Sunday, April 5, 2015

দর্শক টানতে চাই ভালো চলচ্চিত্র, হলের পরিবেশ:কালের কন্ঠ

চলচ্চিত্রকে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার উল্লেখ করে সুস্থ ও সৃজনশীল ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সামাজিক সমস্যাগুলো তুলে ধরে নির্মিত চলচ্চিত্রকে অবশ্যই সৃজনশীল ও শোভন হতে হবে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, দর্শকদের আবার প্রেক্ষাগৃহে ফিরিয়ে আনতে হলে একদিকে যেমন ভালো ছবি নির
্মাণ করতে হবে, তেমনি প্রেক্ষাগৃহের পরিবেশও ভালো করতে হবে। গতকাল শনিবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৩ প্রদান উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, চলচ্চিত্র একটি সৃজনশীল ও শক্তিশালী গণমাধ্যম, জনসাধারণের ওপর যার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। শিক্ষার প্রসার, মেধার চর্চা, সামাজিক কুসংস্কার দূর করা, জাতি গঠন এবং প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণেও চলচ্চিত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী হাতিয়ার। চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সৃজনশীল ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'জনগণ আপনাদের অনুসরণ করে। সুতরাং সমাজের অন্য মানুষের চেয়ে আপনাদের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি চলচ্চিত্রের দৃশ্য, সংলাপ, গল্প এবং নির্মাণ কৌশল এমন হতে হবে যে তা যেন পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে দেখতে পারে। সম্প্রতি বেশ কিছু চলচ্চিত্র দেশে ও বিদেশে সাফল্য অর্জন করায় শেখ হাসিনা এর প্রশংসা করে বলেন, 'আমাদের অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলীদের কর্মদক্ষতা ও পেশাদারিত্ব ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে। সার্বিকভাবে এটা বলা যায় যে আমাদের চলচ্চিত্র সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।' অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সভাপতিত্ব করেন এবং তথ্য মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তথ্যসচিব মর্তুজা আহমেদ অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন। অনুষ্ঠানে ২৫টি বিভাগে মোট ২৮ জন অভিনেতা, অভিনেত্রী, শিল্পী, প্রযোজক, পরিচালক ও কলাকুশলীকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৩ দেওয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তদের পক্ষে সারাহ বেগম কবরী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ীদের স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে এই স্বীকৃতি তাঁদের পথচলায় অনুপ্রেরণা জোগাবে এবং সৃজনশীল, মেধাবী ও দেশপ্রেমিক চলচ্চিত্রকারদের এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'তিরিশের দশকে মানিকগঞ্জের হীরালাল সেন ঢাকায় প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন করেন। তবে বিভিন্ন কারণে এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি। বিশেষ করে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং মানসম্মত স্টুডিও না থাকায় আমাদের চলচ্চিত্র নির্মাণ পিছিয়ে পড়ে।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, ষাটের দশকে চলচ্চিত্রের যে বর্ণিল যাত্রা শুরু হয়েছিল, সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকে এ অঙ্গনে শুরু হয় অন্ধকার যুগ। ফলে শহুরে মধ্যবিত্তরা প্রেক্ষাগৃহে যাওয়া ছেড়ে দেন। এই মধ্যবিত্ত শ্রেণিই কিন্তু চলচ্চিত্রের প্রধান দর্শক। তিনি বলেন, অবশ্য আশির দশকের মাঝামাঝি এসে এক দল তরুণ নির্মাতা দেশে নতুন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহী হন। তাঁরা কিছু নান্দনিক চলচ্চিত্র উপহার দেন। শেখ হাসিনা বলেন, চলচ্চিত্রপ্রেমী ও দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহমুখী করার জন্য প্রেক্ষাগৃহগুলোকে ডিজিটাল করা ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১০০টি প্রেক্ষাগৃহ এবং পর্যায়ক্রমে ৩০০টি প্রেক্ষাগৃহকে ডিজিটাল করার বিষয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন সিনেপ্লেক্স নির্মাণের জন্য কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ৩৫ শতাংশ সম্পূরক কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রেক্ষাগৃহে ভ্যাট ছাড়া এখন আর কোনো কর দিতে হয় না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ৬৪টি জেলা সদর ও চারটি উপজেলায় তথ্য কমপ্লেক্স স্থাপনের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি কমপ্লেক্সে একটি করে থিয়েটার হল তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, 'আকাশ সংস্কৃতির দুয়ার উন্মুক্ত হওয়ার ফলে চলচ্চিত্র এখন অনেক বেশি প্রতিযোগিতার সম্মুখীন। এ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আমাদের চলচ্চিত্রের গুণগত মানের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। চলচ্চিত্র তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাব ক্রমশই বাড়ছে। চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট সবাইকে নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।' শেখ হাসিনা বলেন, 'চলচ্চিত্র জীবনের প্রতিচ্ছবি। জঙ্গিবাদ ও ধর্মান্ধতা থেকে মানুষকে মুক্ত রাখতে পারে। মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্ব।' তাই আগামী ও নতুন প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বেশি বেশি ছবি নির্মাণের আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরীকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। গাজী রাকায়েত ও ফরিদুর রেজা সাগর প্রযোজিত 'মৃত্তিকা মায়া' শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করে। ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করে সারাহ আফরিনের 'শুনতে কি পাও'। 'মৃত্তিকা মায়া' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পান তিতাস জিয়া। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান যৌথভাবে দুজন, 'মৃত্তিকা মায়া'য় অভিনয়ের জন্য মৌসুমী এবং 'দেবদাস'-এ অভিনয়ের জন্য শরমি মালা। পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন শ্রেষ্ঠ পরিচালক গাজী রাকায়েত, শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ, শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী অপর্ণা, শ্রেষ্ঠ খলনায়ক মামুনুর রশীদ, শ্রেষ্ঠ শিশু অভিনেতা স্বচ্ছ, শ্রেষ্ঠ শিশু অভিনেত্রী সৈয়দা অহিদা সাবরিনা, শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক এ কে আজাদ, শ্রেষ্ঠ সংগীতশিল্পী (পুরুষ) চন্দন সিনহা, শ্রেষ্ঠ সংগীতশিল্পী (মহিলা) রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমীন, শ্রেষ্ঠ গীতিকার কবির বকুল, শ্রেষ্ঠ সুরকার কৌশিক হোসেন তাপস, শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার, শ্রেষ্ঠ সংলাপ, শ্রেষ্ঠ নাট্য রচনা গাজী রাকায়েত, শ্রেষ্ঠ সম্পাদনা শরীফুল ইসলাম রাসেল, শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক উত্তম গুহ, শ্রেষ্ঠ ফটোগ্রাফার সাইফুল ইসলাম বাদল, শ্রেষ্ঠ শব্দ প্রকৌশলী কাজী সেলিম, শ্রেষ্ঠ কস্টিউম অ্যান্ড ডেকোরেশন ডিজাইনার ওয়াহিদা মল্লিক ও শ্রেষ্ঠ মেকআপ ম্যান আলী বাদল। প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার বিজয়ীদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন। পুরস্কার বিতরণ শেষে দেশের বিশিষ্ট শিল্পীদের অংশগ্রহণে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। সূত্র : বাসস।

No comments:

Post a Comment