Sunday, April 26, 2015

বহিরাগতদের ঢাকা ত্যাগের নির্দেশ ডিএমপির:যুগান্তর

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বহিরাগতদের ঢাকা শহর ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেছেন, ঢাকায় যারা নির্বাচনী কাজে এসেছেন, ভোটার নয় এবং মহানগরীর বাসিন্দা নন তারা শনিবার রাত ১২টা থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করতে পারবেন না। যদি বহিরাগত কেউ নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। শনিবার
দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে নির্বাচনে নিরাপত্তাবিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ডিএমপির একটি সূত্র বলেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে রাজধানীতে আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রায় ৩০ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকার বাইরে থেকেও অন্তত ১০ হাজার পুলিশ সদস্য আনা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ঢাকা মহানগরীতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। ভোটাররা যাতে নিরাপদে, নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেজন্য পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার সমন্বিতভাবে কাজ করবে। মহানগরীর মধ্যে শনিবার রাত ১২টা থেকে ২৯ এপ্রিল সকাল ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এছাড়া ট্যক্সিক্যাব, জিপ, প্রাইভেটকারসহ অন্য যানবাহন ২৭ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে ২৮ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে শুধু রিটার্নিং অফিসারের অনুমতিসাপেক্ষে নির্বাচন পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক, আইনশৃংখলা বাহিনীর গাড়ি, জরুরি সেবামূলক কাজে নিয়োজিত গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ও নির্বাচনী কাজে নিয়োজিতদের গাড়ি নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। পাশাপাশি আজ (রোববার) ভোর ৬টা থেকে ১ মে রাত ১২টা পর্যন্ত সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কমিশনার বলেন, ২৬ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে ৩০ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী কোনো সভা-মিছিল করা যাবে না। ভোট কেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে কোনো প্রার্থী ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবে না এবং ভোটারদের প্রভাবিত করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান কমিশনার। তিনি বলেন, নির্বাচনে কালো টাকা বিতরণ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ভোটারদের মাঝে যেন কালো টাকা বিতরণ করতে না পারে সেজন্য গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। ঘনবসতি এলাকায় সিভিল পোশাকে পুলিশ ও গোয়েন্দারা নজরদারি করছে। আছাদুজ্জামান বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিরাপত্তাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নির্বাচন পূর্ববর্তী নিরাপত্তা, নির্বাচনের দিন ও নির্বাচনের পরবর্তী নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইতিমধ্যে পূর্ববর্তী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছি। কমিশনার বলেন, উত্তর ও দক্ষিণের ৯৩ ওয়ার্ডেই দুটি করে মোবাইল পার্টি সারাক্ষণ টহলে থাকবে। এছাড়া যে কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ৩১টি স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স থাকবে। প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ৭ জন পুলিশ, আনসারের একজন পিসি, একজন এপিসি ও ৩ জন আনসার ব্যাটালিয়ন থাকবে। এছাড়া ১২ নারী-পুরুষ আনসার সদস্য ১২টি লাঠি নিয়ে অবস্থান নেবে। এর বাইরেও বিজিবি এবং র‌্যাবের টহল পার্টি থাকবে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরাও স্টান্ডবাই অবস্থায় থাকবে। যে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য তারা দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনী নিরাপত্তা ব্যবস্থা সমন্বয় করার জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে ১টি প্রধান কন্ট্রোল ও ৪টি সাব কন্ট্রোল রুম রাখা হবে জানিয়ে আছাদুজ্জামান বলেন, আবদুল গনি রোডে, তেজগাঁও থানায়, গুলশানে ও মিরপুরে এই কন্ট্রোল রুম থাকবে। সেখানে বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। কমিশনার বলেন, নির্বাচনের আগের দিন দক্ষিণের ৮টি এবং উত্তরের ৮টি কেন্দ্র থেকে ব্যালট সামগ্রী বিতরণ করার সময় র‌্যাব ও পুলিশের কঠোর নজরদারি থাকবে। কেন্দ্রে ভোটগণনা শেষে ঢাকা উত্তরের জন্য বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কেন্দ্রে ও দক্ষিণে মহানগর নাট্যমঞ্চে রেজাল্ট যাবে এবং সেখান থেকে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। যে কোনো ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা উত্তরে ৯ জন এবং দক্ষিণে ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ২৩টি মোবাইল কোর্ট থাকবে। বিজিবি ও র‌্যাবের প্রত্যেকটি দলের সঙ্গে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবে। এছাড়া বিজিবির ৭০ প্লাটুন সদস্য থাকবে। প্রত্যেক প্লাটুনে ফোর্স থাকবে ৩০ জন এবং প্রত্যেক প্লাটুনে তিনজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। ভোটারদের শরীর তল্লাশি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো কোনো কেন্দ্রে মেটাল ডিটেক্টর ব্যবস্থা থাকবে। যাতে কোনো দাহ্য পদার্থ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। এরপরও যদি কেউ কোনোভাবে আইন লংঘন করার চেষ্টা করে, ভোটারকে ভয়ভীতি দেখায়, পেশিশক্তির বলে ভোটারদের প্রভাবিত করলে কঠোরহস্তে দমন করা হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উত্তর ও দক্ষিণে ১ হাজার ৯৮২টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ৪২৯টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ এবং ৫৫৩টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে বৈধ অনুমতি প্রাপ্ত সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা এক দলে সর্বাধিক ৫ জন কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন উল্লেখ করে কমিশনার বলেন কেন্দ্রে ঢুকে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করা যাবে না। নির্বাচন পরবর্তী সময় নিরাপত্তা বিষয়ে তিনি বলেন, বিজয়ী এবং পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে যাতে কোনো ধরনের দাঙ্গা-হাঙ্গামা না হয় সেজন্য কঠোর নিরাপত্তা থাকবে এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত তা বলবৎ রাখা হবে।  

No comments:

Post a Comment