ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) জোট সরকারের বয়স মাত্র পাঁচ সপ্তাহ। কিন্তু এর মধ্যেই তুলকালাম শুরু হয়ে গেল সরকারের দুই শরিকের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মুহম্মদ সাঈদ গতকাল মঙ্গলবার দিল্লি এসে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে। মুফতি-কন্যা মেহবুবা মুফতিকে কেন্দ্রীয়
মন্ত্রিসভার সদস্য করা হবে বলে কয়েক দিন ধরে শোনা যাচ্ছে। গত সোমবার কাশ্মীর উপত্যকায় পর পর কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলা হয়। বারামুলা জেলার পাট্টান এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে পুলিশের এক কর্মকর্তা আহত হওয়ার চার ঘণ্টার মধ্যে সোপিয়ান জেলার আশিপোরায় সন্ত্রাসবাদী হামলায় পুলিশের তিন সদস্য প্রাণ হারান। পুলিশের ওই দলটি একটি ঘটনার তদন্তে ওই গ্রামে গিয়েছিল। তারা নিরস্ত্র ছিল। গতকাল জম্মুতে বিধানসভার অধিবেশনের শুরুতেই বিজেপির সদস্যরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা আসন ছেড়ে পোস্টার তুলে ধরে দাবি জানাতে থাকেন, অবিলম্বে ‘পাকিস্তানের ভূমিকার’ নিন্দা করে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে। বিজেপির সদস্যদের আরও দাবি, রাজ্যের কোনো অংশ থেকেই সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফসপা) প্রত্যাহার করা যাবে না। বিজেপির সদস্যদের হাতের পোস্টারে লেখা ছিল, ‘আফসপা প্রত্যাহার চলবে না’, ‘পাকিস্তান নিপাত যাক’। বহু দিন ধরেই পাকিস্তান ভারতে সন্ত্রাসী কাজকর্মে মদদ দিচ্ছে—এ অভিযোগ করে স্পিকারের কাছে তাঁদের দাবি, রাষ্ট্রীয় মদদে চলা এই সন্ত্রাসের কড়া নিন্দা করে একটি প্রস্তাব নেওয়া হোক। তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রস্তাব গ্রহণের চেয়েও বিজেপি বেশি সরব ছিল আফসপা প্রত্যাহার না করানোর দাবিতে। সরকার গড়তে জোটবদ্ধ হতে প্রধানত যে দুই বিষয় নিয়ে বিজেপি-পিডিপির টানাপোড়েন চলছিল, সেগুলোর একটি হলো আফসপা, অন্যটি ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারার বিলুপ্তি। আফসপা হচ্ছে ভারতের গোলযোগপূর্ণ কিছু স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীকে দেওয়া গ্রেপ্তারের বিশেষ ক্ষমতা। আর সংবিধানের ৩৭০ ধারা জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। পিডিপি আফসপা প্রত্যাহারের পক্ষে, বিজেপি তার বিরোধী। শেষ পর্যন্ত বোঝাপড়ায় ঠিক হয়েছিল, ৩৭০ ধারা আপাতত অপরিবর্তিত থাকবে এবং শান্ত এলাকা থেকে আফসপা পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়ার চেষ্টা হবে। গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মুফতি সাঈদও বিধানসভায় এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে সরকারের সেই অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছিলেন। গতকাল বিক্ষোভের পর বিজেপির নেতা রবীন্দ্র রায়না বলেন, উপত্যকার পরিস্থিতি এখনো গুরুতর। কোনোভাবেই রাজ্যের কোনো এলাকা থেকে আফসপা তুলে নেওয়া ঠিক হবে না। নীতি, আদর্শ ও কর্মসূচির ক্ষেত্রে বিজেপি ও পিডিপির মধ্যে কোনো মিলই নেই। তবু কাশ্মীরে সরকার গঠনের তাগিদ দুই দলকে কাছাকাছি আনে। দুই দলের নির্বাচিত বিধায়কেরা ক্ষমতার কাছে এসে ক্ষমতার বাইরে থাকতে চাইছিলেন না। বিজেপির সঙ্গে হাত মেলানোর প্রশ্নে পিডিপির সমর্থকদের মধ্যেও অসন্তোষ ছিল। সরকার গঠনের পর থেকেই বিভিন্ন প্রশ্নে দুই দলের বিবাদ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও উভয় পক্ষের শীর্ষ নেতারা চাইছেন জোট অক্ষুণ্ন রাখতে। মুখ্যমন্ত্রীর কন্যা মেহবুবাকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়ার বিষয়টিও শাসক জোটকে জোরদার করার লক্ষ্যেই। প্রধানত সে কারণেই মুফতির দিল্লি আসা। এদিকে বিধানসভা চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য ছেড়ে দিল্লি আসায় তাঁকে কটাক্ষ করেছেন রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ।
No comments:
Post a Comment