Sunday, April 26, 2015

নেপাল বিধ্বস্ত, তীব্র ঝাঁকি বাংলাদেশে:কালের কন্ঠ

ভয়াবহ ভূমিকম্প ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে নেপালে। দেশটির বেশির ভাগ স্থান ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মৃতের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল শনিবার সকালে সংঘটিত এই ভূমিকম্পের মাত্রা ধরা পড়ে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮। আহতের সংখ্যা নিয়ে এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পর্বতারোহণের এই ভরা মৌসুমে ভূমিকম্পের প্রভাবে তুষারধসে এভারেস্টের বেইস ক্যাম্প ভ
েঙে গুঁড়িয়ে গেছে। এতে অন্তত ১৫ পর্বতারোহী প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে। দেশটিতে রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ভয়াবহ এই ভূমিকম্পের আঁচড় পড়েছে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনেও। ভারতে ৪১ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। বাংলাদেশে দুই দফা ভূমিকম্পে চারজনের মৃত্যুর পাশাপাশি ১৭৭টি ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে এবং কিছু ভবন হেলে পড়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়েছে সারা দেশেই।  ভূমিকম্পে নেপালে কোনো বাংলাদেশি হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তার বাড়ির দেয়াল ধসে পড়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায়। এদিকে জরুরি যোগাযোগের জন্য নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসে হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়েছে। হেল্প ডেস্কের নম্বরগুলো হলো : রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস (+৯৭৭৯৮৫১০৩৯৩৫২), প্রথম সচিব খান মো. মইনুল হোসেন (+৯৭৭৯৮০৮১৮৪০১৪) ও প্রথম সচিব শামীমা চৌধুরী (+৯৭৭৯৮০৮৭৬৫০৭১)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, নেপালে উৎপন্ন হওয়া ভূমিকম্পের তীব্রতা বাংলাদেশে অনুভূত হয়েছে ৪ থেকে ৫-এর মধ্যে। ভূমিকম্পকালে তাৎক্ষণিক পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তি ও সূত্র ব্যবহার করে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত মজবুত স্থাপনায় তীব্রতার মাত্রা অনুভূত হয়েছে ৪ এবং অপেক্ষাকৃত নরম মাটি বা স্থাপনায় তীব্রতা ছিল ৫। যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে জানায়, ভূমিকম্পের উৎস ছিল নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডু থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল) দূরে লামজুং-এ। ভূমিকম্পের আঘাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঠমাণ্ডু। সংস্থাটি আরো জানায়, দুপুর পর্যন্ত আরো ১২টি ভূমিকম্প-পরবর্তী ভূকম্পন হয় বলে তারা রেকর্ড করেছে। এর মধ্যে রিখটার স্কেলে একটির মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৬। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল রাতেও ভূকম্পন টের পাচ্ছিল তারা। নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লক্ষ্মী প্রসাদ ধাকাল বলেন, এ ভূমিকম্পে আহত হয়েছে কয়েক হাজার। গত ৮১ বছরের মধ্যে এটাই নেপালের ভয়াবহতম ভূমিকম্প। এর আগে ১৯৩৪ সালে ৮ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে নেপালে ১০ হাজার ৭০০ লোক নিহত হয়। দেশটির অর্থমন্ত্রী রাম শরণ মাহাত গত রাতে এক টুইটার বার্তায় জানান, শনিবারের ভূমিকম্পে তাঁর দেশে ১ হাজার ৪৫৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। উদ্ধারকর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে কাজ শুরু করলেও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে অনেককে খালি হাতে ধ্বংসাবশেষ সরাতে দেখা গেছে। নেপালের জাতীয় পুলিশের মুখপাত্র কামাল সিং বাম বলেন, দূর পশ্চিম ছাড়া বাকি সব এলাকা থেকেই হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। উদ্ধার ও সহায়তার জন্য নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।    নেপালের তথ্যমন্ত্রী মীনেন্দ্র রিজাল বিপর্যয় মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞ সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই ফ্রান্স নেপালকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ফাঁসোয়া ওলন্দ গতকাল এ কথা জানান। ভূমিকম্পে ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা পাওয়া কাঠমাণ্ডুর দরবার স্কয়ার সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। ১৮৩২ সালে নির্মিত কাঠমাণ্ডু ধারাহারা মিনারও মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। সে সময় নজরদারির জন্য রানির নির্দেশে ৯ তলা ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এর আট তলার একটি বেলকোনি থেকে পুরো কাঠমাণ্ডু দেখা যেত। এই ভবনের ধ্বংসস্তূপে বহু পর্যটক আটকা পড়েছে। গতকাল বিকেলেই এর ধ্বংসাবশেষ থেকে ১২টি মৃতদেহ বের করা হয়। মিনারের নিচে চাপা পড়া বার্তা সংস্থা এএফপির আলোকচিত্রী ধার্মু সুবেদি (৩৬) বলেন, ‘চাপা পড়ার পর নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। তবে ধীরে ধীরে ইটের স্তূপ সরিয়ে ফেলি আমি। পরে আমাকে কেউ একজন টেনে তোলে।’ এরপর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে।  ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে বহু বাড়ি ভেঙে পড়েছে। অনেক রাস্তায়ই গভীর ফাটল দেখা গেছে। ভূমিকম্প শুরু হওয়ার পর লোকজন ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে বের হয়ে আসে।  ভূমিকম্পের কারণে কাঠমাণ্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর থেকে বিমান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দেশের এই একটি মাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতেও ফাটল ধরেছে। নেপালের এই ভূমিকম্পের ধাক্কায় কেঁপে ওঠে ভারতের বহু এলাকা। সে দেশে ৪১ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে বিহার রাজ্যে ১৭ জন প্রাণ হারায়। বহু বাড়িঘর ধসে গেছে। ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত লোকজন বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে। সূত্র : এএফপি, বিবিসি, নিউ ইয়র্ক টাইমস। ঢাকায় ১০ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত ঢাকায় দুপুর ১২টা ১১ মিনিট ২৭ সেকেন্ডে প্রথম দফা ভূকম্পন অনুভূত হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই আবারও মৃদূ ভূকম্পন অনুভূত হয়। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ভূমিকম্পে ঢাকায় অন্তত ১০টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনে হয় ফাটল দেখা দিয়েছে, নয়তো হেলে পড়েছে। এ ছাড়া গাজীপুরের শ্রীপুর, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহুসংখ্যক ভবন হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। আরো কিছু ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাহমুদুল হক জানিয়েছেন, গতকালের ভূমিকম্পটি ছিল তীব্র মাত্রার। একই সঙ্গে দেশের বেশির ভাগ জায়গায় অনুভূত হয়েছে ভূকম্পন। সাম্প্রতিক সময়ে এই উপমহাদেশে এত বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হয়নি। ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, ভূমিকম্পে রাজধানীতে ১০টি ভবন হেলে পড়েছে বা ফাটল দেখা দিয়েছে বলে তারা খবর পেয়েছে। ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওইসব ভবন পরীক্ষা করে দেখছেন। ঢাকার বাইরে ভূমিকম্পে বিভিন্ন জেলায় অন্তত সাতটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নবাবপুর পুলিশ ফাঁড়ির পাশে আটতলা এবং লালবাগের এরশাদ কলোনির পেছনে ছয়তলা উঁচু আরেকটি ভবন হেলে পড়ে। এ ছাড়া নিমতলীর সেক্রেটারিয়েট রোডে আলাউদ্দীন ভবন নামে একটি পাঁচতলা ভবনে ফাটল দেখা দেয়। ভূমিকম্পে বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে বহুতল ভবন ‘মোহাম্মদ টাওয়ার’ হেলে পড়ার খবরে সেখানে যান ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা। উৎসুক জনতারও ভিড় দেখা যায় সেখানে। পুলিশ জানিয়েছে, ভূমিকম্পে হেলে পড়া বংশালের ২৪৯/১ নম্বর ভবনে জুতা ও ব্যাগের কয়েকটি কারখানা রয়েছে। ভবনটি পাশের একটি ভবনের দিকে হেলে পড়েছে। বংশাল থানার ওসি আবদুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই ভবন থেকে কারখানার সবাইকে নামিয়ে দিয়ে ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ভূমিকম্পের সময় রাজধানীর হাতিরপুলের বহুতল মার্কেট ‘মোতালিব প্লাজা’র সব লিফট বন্ধ করে দেওয়া হয়। আতঙ্কিত ক্রেতা-বিক্রেতারা হুড়মুড় করে নেমে আসে সড়কে। আশপাশের বহুতল ভবনের বাসা ও অফিস থেকেও নিরাপত্তার সন্ধানে জনতা নেমে আসে রাস্তায়। চারদিকে যেন দুর্যোগ ঢাকাসহ সারা দেশে আতঙ্কে লোকজন ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। ছবি : কালের কণ্ঠ ‘আমার মাথা ঘুরতে লাগল। নিজেকে কোনোভাবেই ঠিক রাখতে পারছিলাম না। চেয়ার শক্ত করে ধরলাম। তার পরও মাথা ঘুরছে, থামছে না। উঠে দাঁড়ালাম। মনে হলো পড়ে যাচ্ছি। কানের সমস্যা কিংবা মস্তিষ্কের কোথাও বড় ধরনের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না এ নিয়ে সন্দেহ হচ্ছিল। ঝাঁকুনিটা নির্দিষ্ট কোনো ধরনের নয়। ডানে, বাঁয়ে, সামনে, পেছনে সর্বত্র ঝাঁকুনি হচ্ছিল। কোনোভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। বসে পড়লাম। চোখ বন্ধ করলাম, মনে হলো বেড়ে যাচ্ছে। দ্রুত কাউকে ডাকব চিন্তা করছিলাম। মনে হচ্ছিল হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাব বা অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছি। টেবিলের কোণা থেকে কিছু একটা পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে উঠলাম। তখন পাশের ওয়ার্ড থেকে উত্তেজনা শোনা গেল। অসংখ্য রোগী, অভিভাবক, ডাক্তার, নার্স, ছাত্র, কর্মকর্তা-কর্মচারী হুড়োহুড়ি করে নামছে।’ গতকাল শনিবার দুপুরে ভূমিকম্পের সময় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ তলা ভবনের ১২ তলায় অবস্থান করছিলেন ডা. সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব। এভাবেই মুহূর্তগুলোর অনুভূতির বর্ণনা করছিলেন তিনি। গতকাল দুপুর ১২টা ১১ মিনিট ২৭ সেকেন্ড থেকে এক মিনিটেরও বেশি ভূমিকম্পে দুলে উঠেছিল বাংলাদেশ। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে রাজধানী ঢাকা। নগরীর রাস্তায় রাস্তায় তখন আতঙ্কিত মানুষের ভিড়। প্রথমে অনেকে নিজের মাথা ঘুরছে মনে করলেও পরে বুঝতে বাকি থাকে না যে ভূমিকম্প হচ্ছে। টেবিলে চায়ের কাপ অনবরত কাঁপছিল। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিল বলে বন্ধ রাখা সিলিং ফ্যানগুলো দুলছিল। পুকুরে, কুয়ায় উঠছিল ঢেউ। সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিতে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা বের হয়ে ‘নিরাপদে’ অবস্থান নেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামে মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের অনেকের প্রচারণায় বিঘ্ন ঘটায় এই কম্পন। অনেকে নির্ধারিত অনুষ্ঠান বাতিল করেন। বিশিষ্ট নাট্যকার ও লেখক শাকুর মজিদ বলেন, ‘আমি গাড়িতে ছিলাম। কিছুই টের পাইনি। একসময় দেখি লোকজন রাস্তায় নামছে। ভিড় দেখে আমি ভাবছিলাম, সিটি করপোরেশনের প্রচারণা চলছে হয়তো। পরে এক বাসার নিচে গিয়ে শুনি, সবাই নেমে এসেছে ভূকম্পন টের পেয়ে। তখন এক ভদ্রমহিলা বললেন, তিনি দ্রুত নামতে গিয়ে বাসার চাবি রেখে এসেছেন ভেতরে। ভূমিকম্প শেষ হয়েছে। কিন্তু এখন বাসায় আর ঢুকতে পারছেন না। তরুণ লেখক স্বকৃত নোমান মিরপুরে পাঁচতলার বাসায় ছিলেন ভূমিকম্পের সময়। ওই মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে নোমান বললেন, ‘চেয়ারটি হঠাৎ কেঁপে উঠল। ভাবলাম, দীর্ঘক্ষণ বসে বসে লিখছিলাম বলে হয়তো মাথা চক্কর দিয়েছে। হঠাৎ দেখি জানালার গ্লাসগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি বাড়ি খেয়ে অদ্ভুত বাজনা তুলছে। পাঁচতলা ভবনটি ডানে-বাঁয়ে দুলছে। কী ভয়াবহ কাণ্ড! মেয়ে নাজুকে নিয়ে দ্রুত নিচে নেমে দেখি, বহুতল ভবনগুলো থেকে নারী-পুরুষরা হন্তদন্ত হয়ে নিচে নামছে। বয়স্ক এক নারী অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। চারদিকে মহাদুর্যোগ যেন। নির্মাণাধীন এক ভবনের জলে ভরা কুয়ার সামনে দাঁড়িয়ে দেখি, জলে ঢেউ উঠছে। এত দীর্ঘ সময়ের ভূমিকম্প জীবনে দেখিনি। মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ছিল। মনে হলো, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।’ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছিল মিন্টো রোডের জনসংযোগ (মিডিয়া) দপ্তরে। মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা তখন অনুষ্ঠানস্থল থেকে বাইরে গিয়ে দাঁড়ান। ধানমণ্ডির বাসায় প্রকৌশলী ফজলুল কবীর জানান, তাঁর স্ত্রী একটি দাওয়াতের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ভূমিকম্পের পর সেই প্রস্তুতি থেমে যায়। গণভবনে জাতীয় ক্রিকেট দলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শেষ হয়েছিল। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আমন্ত্রিতরা আসছিলেন। এমন সময় গণভবন এলাকার ঝাড়বাতিগুলো হঠাৎ দুলতে শুরু করে সজোরে। তখন অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হয়ে আগতরা বাইরে এসে দাঁড়ান। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হাবীবা চৌধুরী বিথী পূর্ব গোড়ানে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন। জানতে চাইলে বললেন, ‘রাস্তা থেকে দেখতে পাই, বিল্ডিংয়ের ওপর থেকে শুধু মানুষ নামছে। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারি, ভূমিকম্প হয়েছে।’ সারা দেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি আমাদের স্থানীয় নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে জানা যায়, পাবনায় গতকাল দুপুরের ভূমিকম্পে রোকেয়া খাতুন (৬৭) নামের এক শিক্ষক নিহত হয়েছেন। তিনি পৌর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ছিলেন। এ ছাড়া ভূমিকম্পের সময় হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বেশ কয়েকটি ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাবনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানান, ভূমিকম্পের সময় রোকেয়া খাতুন রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে পড়ে যান। পরে স্থানীয় লেকজন তাঁকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে ১০ জন ভর্তি হয়েছে। অন্যান্য উপজেলায়ও আহত শতাধিক ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছে। এদিকে পাবনা প্রেসক্লাব ভবন, কসিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ভবন, চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ভবন ও অফিসে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। শাহজাদপুর পৌর এলাকার মনিরামপুর, দাড়িয়াপুর ও রামবাড়ী থানার ঘাটপাড়ায় বহুতল ভবনের বাসিন্দারা ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে শতাধিক আহত হয়। বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় ভূমিকম্পে হেলে যাওয়া মাটির সীমানা প্রাচীর ধসে মোর্শেদা বেগম (৫২) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে উপজেলার গুনাহার ইউনিয়নের উনাহত সিংড়া গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতের পরিবার ও স্থানীয় লোকজন জানায়, ভূমিকম্পে ময়েজ উদ্দিনের বসতবাড়ির মাটির সীমানা প্রাচীর বেঁকে হেলে যায়। ঘটনার পরপরই সীমানা প্রাচীরসংলগ্ন গোয়ালঘর থেকে তাঁর স্ত্রী মোর্শেদা গরু বের করার সময় প্রাচীরটি ভেঙে তাঁর ওপর পড়ে। এ সময় তিনি গুরুতর আহত হন। পরিবারের লোকজন দ্রুত দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ীর দোলাপাড়া গ্রামে ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে ১২০ বছরের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম উমরত আলী। জানা যায়, ভূমিকম্পের আতঙ্কে এলাকার লোকজনের ছোটাছুটি শুরু হলে আতঙ্কে তিনি মারা যান। এদিকে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের তিন কম্পানির ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে সেখানকার কর্মরত শ্রমিকরা দাবি করেছে। এ ঘটনার পর ইপিজেডের সব কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হয়ে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের পূর্ব কৈলাগ গ্রামের আব্দুল হেকিম (৬২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে ভূমিকম্পের সময় আব্দুল হেকিম ঘরের বাইরে বের হয়েও আবার ঘরে ঢোকেন। এ সময় তিনি আশপাশের লোকজনকে আতঙ্কে চিৎকার-চেঁচামেচি ও ছোটাছুটি করতে দেখেন। ভূমিকম্প থামার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি প্রাণ হারান। ভূমিকম্পের সময় সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সুরমা নদীতে খেয়া নৌকা ডুবে এক কৃষক নিখোঁজ হয়েছেন। তাঁর নাম রণ দাস (৩০)। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টায় হাওর থেকে ধান কেটে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। জালালপুর গ্রামে সুরমা নদীতে ভূমিকম্পের সময় নদীর পানি ফুলে ওঠায় নৌকাটি ডুবে যায়। সঙ্গীরা সাঁতরে তীরে উঠলেও তাঁর খোঁজ মেলেনি। সাভারে রপ্তানিমুখী একটি বহুতলবিশিষ্ট তৈরি পোশাক কারখানায় ভবন ধসে পড়ার আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে আহত হয়েছে শতাধিক শ্রমিক। আহতদের অধিকাংশই নারী। অন্তত ৭০ জনকে সাভার এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর। আল মুসলিম গ্রুপের পোশাক কারখানায় এ ঘটনায় ঘটে। এ ঘটনায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শ্রমিকরা। পরে তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়। উত্তেজিত শ্রমিকরা এ সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করলে আনসার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মানিকগঞ্জে তারাসিমা গার্মেন্ট কারখানার ৩০ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে ১১ জনকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া পুররা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি টিনশেড ভবনে ফাটল ধরেছে। ধামরাইয়ের শ্রীরামপুরে গ্রাফিক্স টেক্সটাইল কারখানার বিভিন্ন স্থানে হালকা ফাটল দেখা দিয়েছে। শ্রমিকরা হুড়োহুড়ি করে বেরিয়ে আসার সময় তিনজন আহত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে অন্তত ১০টি গার্মেন্ট কারখানার অর্ধশত শ্রমিক আহত হয়েছে। দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রূপগঞ্জের অনুপম হোশিয়ারি নামের একটি পোশাক কারখানায় ৪০ শ্রমিক আহত হয়। এদিকে ভবন আংশিক হেলে পড়াসহ ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় তিনটি ভবনকে সিলাগালা করে দেওয়া হয়েছে। ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের কালিকাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদ ধসে ও দ্বিতীয় তলা থেকে হুড়োহুড়ি করে নামার সময় প্রধান শিক্ষকসহ আট শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ঈশ্বরগঞ্জে হুড়োহুড়ি করতে নামতে গিয়ে এক অন্তঃসত্ত্বাসহ সাতজন আহত হয়। কুমিল্লা ইপিজেডের কাদেনা স্পোর্টসওয়্যার ফ্যাক্টরিতে কর্মরত শ্রমিকরা তাড়াহুড়ো করে বেরোনোর সময় শতাধিক নারী শ্রমিক অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এ সময় আহত হয় আরো ৫৬ নারী শ্রমিক। দাউদকান্দির হোমনা খাদিজা মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা দ্বিতীয় তলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় ১২ ছাত্রী আহত হয়েছে। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আতঙ্কিত হয়ে দোতলা থেকে নিচে নামার সময় ৩০ ছাত্রী আহত হয়েছে। ১১ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার রতারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে  নামতে গিয়ে ১০ জন আহত হয়েছে। বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে ক্লাসরুম থেকে বের হতে গিয়ে ১৫ জন আহত হয়েছে। ঝিনাইদহে কালীগঞ্জ উপজেলার মোস্তবাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে আতঙ্কিত হয়ে ৯ নারী অজ্ঞান হয়েছে। রাজশাহীতে অন্তত অর্ধশতাধিক বহুতল ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।  রংপুরের বদরগঞ্জে দুই দফা ভূমিকম্পে উপজেলার বেশ কয়েকটি ভবনে ফাটল দেখা দেয়। আতঙ্কে স্থানীয় লোকজন বাসাবাড়ি থেকে ভয়ে রাস্তায় নেমে আসে। যশোর শহরের ঐতিহ্যবাহী মুসলিম একাডেমি স্কুলের মূল ভবনের অন্তত তিনটি স্থানে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। কেশবপুর মহিলা কলেজের শত বছরের পুরনো ভবনের দ্বিতীয় তলার সামনের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। সুনামগঞ্জের খরচার হাওরের গজারিয়া ফসলরক্ষা বাঁধ দেবে গেছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও সাব পোস্ট অফিস ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ায় ওই ভবন দুটিতে ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের চরসৈয়দপুর এলাকার বর্ণালী ফেব্রিক্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের লোহার তৈরি প্রায় পাঁচতলা ভবনে ফাটল দেখে দিয়েছে। রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি সাব অফিসের সীমানা প্রাচীরের দেয়াল ধসে পড়েছে। জেলা সদরের রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের কয়েক জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। জেলা সদরের সূর্যনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী নাসরিন আক্তার ও মিনা আক্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের রাজবাড়ী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ফেনীতে দুটি ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভবনগুলো হলো ফেনী সদরের এসএসকে রোডের শাহ আলম টাওয়ার ও ডাক্তারপাড়ার শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ভবন। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরনো একাডেমিক ভবন ও সুরমা ইউনিয়নের টেংরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ সময় তাড়াহুড়ো করে স্কুল থেকে নামতে গিয়ে টেংরা উচ্চ বিদ্যালয়ের আট শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। নেপালের পাশে থাকবে বাংলাদেশ- প্রধানমন্ত্রী : বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভূমিকম্পদুর্গত নেপাল ও এর জনগণের পাশে থাকবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণ করে এবং চিকিৎসাসেবা ও মানবিক সহায়তার মাধ্যমে আমরা বন্ধুরাষ্ট্র নেপালের প্রতি তাদের দুর্যোগের দিনে আমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিব।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে তাঁর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল এ কথা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন- তা জানতে চেয়ে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এর আগে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেপাল, ভারত, বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে সংঘটিত বিধ্বংসী ভূমিকম্পে জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। তাঁরা শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন। মানবিক সহায়তা পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ : গতকাল রাত ১০টায় ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নেপালে ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার ওই দেশটিতে চিকিৎসা দলসহ মানবিক সহায়তা পাঠাচ্ছে। নেপালে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবায় দেশটির সঙ্গে ওই চিকিৎসা দল কাজ করবে।

No comments:

Post a Comment