শাহবাগে পুলিশের গুলিতে নূর হোসেন, ২১ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার লতিফপুরে সৌদিপ্রবাসী মহীনউদ্দিন, ২ ফেব্র“য়ারি পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. নোমান, কুমিল্লায় জামায়াত কর্মী ও মসজিদের ইমাম মাওলানা ইউসুফ, ঢাকার পল্লবীতে গাড়িচালক ইসমাইল হোসেন এবং বাড্ডার ক্যামব্রিয়ান কলেজের সামনে খেলনা বিক্রেতা শাহ মো. সালমান ও নিউমার্কেট এলাকায় যুবদল নেতা আবদুর রাজ্জাক গুলিবিদ্ধ হন। ৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে পঙ্গুত্ব বরণ করেন ৫ জন। তারা হলেন- সাতক্ষীরায় ফারুক হোসেন, রাজশাহী শহরের ভদ্রার সেতু আহম্মেদ, গাজীপুরের শিববাড়ী মোড়ে লেগুনাচালক নাসির উদ্দিন, ঢাকার গুলিস্তানে ইসমাইল হোসেন, মোহাম্মদপুরে সলিমুল্লাহ রোডে নাজমুল আহসান ও ফজলুল হক। ৪ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্র নয়ন বাছার ও ঢাকার শাহজাহানপুরে কাঁচামাল ব্যবসায়ী চাঁদপুর ফরিদগঞ্জের আবু কাওছার, ৬ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার কলারোয়ায় পুলিশের গুলিতে আহত হন ছাত্রদল নেতা আবদুল মজিদ, ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বঙ্গবাজারে সিঙ্গাপুর প্রবাসী আবদুর রহমান (৩০) ও ইমিটেশন ব্যবসায়ী মামুন, ৮ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ীতে পেট্রলবোমা নিক্ষেপকারী সন্দেহে টহল পুলিশের গুলিতে জাকির হোসেন ও কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে জামায়াত কর্মী এবং মসজিদের ইমাম মাওলানা বেলাল, ১১ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার বাগেরায় বিএনপি সমর্থক ও পান দোকানি শরিফ মোল্লা ও বাসচালকের সহকারী আর মেহেদী, ১৩ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ীর দ্বীন মোহাম্মদ মার্কেটের অ্যাম্ব্রডায়রি ব্যবসায়ী আতাউর রহমান পুলিশের গুলিতে আহত হন। ১৫ ফেব্র“য়ারি সিলেটে মিছিলকে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি চালালে শর্মী দেব নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী আহত হয়। শর্মী কিশোরী মোহন বালিকা বিদ্যালয় হতে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে পুলিশের গুলিতে আহত হয় আজিম উদ্দিন কলেজের ছাত্র ফরিদ আহমেদ। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ মার্চ মারা যায় সে। ১ মার্চ রাজশাহীতে রিংকু নামে এক তরুণ, ২ মার্চ লক্ষ্মীপুরে যুবদল কর্মী আরিফ হোসেন (১১ মার্চ পঙ্গু হাসপাতালে মৃত্যু), ৮ মার্চ কবি নজরুল সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র আবদুল্লাহ আল মামুন, ৯ মার্চ সায়েদাবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, ১১ মার্চ রাজশাহী মহানগরীর শ্যামপুরে শিবিরকর্মী সবুজ আলী ও ষষ্ঠীতলা এলাকায় অপর শিবিরকর্মী শোভন গুলিবিদ্ধ হয়। এছাড়া ব্যবসায়ী মোমেন, কদমতলীর যুবদল নেতা আবদুল হামিদ, বাড্ডার মাসুম বিল্লাহ, সিরাজগঞ্জে রফিকুল ইসলাম ও ওবায়দুল ইসলামসহ বহু নেতাকর্মী পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। পেট্রলবোমা ও আগুনে নিহতরা : ৬ জানুয়ারি থেকে চলা দেশব্যাপী অবরোধ ও হরতালে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রলবোমা ও আগুনে দগ্ধ হয়ে এ পর্যন্ত ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রংপুরের মিঠাপুকুর, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় বাসে ভয়াবহ পেট্রলবোমা হামলা হয়। চৌদ্দগ্রামে সাতজন ও রংপুরে ৫ জন তাৎক্ষণিকভাবে মারা যান। এ তিনটি বাসে আগুনে দগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন প্রায় অর্ধশত। যশোরের মুরাদ আলী মোল্লা ১১ জানুয়ারি মারা যান। ৬ জানুয়ারি পেট্রলবোমায় তিনি দগ্ধ হন। ১৩ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের জোরানগঞ্জে বোমার আঘাতে ট্রাকে থাকা তিনজন দগ্ধ হন। পরে এনাম হোসেন নামে একজন মারা যান। ১৪ জানুয়ারি রংপুরের মিঠাপুকুরে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় রহিমা খাতুন, তার ছেলে রহিম বাদশা, জেসমিন আক্তার, তসিরন বেগমসহ এক শিশু। পরে হাসপাতালে মারা যান মনোয়ার বেগমসহ আরও দু’জন। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় তোফাজ্জল হোসেন মারা যান। ১৮ জানুয়ারি বরিশালে পেট্রলবোমায় মারা যান সোহাগ বিশ্বাস। ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ন ইউনিটে মোট ১৬৭ জন ভর্তি হয়। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৩৪ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ১৫ জন। তারা হলেন যশোরে পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ মুরাদ, রংপুরে বোমা হামলায় তাসিরন, মগবাজারে প্রাইভেট কার চালক আবুল কালাম, সাভারে পেট্রলবোমা হামলা দগ্ধ জাকির হোসেন, ট্রাকচালক আবদুর রহিম, ট্রাক ড্রাইভার বকুল দেবনাথ, কাভার্ড ভ্যান চালক হোসেন মিয়া, অটোরিকশায় বোমা হামলায় আবদুল ওয়াহিদ বার্ন ইউনিটে মারা যান। এছাড়া চট্টগ্রামের মো. জাহিদ, নেত্রকোনার বাপ্পি, কাহালু বগুড়ার ট্রাক হেলপার জাহাঙ্গীর, ভুলতার শাকিল বোমা হামলায় দগ্ধ হয়ে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়া মাতুয়াইলে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ নূর আলম বার্ন ইউনিটে মারা যান। কক্সবাজারের রাশেদুলও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সবশেষ গাজীপুরের মরিয়ম ১২ মার্চ বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ১৪ জানুয়ারি বঙ্গবাজারে ককটেল হামলায় গুরুতর আহত হন সানজিদ হাসান অভি। পরে ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। অভি কবি নজরুল সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। মিঠাপুকুরে পেট্রলবোমায়া দগ্ধ মনোয়ারা বেগম কয়েকদিন আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ২ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় সাতজন পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। তারা হলেন যশোর শহরের সেন্ট্রাল রোডের বাসিনার নুরুজ্জামান পপলু ও তার মেয়ে মাইসা তাসনিম, কক্সবাজারের চকরিয়ার আবু তাহের ও মো. ইউসুফ, নরসিংদীর বালুরপাড়া গ্রামের আসমা বেগম ও তার ছেলে মো. শান্ত, ঢাকার কাপ্তান বাজার এলাকার মো. ওয়াসিম। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় পেট্রলবোমা ও আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান, নূর হোসেন, জাফর রাঢ়ি, শাহজাহান মিয়া, আবদুর রহিম, আবদুল মালেক, আ. রশিদ, লিটন হোসাইন নয়ন, গনেশ দাস, আলম, লিনি হোসেন, মাহমুদুল হাসান, পলাশ হোসেন, আবুল কালাম, সাজু মিয়া, সোনাভান, মুন্না, ইজাজুল, সুমন, হালিমা বেগম, শিল্পী রানী, সৈয়দ আলী, কামাল হোসাইন, রাশেদুল ইসলাম, শামীম মিয়া ও শহীদুল ইসলাম। গুম ৩৬ : গত ৭১ দিনে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুলির পাশাপাশি আতংক ছড়িয়েছে গুম ও অপহরণ। এ সময়ের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের কমপক্ষে ৩৬ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে বলে পরিবার এবং দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। এদের মধ্যে চারজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। আদালতে তোলা হয়েছে ১৪ জনকে। এখনও খোঁজ মেলেনি বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন ও ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান খোকনসহ ১৮ জনের। নিখোঁজ ১৮ জনের মধ্যে গত দু’দিনে ১১ জনের পরিবারের সঙ্গে যুগান্তরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। এসব পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর পরিচয়ে আটকের পর থেকে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। এরা হচ্ছে : বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা আবদুল বাসেত মারজান, মিঠাপুকুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক বিএনপি কর্মী আল আমিন কবির, তার স্ত্রী বিউটি বেগম, প্রতিবেশী মৌসুমী, বিএনপি সমর্থক আইনজীবী সোহেল রানা, পল্লবী থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নূর আলম, পল্লবীর পোশাক শ্রমিক ও জাতীয় গার্মেন্টস কল্যাণ ফেডারেশনের নেতা আমিনুল ইসলাম, মতিঝিলের বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের আত্মীয় ও ফকিরাপুলের ব্যবসায়ী মাজেদুর রশীদ ও তিতুমীর কলেজের ছাত্রদল কর্মী মেহেদী হাসান রুয়েল। বাকি সাতজন হচ্ছেন : কাফরুল থানা জামায়াতের নেতা একেএম তৌফিকুল হক, কুষ্টিয়ার বিএনপি কর্মী হাফিজুর রহমান ও সাগর আলী, ঢাকা কলেজের ছাত্র আতাউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র যুবায়ের আনসারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুজাহিদ হোসেন অপু ও মাইনুল ইসলাম। এদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে এদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে আটকের পর নিখোঁজ থাকার খবর জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। তাদের পরিবারের ও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বিবৃতি পাঠিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে আটকের পর নিখোঁজের দাবি করা হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলেন ‘কোনো ব্যক্তিকে আটকের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বীকার বা আদালতে হাজির না করাকে গুম বোঝায়।’ এ ক্ষেত্রে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে গত ২৪ জানুয়ারি আটকের ২০ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর আটকের বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে। এ কারণে তাকে গুম করা হয়েছে বলা যাবে না। ১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে বলে তার পরিবার দাবি করে। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট মামলা ও থানায় জিডি করা হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলছে তারা সালাহ উদ্দিনকে আটক করেনি। আট দিনেও সালাহ উদ্দিনের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। গত ৬ মার্চ রাজধানীর শুক্রাবাদ থেকে ছাত্রদলের জুয়েল-হাবীব কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। ১০ দিনেও তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে তার স্ত্রী শাহ ইশরাত জাহান আজমেরি যুগান্তরকে জানান। খোকনের সন্ধান চেয়ে আদাবর থানায় জিডি করা হয়েছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সমর্থক আইনজীবী সোহেল রানাকে উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টর থেকে ছাই রঙের মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। নিখোঁজের স্ত্রী আফরোজা সুলতানা জানান, তার স্বামী বিএনপি সমর্থক হলেও সক্রিয় নেতা নন। ঘটনার দিন সোহেল আদাবরের বাসা থেকে তার বন্ধু রিংকুসহ উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে যান। উত্তরা থেকে রিংকু ও সোহেলকে আটক করে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তোলা হয়। কিছু সময় পর রিংকুকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩৭ দিন পার হলেও সোহেলের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। আদাবর থানায় আফরোজা সুলতানার করা জিডি তদন্ত করছেন আদাবর থানার এসআই মারূফ হাসান। গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে সাদা পোশাকধারী কয়েকজন ডিবি পুলিশ পরিচয়ে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মারজানকে আটক করে। তার গ্রামের বাড়ি মিঠাপুকুরের তিতলী দক্ষিণ পাড়া। তার স্ত্রী রোকাইয়া খানম লুকি যুগান্তরকে বলেন, বাসেত মারজান মিঠাপুকুর উপজেলার নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান। উপজেলা পরিষদের কাজে তিনি ৩১ জানুয়ারি ঢাকায় এসে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠেন। সেখান থেকে রাতে ডিবি পরিচয়ে তাকে তুলে নেয়া হয়েছে। এরপর থেকে এখনও নিখোঁজ তিনি। গত ১৪ জানুয়ারি রংপুরের মিঠাপুকুরের তিতলী গ্রাম থেকে যৌথ বাহিনী দলিল লেখক আল আমিন কবির, তার স্ত্রী বিউটি বেগম ও তাদের প্রতিবেশী মৌসুমীকে শত শত মানুষের সামনে থেকে আটক করে নিয়ে যায়। আল আমিন কবিরের মা মাতুরা বেগম মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে জানান, শতাধিক লোকের সামনে র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির অস্ত্রধারী লোকজন বাড়ি থেকে ছেলে আল আমিন, ছেলের বউ বিউটি আক্তার ও প্রতিবেশী মৌসুমীকে আটক করে নিয়ে গেছে। রংপুর জেলা কারাগার, রংপুরের কোতোয়ালি থানা, আশপাশের থানা, র‌্যাব কার্যালয় হাসপাতালসহ সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করেও মঙ্গলবার পর্যন্ত তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে পল্লবী থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূর আলমকে গাজীপুরের জয়দেবপুরের বড় ভাইয়ের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। তার স্ত্রী জয়দেবপুর থানায় জিডি ও অপহরণ মামলা করেছেন। কিন্তু মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে নিখোঁজ নূর আলমের স্ত্রী রীনা আলম মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে জানান। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মতিঝিলের তরঙ্গ ভবনের সামনে থেকে অপহরণ করা হয় মতিঝিলের ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের আত্মীয় মাজেদুর রশীদ মাজেদকে। তার বাসা ১৭৮, ফকিরাপুলে। মাজেদের স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন বিথী যুগান্তরকে বলেন, স্বামীর সন্ধান পেতে একাধিক সংবাদ সম্মেলন ও ৫ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেছেন। মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি যমুনা ফিউচার পার্কের দ্বিতীয় তলা থেকে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদলের কর্মী মেহেদী হাসান রুয়েলকে আটক করে পুলিশ। সঙ্গে শুভ নামে আরেকজন ছিল। শুভকে বিমানবন্দর এলাকায় ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু ২০ দিনেও রুয়েলের কোনো খোঁজ মেলেনি বলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা যুগান্তরকে জানান। গত ৫ মার্চ পল্লবী থেকে নিখোঁজ হন পোশাক শ্রমিক ও জাতীয় গার্মেন্টস কল্যাণ ফেডারেশনের নেতা আমিনুল ইসলাম। তার স্ত্রী মিনা আমিন অভিযোগ করে বলেন, ৫ মার্চ সকালে বাসা থেকে বের হন তার স্বামী। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ। ৬ মার্চ তিনি পল্লবী থানায় জিডি ও ১০ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন। মিনা যুগান্তরকে বলেন, ‘জানি না কোন অপরাধে আমার স্বামীকে অপহরণ করা হয়েছে, আমি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা করছি।’ গুমের পর গুলিবিদ্ধ ৪ জনের লাশ : তারা হলেন- ১৬ জানুয়ারি নিহত চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের শ্যামপুর থেকে ছাত্রদল নেতা মতিউর রহমান, ১৭ জানুয়ারি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার বাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাবেক পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ও বর্তমানে তিনি বিএনপি কর্মী কৃষক নাসির উদ্দিনের, ১৭ জানুয়ারি ৬১, দক্ষিণ মৈশুণ্ডিতে শ্যালম অ্যাডভোকেট সোহেলের বাসা থেকে আটক হওয়া নড়াইলের জামায়াত নেতা ও পৌর কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট ইমরুল কায়েস, ৮ মার্চ শ্যামলী থেকে নিখোঁজ কাজীপাড়া মাদ্রাসার ছাত্র জসিম উদ্দিন মুন্সী। এই চারজনের পরিবারের সঙ্গে যুগান্তরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। মৃতদেহ পাওয়ার দু-তিন দিন আগে তাদের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করে নিয়ে যায় বলে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। আদালতে ১৪ : আইনশৃংখলা রক্ষাকারী পরিচয়ে আটকের পর দীর্ঘদিন গুম থাকার পর যে ১৪ জনকে আদালতে তোলা হয়েছে তারা হলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের শ্যামপুর ইউনিয়নের ছাত্রদল কর্মী হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী আবু তাহের শিশির, একই এলাকার ডাল মিলের শ্রমিক মোজাম্মেল হোসেন, ঢাকা কবি নজরুল সরকারি কলেজের ছাত্রদল কর্মী জসিম উদ্দিন, সুজন চন্দ্র দাস, রোমান আহমেদ, এম নজরুল হাসান, ইরাফান আহমেদ ওরফে ফাহিম, ঢাকা পলিটেকনিকের প্রথম বর্ষের ছাত্র সজীব, ঢাকা সিটি কলেজের ছাত্র আবদুল মান্নান, ঢাকা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের ছেলে এসএসসি পরিক্ষার্থী রিফাত আবদুল্লাহ খান, বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিনের ব্যক্তিগত সহকারী ওসমান গনি, দুই গাড়ি চালক খোকন ও শফিক, ফেজবুক পেজ বাঁশের কেল্লার এডমিন প্রধান কেএম জিয়া উদ্দিন ফাহাদ। যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য- চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, জেলায় প্রাণ হারিয়েছেন এগারো জন। আহত হয়েছেন অন্তত দুই শতাধিক। নাশকতার ঘটনায় জেলা এবং নগরীর সংশ্লিষ্ট থানায় বিএনপি-জামায়াতের ১২ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করে ১৪৯টি মামলা করা হয়েছে। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ : রাজশাহী ব্যুরো জানায়, গত দুই মাসে বিভিন্ন সংঘর্ষে রাজশাহী ও চাঁপাইয়ে নিহত হয় ১২ জন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জেই নিহত হয়েছে আটজন আর রাজশাহীতে চারজন। এই দু’জেলায় রাজনৈতিক ঘটনায় ৯০টি মামলায় আসামি করা হয়েছে ৮ থেকে ৯ হাজার। গ্রেফতার করা হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মীকে। আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের শতাধিক বাড়িতে ভাংচুর করা হয়েছে। অনেকের বাসার ফ্রিজ পর্যন্ত ভেঙে ফেলা হয়। যৌথ বাহিনীর অভিযানের ভয়ে অনেকে এলাকায় ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মহদিপুর গ্রামে অভিযানকালে বেশি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। মহদিপুর ছাড়াও রসুলপুর ও চণ্ডিপুর গ্রামে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ব্যাপক ভাংচুর করা হয় বলে নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন। খুলনা ব্যুরো জানায়, চলামান আন্দোলনে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলায় ২ জন নিহত হয়েছে। ৮টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ক্রসফায়ারে ৫ জন মারা গেছে। ট্রাকচাপায় নিহত হয়েছে দুই জন। ৬৫ মামলায় আসামি করা হয়েছে ১২৩৭ জন। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা তরিকুল ইসলামসহ ৬ নেতার বাড়িতে একযোগে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া বিএনপি নেতাদের বাড়িতে ভাংচুর ও পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে। ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খোরশেদ আলমের চাতাল, বাড়িসহ অন্তত ৭-৮টি বাড়িতে পুলিশের উপস্থিতিতে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। ৩১ জানুয়ারি গভীর রাতে খোরশেদ আলমের চাতাল ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে তাণ্ডব চালানো হয়। এরপর পুলিশ খোরশেদ আলমকে গ্রেফতার করে। তার পায়ে গুলি করা হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। যশোর জেলায় বিএনপি-জামায়াতের ২৬৪ নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছেন। বগুড়া : বগুড়া ব্যুরো জানায়, বগুড়ায় ৭১ দিনে হরতাল-অবরোধে পেট্রলবোমার আগুনে ৫ জন নিহত ও ৬ পুলিশসহ ৩৮ জন দগ্ধ হয়। এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭ জন। এসব ঘটনায় ৭১টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে জামায়াত-বিএনপির এক হাজার ৫০ জন নেতাকর্মীকে। গত ৪ মার্চ রাতে বগুড়া শহরের ঝাউতলায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ মমতাজ উদ্দিনের ব্যক্তিগত অফিসে পেট্রলবোমা হামলা চালানো হয়। এর প্রতিশোধ নিতে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা শহরে নবাববাড়ি সড়কে জেলা বিএনপির অফিসে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। সোনাতলা ও নন্দীগ্রামে ৮-১০ নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর এবং লুটপাট করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় পেট্রলবোমায় ৮ জন নিহত ও ৩১ জন আহত হন। এ পর্যন্ত দায়েরকৃত মামলা ২৪, আসামির সংখ্যা ১ হাজার ৪৫০ জন। গ্রেফতার ৩১৬ জন। দিনাজপুর : দিনাজপুরে গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে ১৫ মার্চ-এর মধ্যে রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে মামলা হয়েছে ৩০টি। আসামি ৩২৮ জন। অজ্ঞাত ২ হাজার ৩০০ জন ও গ্রেফতার হয়েছে ১২৭ জন। পেট্রলবোমায় নিহত হয়েছে ট্রাক হেলপার মতিউর, তার বাড়ি দিনাজপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ কোতোয়ালির কসবা গ্রামে। বরিশাল : যুগান্তরের বরিশাল ব্যুরো জানায়, চলমান আন্দোলনে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় পেট্রলবোমায় ৬ জন নিহত ও গুরুতর আহত হন ৪ জন। কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় ৩ জন। বিভিন্ন ঘটনায় মামলা হয়েছে ৮৮টি। এতে ৬ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ৩৯২ জন। হিজলা ও নলছিটিতে বিএনপি অফিস ভাংচুর এবং নলছিটিতে একটি কাচারি ও একটি দোকান ভাংচুর করা হয়। সিলেট : সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটের বিভিন্ন স্থানে নাশকতার ঘটনায় ৯৫ মামলা হয়। এসব মামলায় ৬ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির ৭ হাজার, জামায়াতের ৩ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। এতে গ্রেফতার ৪শ’। শতাধিক বাড়িঘর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাংচুর করা হয়। পুলিশ জানায়, ঠাকুরগাঁও জিলা স্কুলসংলগ্ন একটি ট্রাকসহ দুর্বৃত্তরা এ পর্যন্ত ৫০-৬০টি যানবাহন ভাংচুর করে। কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জ ব্যুরো জানায়, দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে, পেট্রোলবোমা ও পাথর নিক্ষেপে ১৫ জন দগ্ধসহ অন্তত ৪০ নারী-পুরুষ আহত হন। এদের মধ্যে দু’জনকে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। নাটোর : নাটোর প্রতিনিধি জানান, চলমান আন্দোলনে বিএনপির দুই নেতা খুন হন। ২০ দলের সাড়ে চার হাজার নেতাকর্মীর নামে ৯১টি মামলা ও শতাধিক নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছে। পুলিশ ও সরকারদলীয় হামলায় আহত হয়েছেন ৩০ জনের বেশি নেতাকর্মী। প্রতিপক্ষের হামলায় ক্ষমতাসীন দলের ২৫ নেতাকর্মী খুন- দাবি আ’লীগের : গত প্রায় আড়াই মাসে সারা দেশে আওয়ামী লীগের ২৫ নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। এগুলো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেছে নিহতদের পরিবার ও ক্ষমতাসীনরা। তাদের অভিযোগ দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেই এ ধরনের হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিএনপি-জামায়াত। আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআইয়ের (সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন) হিসাব মতে ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে কমপক্ষে ২৫ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এরমধ্যে ১২ জনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গুলিতে নিহত হয়েছেন ৪ জন, গলাকেটে ৪ জন, পিটিয়ে ৩ জন, আগুনে পুড়িয়ে ১ জন এবং শ্বাসরোধ করে ১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। তবে ৮ মার্চের পর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রাথমিভাবে খবর পেয়েছে সিআরআই। এ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক নেতাকর্মী। নৃশংসতা থেকে রক্ষা পায়নি স্কুলছাত্রও। যৌথ বাহিনী অভিযান চালানোর পর প্রতিশোধ নিতে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে ওই স্কুলছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের ঘটনা। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের লক্ষ্য ছিল সরকারকে অস্থিতিশীল করা। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা অবরোধ-হরতালের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করে জনমনে আতংক তৈরি করতে চেয়েছে। এভাবে তারা সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিল। কিন্তু সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তিনি জানান, যেসব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন- তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। আর খুনিদের গ্রেফতারের পাশাপাশি আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।  সিআরআইয়ের গবেষণাপত্রে নিহত ২৫ জনের নাম, ঠিকানাসহ বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এ গবেষণাপত্র থেকে জানা গেছে, বছরের শেষদিন রাতে (৩১ ডিসেম্বর ২০১৪) কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মণপুর বাজারের বানঘর এলাকায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাহ আলম নামের স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি শাহ আলমকে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তার পরিবারের ধারণা, এটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। ২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় জামাল উদ্দিন (৩০) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে গুলি করে হত্যা করে ছাত্রশিবির। ৮ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুরের যুবলীগ কর্মী ইউসুফকে ২০ দলীয় জোটের অবরোধকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে কানসাট বিএন বাজারে ৯ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টায় মোবারকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কর্মী মুকুল বিশ্বাসকে (৩০) পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় মুকুলের সঙ্গে থাকা আরও দু’জন গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ বিজিবির সহায়তায় মুকুলের লাশ একটি আমবাগান থেকে উদ্ধার করে। অবরোধ চলাকালে ১২ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে ফেনীর সোনাগাজী-মুহুরী প্রজেক্ট রাস্তার অশ্বিনীয়া পোল এলাকায় পিকেটারদের সঙ্গে যুবলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। পিকেটাররা যুবলীগ কর্মী মোবারক হোসেন ও সোনাগাজী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেলালের মৃত্যু হয়। সিআরআইয়ের গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, যৌথ বাহিনীকে সহযোগিতা করায় প্রতিশোধ নিতে ১৭ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে নবম শ্রেণীর ছাত্র রাজন আলী রকিকে (১৫) পিটিয়ে হত্যা করে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। নিহত রকি শিবগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শেখটোলা মহল্লার রুহুল আমিনের ছেলে। সে স্থানীয় বাবুপুর-উজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। কুমিল্লার সদর উপজেলার কালিবাজার ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রামে ১৭ জানুয়ারি যুবলীগ কর্মী কামরুজ্জামান টিটু খুন হন। তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত কামরুজ্জামান টিটু ওই উপজেলার ধনুয়াইশ গ্রামের মৃত আবদুর রহিমের ছেলে। তিনি এলাকায় পোলট্রি ফার্মের ব্যবসায়ী। ২০ জানুয়ারি যশোরের মনিরামপুরে শাহিনুর রহমান নামে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। শাহিনুর রহমান কাশিপুর গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে ও উপজেলা যুবলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য। ২৩ জানুয়ারি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় হুমায়ুন কবীর (৪০) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বায়শা ও আশিংড়ি গ্রামের মাঝে তালশারি নামক স্থান থেকে তার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজের ৬ দিন পর ২৪ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি মোখলেছুর রহমানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৩১ জানুয়ারি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও চার নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মজির উদ্দিনকে (৫০) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ৩১ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার হাইতকান্দি ইউনিয়নের জগদীশপুর গ্রামের এতিম আলীর বাড়িতে একাধিক ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চারদিকে আতংক সৃষ্টি করে সশস্ত্র ২৫-৩০ জন মুখোশ পরা দুর্বৃত্ত প্রবেশ করে। দুর্বৃত্তরা যুবলীগ কর্মী মহিউদ্দিনকে কোপায় এবং গায়ে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে নিহত মহিউদ্দিনের ভস্মীভূত মরদেহ উদ্ধার করে। রাজনৈতিক শত্র“তায় জামায়াত ও শিবিরের লোকজন এ হামলা চালায় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। ৩ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেলকে (৩০) গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত রুবেল দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে যুবলীগ কর্মী। ৬ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পাথৈর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়নাল আবেদীনকে (৬৫) বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে খুন করা হয়। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে ৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাত ৮টার দিকে যুবলীগ নেতা বাবর হোসেনকে (২৩) গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি পূর্ব দিঘলী গ্রামের মফিজ উল্লার ছেলে। ৮ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রনজু প্রামাণিককে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার ফুলতলা এলাকায় নিজ বাড়ির কাছে খুন হন তিনি। নিহত রনজু ফুলতলা বাজার এলাকার মৃত শুকুর প্রামাণিকের ছেলে। ৯ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ও চরমটুয়া ইউনিয়ন কমিটির সহসভাপতি এবং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বাবুল মিয়া ওরফে বাবুল মেম্বারকে (৫৫) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ১২ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা যুবলীগ নেতা আবদুল হামিদ ওরফে হিরু মিয়াকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সরিষার খেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দায় যুবলীগ কর্মী জুয়েল মিয়াকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। তার লাশ বিল থেকে উদ্ধার করা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে আওয়ামী লীগ কর্মী আবুল কালাম আজাদ ওরফে আবদুর রহমান এডুকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত আবুল কালাম আজাদ নাশকতা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের তথ্য পুলিশকে জানানোর কারণে জামায়াত-বিএনপির কর্মীরা তাকে হত্যা করেছে বলে দাবি দলীয় সহকর্মীদের। ২২ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জে আদালতে হাজিরা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে আওয়ামী লীগ কর্মী হোসেন মৃধা (৪০) খুন হন। এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি যশোরের সদর উপজেলার ইছালি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনকে (৬০) গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ৪ মার্চ লক্ষ্মীপুরে আরিফুর রহমান ফরহাদ (৩৫) নামে এক যুবলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করা হয়েছে। ৫ মার্চ বগুড়ায় মনিরুজ্জামান মানিক (২৮) নামের এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হামলাকারীদের মধ্যে থাকা এক ছাত্রদল কর্মীও আহত হয়। ৮ মার্চ পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর ইউপির সাবেক সদস্য ও আওয়ামী লীগ কর্মী মকুল হোসেনকে (৪৫) গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি দাড়ামুধা গ্রামের মৃত নওশের আলীর ছেলে।  

No comments:

Post a Comment