Monday, March 30, 2015

চট্টগ্রামে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেই মনোনয়নপত্র জমা:প্রথম অালো

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত দুই মেয়র পদপ্রার্থীর বিরুদ্ধেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী ও সদ্য বিদায়ী মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম ১১ জন এবং আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন ১২ জন নেতাকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল রোববার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। বিধি অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় সর্বোচ্চ পাঁচজনের বেশি সমর্
থক রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যেতে পারবেন না। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় নাছিরের সঙ্গে ছিলেন সাবেক সাংসদ ইসহাক মিয়া, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সহসভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসি, সাংসদ আফছারুল আমীন, সাংসদ এম এ লতিফ, সিডিএর চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী, যুবলীগের নেতা মনজুরুল আলম, ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেখা আলম, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সংগঠক অনুপ বিশ্বাস, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুদীপ্ত দেব, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা আবদুল মান্নান। বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে সাংসদ এম এ লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সাতজন ছিলাম। এটা বড় ধরনের কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন নয়।’ মনোনয়নপত্র দাখিলের পর সাংবাদিকদের আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, নগরবাসী জলাবদ্ধতা নিয়ে সংকটে আছে। মেয়র নির্বাচিত হলে নগরের জলাবদ্ধতা দূর করা হবে প্রধান কাজ। এর আগে সকাল নয়টায় মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় মনজুর আলমের সঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মাহবুবুর রহমান, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি এস এম ফজলুল হক, উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক নেতা বেলায়েত হোসেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের সদস্যসচিব এস এম ইউ নুরুল ইসলাম, সদস্য মফিজুর রহমান, জাগপার সভাপতি আবু মোহাম্মদ আনাসসহ ছাত্রদলের তিন কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রার্থীর সঙ্গে পাঁচজনই গিয়েছিলাম। সাবেক সাংসদ রোজী কবিরসহ বাকিরা ভবনের নিচে ছিলেন। বেশি কেউ থাকলে সাংবাদিক হতে পারে।’ তবে অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে সাংবাদিক এত বেশি যে কে প্রার্থীর প্রতিনিধি আর কে সাংবাদিক, সেটা বোঝা কঠিন।’ গতকাল আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আরও রয়েছে। দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মেয়র প্রার্থী নাছির পৌঁছানোর আগে জুবিলী রোড এলাকায় বাঁশি বাজিয়ে ৫০টি মোটরসাইকেল দুই দফা মহড়া দেয়। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা মহড়া দিয়েছেন সত্য। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কিছুই করার ছিল না। বেলা ১১টার দিকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন জাতীয় পার্টি-সমর্থিত সোলায়মান আলম শেঠ। গতকাল শেষ দিন পর্যন্ত চট্টগ্রামে মেয়র পদে ১৩ জন, কাউন্সিলর পদে ২৮৮ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৭১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অভিযোগ: গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের মৌখিক অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। মনজুরের পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করার সময় তাঁরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন, ‘মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন ও সাংসদ হাছান মাহমুদ নিজেদের সভায় বলেছেন, আ জ ম নাছির উদ্দিন মেয়র নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন হবে। এ ধরনের প্রতিশ্রুতি আচরণবিধির লঙ্ঘন।’ এর আগে গত শনিবার নাছিরের পক্ষে মনজুরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের লিখিত অভিযোগ করা হয়। পরে সাংবাদিকদের আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘একজন মন্ত্রী ও একজন এমপির বিরুদ্ধে আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছি। তাঁরা কী করেন, সেটা আমরা দেখতে চাই।’ অভিযোগের বিষয়ে মোশাররফ হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তবে আওয়ামী লীগের সাংসদ হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মন্ত্রীরা প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন না। প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন না। সাংসদ হিসেবে আমার ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ নেই।’ অভিযোগের বিষয়ে আ জ ম নাছির উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এটা তাঁদের অপপ্রচার। এ বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আ জ ম নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ যাচাই করে দেখা হচ্ছে।’ চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলন: মনোনয়নপত্র দাখিলের পর চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের ব্যানারে নির্বাচন করা মোহাম্মদ মনজুর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আল্লাহ পাক যাঁকেই নির্বাচিত করবেন, তাঁকেই মেনে নেব।’ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনী মাঠে আমাদের জন্য এখনো সমান সুযোগ তৈরি করা হয়নি। ফলাফল ঘোষণার আগমুহূর্ত পর্যন্ত সব প্রার্থীকে যেন সমান সুযোগ দেওয়া হয়। আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন কী করে, সেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমরা সবকিছু জনগণের সামনে তুলে ধরব।’ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘কারও সমালোচনা না করে জলাবদ্ধতা ও সন্ত্রাসমুক্ত নগর গড়ে তুলতে চাই। মনজুর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে সেই কাজটি করবেন। তিনি নগর ভবনকে দলবাজ ও সন্ত্রাসমুক্ত রেখেছিলেন।’

No comments:

Post a Comment