Thursday, April 30, 2015

জয়ের দাবি দুই পক্ষেরই:কালের কন্ঠ

সদ্য সমাপ্ত তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে বিএনপির বর্জন এবং আওয়ামী লীগের একচেটিয়া বিজয়ের পর দুই পক্ষেই হিসাব-নিকাশ চলছে, কার কতটা লাভ হলো আর কতটা ক্ষতি হলো। কালের কণ্ঠ'র পক্ষ থেকে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, দুই পক্ষই নিজেদের লাভবান বলে মনে করছে সমালোচনা সামলে ওঠার আশা আওয়ামী লীগে তৈমুর ফারুক তুষার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বিএনপির নির্বা
চন বর্জন নিয়ে কোনো রকম অস্বস্তি নেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। তিন সিটিতেই দল সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থীরা জয়লাভ করায় খুশি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা। তাঁদের মতে, এ জয়ের মধ্য দিয়ে তিন সিটিতে সরকারের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ এগিয়ে নেওয়া সহজ হবে। আর নির্বাচন বর্জন করলেও আন্দোলন গড়ে তোলার মতো অবস্থায় নেই বিএনপি। তা ছাড়া নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলে কিছুটা সমালোচনা থাকলেও তা শিগগিরই সামলে নিতে পারবে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল। আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার মতে, নির্বাচনে যতটুকু অনিয়ম ও সংঘর্ষ হয়েছে তার জন্য আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা দায়ী। তাঁরা দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনার বাইরে গিয়ে বিচ্ছিন্ন এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেনি। কাউন্সিলরদের কারণে শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অনেক নেতার মতে, যেকোনো ভোটে জয়লাভ করাই শেষ কথা। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের জয় পাওয়া সহজ হয়েছে। এ জয়ে আমাদের লাভ হয়েছে, বিএনপির লোকসান হয়েছে। বর্জনের মধ্য দিয়ে বিএনপি তেমন কিছুই অর্জন করতে পারবে না। নির্বাচন বর্জনে তারা তথ্য-প্রমাণসহ সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ দাঁড় করাতে পারেনি। ফলে জনগণ তাদের নির্বাচন বর্জন নিয়ে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাবে না। তবে বিশ্লেষকদের মতে, তিন সিটিতেই ভোট কারচুপির অভিযোগ ওঠায় সরকারের ভাবমূর্তি যথেষ্ট ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কি না তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল থেকেও নির্বাচনে অনিয়মের বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা এর দায় এড়াতে পারবেন না। জানতে চাইলে সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নির্বাচন কমিশনের ওপরে এত দিন আস্থার সংকট ছিল তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে কি না। আস্থার সংকট ছিল সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপরেও। এবারের নির্বাচনে তা তো কাটেইনি বরং আরো সুদৃঢ় হয়েছে। এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে আস্থার সংকট ছিল তা কমত। কিন্তু এখন সে সম্ভাবনা ক্ষীণ, যদি না রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হয়। যে পথে তাঁরা হাঁটছেন তা ভয়াবহ।' তিনি আরো বলেন, 'এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা এক অর্থে গণতন্ত্রকে কবরস্থ করলাম। যেখানে গণতন্ত্র থাকে না, সেখানে ধর্মীয় উগ্রবাদের বিস্তার হয়। শান্তিপূর্ণভাবে যেখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার রদবদল হয় না সে সমাজে শান্তি বিরাজ করে না। আশা করি আমাদের রাজনীতিবিদরা দেয়াল লিখনগুলো পড়বেন এবং সে অনুযায়ী ভবিষ্যতের জন্য সিদ্ধান্ত নেবেন।' টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে এতে সন্দেহ নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের সামর্থ্য নিয়ে যে প্রশ্ন ছিল তা এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচন দেশে-বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ দেশের রাজনীতিতে সুবাতাস আসবে এমন আশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এটি কতটুকু সম্ভব তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হলো।' আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, বিভিন্ন ওয়ার্ডে বেশ কিছু কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হওয়ায় নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে মেয়র প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা নেই। একজন মানুষও হতাহতের ঘটনা নেই। এত বড় একটি নির্বাচনে এটি বড় অর্জন। যেটুকু সমালোচনা হচ্ছে তাও বেশি দিন স্থায়ী হবে না। কিছু দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আর বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও এখন বড় কোনো আন্দোলন গড়ে তোলার মতো সাংগঠনিক শক্তি তাদের নেই। আবার আন্তর্জাতিক মহলও বিএনপির নির্বাচন বর্জনকে সমর্থন দেবে না। ফলে তাদের নির্বাচন বর্জন নিয়ে দুশ্চিন্তা করছে না আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'কারচুপি করে কারও ভোট কেড়ে নেওয়া হয়নি। আমরা জানি না কি কারণে বিএনপি প্রত্যাহার করে নিল। তাদের মেয়র প্রার্থীরা লাখ লাখ ভোট পেয়েছেন। কারচুপি হলে তাদের মেয়র প্রার্থীরা লাখ লাখ ভোট পেলেন কী করে?' সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয় প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, 'ঢাকা ও চট্টগ্রামের মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। আমি আশা করি, দেশবাসীও আগামীতে তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।' গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধে পেট্রলবোমায় নিহতদের স্বজন এবং আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত বাস মালিকদের অর্থ সহায়তা প্রদানের সময় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ ও ভোট বর্জন ছিল সাজানো নাটক। নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপির উদ্দেশ্য ছিল না। এই নির্বাচন থেকে তারা আন্দোলনের ইস্যু খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা সফল হতে পারবে না। বিএনপির নীরব ভোট বিপ্লবের ডাক দেওয়া ও নীরবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘটনা রহস্যজনক।' ওবায়দুল কাদের গতকাল দুপুরে সিলেটের কাজিরবাজার সেতুর নির্মাণকাজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারের সফলতা-ব্যর্থতার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এ দেশে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনেই ছোটখাটো সমস্যা হয়ে থাকে। এবারের নির্বাচন নিয়ে যে অভিযোগগুলো সামনে এসেছে, তা বড় কোনো বিষয় নয়। এ ছোট ত্রুটিগুলো বাদ দিলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে।' আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদপ্রার্থী আনিসুল হকের নির্বাচন সমন্বয়ক কর্নেল (অব.) ফারুক খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এবারের সিটি করপোরেশনের মতো সুষ্ঠু নির্বাচন এর আগে আর হয়নি। ফলে বিএনপি পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন বর্জন করলেও এতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ কিংবা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে না।' নভেম্বরের আগে আন্দোলনে যাবে না বিএনপি এনাম আবেদীন নির্বাচন বর্জন করে অখুশি নয় বিএনপি। দলটির নেতাদের মূল্যায়ন, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিকভাবে লাভ হয়েছে দলের। প্রমাণিত হয়েছে, জনগণ বিএনপির পক্ষে আছে। তবে ওই নির্বাচনে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতাও প্রকাশ পেয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। তাই এখন থেকে আরো ভেবেচিন্তে এগোনো উচিত বলে তাঁরা মনে করেন। এ কারণে আন্দোলন নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে রাজি নয় দলের হাইকমান্ড। ফলে নভেম্বরের আগে সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই বিএনপির বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, মাত্র নির্বাচন গেল; এখন পর্যন্ত দলের কোনো পর্যায়ের বৈঠক হয়নি। নিশ্চয়ই বিএনপি চেয়ারপারসন সব দিক দেখে নিয়ে ভেবেচিন্তে অগ্রসর হবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'নির্বাচন বয়কট করলেও তাঁরা হারেননি। বরং ফলাফল বিশ্লেষণে স্পষ্ট, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপিই বিজয়ী হতো। তাই এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৈতিক পরাজয় ঘটেছে বলে মনে করি।' এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই সেনাপ্রধান স্বীকার করেন, সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি কেউ কেউ বলছেন। কিন্তু শুধু এ কারণেই বিএনপি বিপাকে পড়েনি, বিপাকে পড়েছে সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণে। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, "আমরা আপাতত ২০ বছরের জন্য আওয়ামী লীগকে দেশ লিজ দিয়ে দেব। কারণ বস্তুত তারা লিখিত 'ডিক্টেটরশিপ' চালু করেছে। এ দেশের জনগণের ভোটাধিকার বলতে এখন আর কিছু নেই। যত দিন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠিত না হবে তত দিন বিএনপিসহ কোনো দলই নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাই দেশ এখন আওয়ামী লীগের কাছে লিজ থাকুক।" নির্বাচনে অংশ নেওয়া ও বর্জন করে বিএনপির কী লাভ হয়েছে জানতে চাইলে জমির উদ্দিন সরকার বলেন, '৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের পর আমার, ব্যারিস্টার মওদুদ, মির্জা আব্বাসসহ অনেকের মধ্যে এক ধরনের অতৃপ্তি ছিল। মনে হতো নির্বাচনে গেলে হয়তো বিএনপি জয়লাভ করতেও পারত। কিন্তু তিন সিটি নির্বাচনের পর মনে হয়েছে; খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তই সঠিক। কারণ তিনি আওয়ামী লীগকে আমাদের চেয়ে বেশি চিনতেন বলেই ওই নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাঁর মতে, আওয়ামী লীগকে চেনার চূড়ান্ত সুযোগ এই সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে হয়েছে।' দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি জয়লাভ করত। কিন্তু সরকার জোর করে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করেছে। তাঁর মতে, বিএনপির লাভ হলো; দেশের জনগণের পাশাপাশি বহির্বিশ্ব দেখেছে আওয়ামী লীগ কী করতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি ভবিষ্যতে কী করবে তা সময়ই নির্ধারণ করে দেবে। তবে হুট করে কিছু করবে না এটা নিশ্চিত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের পরবর্তী ধাপের আন্দোলন শুকনো মৌসুমে অর্থাৎ আগামী নভেম্বরের আগে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ এর আগে দল গোছানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তাঁদের মতে, দলের বর্তমান কাঠামো দিয়ে আন্দোলন সম্ভব নয়। সিটি নির্বাচনে মহানগরী কমিটির সাংগঠনিক দুর্বলতা চোখে পড়ার মতো বলে অনেকের মূল্যায়ন। আগে সাদেক হোসেন খোকার নেতৃত্বাধীন কমিটি ব্যর্থ হয়েছে। আর এবার ব্যর্থ হয়েছে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বাধীন কমিটি। সব মিলিয়ে দল ঢেলে সাজানো দরকার বলে সর্বস্তরে আলোচনা চলছে। তাই ঢাকার বাইরে একাধিক স্থানে খালেদা জিয়ার জনসভার পর বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করার পরামর্শ দিচ্ছেন দলটির নেতারা। আর কাউন্সিলের মাধ্যমে দল ঢেলে সাজানোর কথাও বলা হচ্ছে। কথা উঠছে দলে একজন পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব থাকা দরকার। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দিয়ে এত বড় দল বছরের পর বছর চলে না। তবে খালেদা জিয়া এসব পরামর্শ শুনলেও কী করবেন সে ব্যাপারে এখনো মনস্থির করেননি। খবর নিয়ে জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির পাশাপাশি দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে এ ব্যাপারে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। এদিকে সিটি নির্বাচন বর্জনের পর 'ভোট জালিয়াতি'র প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিনের হরতাল দেওয়ার জন্য দলের একাংশের পরামর্শ সত্ত্বেও খালেদা জিয়া রাজি হননি। তিনি এ বিষয়ে দলের সিনিয়র নেতা এবং ২০ দলীয় জোটের মতামত নিতে চাইছেন। পাশাপাশি আলোচনা করতে চাইছেন আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের বিএনপি সমর্থক সুধীসমাজের সদস্যদের সঙ্গে; যাঁরা সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে মূল পরামর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন। তবে তাঁদের অনেকের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, এখনই হরতাল বা কঠোর কর্মসূচির ব্যাপারে বেশির ভাগ নেতার আপত্তি আছে। এ ইস্যুতে তাঁরা বড়জোর একটি বিক্ষোভ সমাবেশ বা কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি দেওয়ার পক্ষে। যুক্তি হলো, হরতাল কেবল ঘোষণা করলেই হবে না, তা পালনও করতে হবে। কিন্তু মাথায় মামলার বোঝা নিয়ে আবারও মাঠে নেমে পুলিশের রোষানলে পড়তে রাজি নয় নেতাকর্মীরা। একটি সূত্রের দাবি, খালেদা জিয়াও তাড়াহুড়ো করে কর্মসূচি দিয়ে এখনই সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি করতে রাজি নন। ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা এবং ঢাকার কূটনীতিকদের তিনি জানিয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের কারামুক্তির পর ভেবেচিন্তে যা করার করা হবে। পুলিশের অনুমতি পাওয়া গেলে ১ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক দলের সমাবেশে যোগ দেওয়ার কথা ছিল বিএনপি চেয়ারপারসনের। কিন্তু মাঠ ব্যবহারে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অনুমতি মিললেও মাইক ব্যবহারের জন্য গতকাল পর্যন্ত পুলিশের অনুমতি পাওয়া যায়নি। ফলে খালেদা জিয়া ওই জনসভায় যেতে পারছেন না। শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, অনুমতি পাওয়া না গেলে শেষ পর্যন্ত একটি র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনায় বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা : নেতাকর্মী ও প্রশাসনের সহায়তায় সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীরা ভোটে প্রভাব বিস্তার করেছেন ধরে নেওয়া হলেও সিটি নির্বাচনে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়েও আলোচনা চলছে। মহানগরীর অনেক নেতা 'গা বাঁচিয়ে' চলছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে দলীয় এজেন্টরা কেন ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেননি এ প্রশ্ন ঘুরে-ফিরে উঠছে। বলা হচ্ছে, প্রায় ৯০ শতাংশ এজেন্ট ভোটকেন্দ্রেই যাননি। অথচ তালিকা প্রস্তুত করে দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তাঁদের প্রশিক্ষণ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছে, মির্জা আব্বাস তাহলে ঢাকায় এত দিন কী রাজনীতি করলেন? যদিও গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছিল, তা সত্ত্বেও প্রায় ২০ বছরের রাজনীতিতে আব্বাসের নিজেরই শত শত নেতাকর্মী থাকার কথা। অনেকের মতে, প্রশাসন হস্তক্ষেপ করেছে এটি সত্য, কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রতিবাদ করার মতো সাংগঠনিক শক্তি মির্জা আব্বাসের থাকা উচিত ছিল। পাশাপাশি বিএনপির মতো দলের ঢাকায় এত দুর্বল অবস্থা থাকার কথা নয়। সে তুলনায় বরং তরুণ তাবিথ আউয়ালের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। বর্জনের পর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আনিসুল হকের সঙ্গে তাঁর ভোটের ব্যবধানও ছিল অনেক কম। পাশাপাশি মির্জা আব্বাসের সঙ্গে সাঈদ খোকনের ভোটের ব্যবধান ছিল তুলনামূলক বেশি।    

No comments:

Post a Comment