পরিবারের তীব্র আকুতি আছে, তাঁকে নিজের ঘরে ফিরিয়ে আনার। আর রহস্যঘেরা নিখোঁজ ঘটনার নিষ্পত্তিতে সরকারের রয়েছে তাগাদা। কিন্তু সব কিছুর মধ্যে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে 'সীমান্ত'। ভারতের শিলং পুলিশের হাতে অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হওয়ায় তাঁকে চালাতে হবে আইনি লড়াই। আর এতে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এর বাইরে দুই দেশের সরকারের ইতিবাচক উদ্যোগ ছাড়া বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব নয়। স
্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও র্যাবের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে এ রকম ধারণা মিলেছে। শুধু সালাহ উদ্দিনের ফিরে আসা নয়, তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদের ভারতে যাওয়ার ভিসা নিয়েও জটিলতা আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সালাহ উদ্দিনের বিষয়ে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে এখনো কিছু জানায়নি। দুই দেশের আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের পরই তাঁকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে দুই দেশকেই নিজস্ব আইন ও নিয়ম কানুন মানতে হবে। তিনি বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি। ভারতে লুকিয়ে ছিলেন বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সরকার আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করবে। পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, সালাহ উদ্দিন আহমেদ পলাতক আসামি। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গণমাধ্যমে তাঁর ভারতে অবস্থানের বিষয়টি জানা গেছে। প্রয়োজনে তাঁকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে। এদিকে শিলং পুলিশের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় সালাহ উদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়েছে। অসংলগ্ন আচরণের কারণে বাংলাদেশের এই সাবেক প্রতিমন্ত্রীকে প্রথমে একটি মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হলেও পরে শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে। তাতে কত সময় লাগবে তা কেউ বলতে পারছে না। এর মধ্যে তাঁকে 'পুশ ব্যাক' করার সম্ভাবনাও রয়েছে। বাংলাদেশের পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়টি যতটা সহজ মনে হয়, ততটা নয়। ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে সাজা ভোগ অথবা জরিমানার মাধ্যমে ঘটনাটি নিষ্পত্তিতে কেটে যাবে কয়েক মাস। এরপর সিদ্ধান্ত হবে কী প্রক্রিয়ায় তাঁকে দেশে পাঠানো হবে। আর পলাতক আসামি হিসেবে দেশে আসামাত্রই গ্রেপ্তার হয়ে তাঁকে যেতে হবে কারাগারে। শিলং পুলিশ সালাহ উদ্দিনের কাছে পাসপোর্ট, ভিসাসহ কোনো বৈধ কাগজপত্র পায়নি। তিনি সেখানে কিভাবে পৌঁছেছেন তা বলতে পারছেন না। আবার তিনি মানসিক ভারসাম্য হারাননি বলে ইতিমধ্যে চিকিৎসকরা পুলিশকে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিচয় এবং বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামির পরিচিতি তাঁকে ভারতেও জামিন পেতে ভোগাবে। আর এ ক্ষেত্রে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক যোগাযোগই তাঁর দেশে ফেরাকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এর বাইরে আর কোনো বিকল্প নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, সালাহ উদ্দিন আহমেদকে উত্তরার একটি বাসা থেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে তাঁর স্ত্রী দাবি করলেও তিনি সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করেননি। পুলিশ নিজেই জিডি করে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। আদালতে যে আবেদন করেছিলেন হাসিনা আহমেদ, তার ভিত্তিতে পুলিশ 'সার্চ কমিটি' গঠন করে। আদালতে দাখিল করা পুলিশের প্রতিবেদনে রায়হান নামের এক যুবকের ওই ভবনে থাকার তথ্য রয়েছে। কিন্তু সালাহ উদ্দিন আহমেদ সেখানে ছিলেন এবং সেখান থেকেই হারিয়েছেন এমন তথ্য এ পর্যন্ত তদন্তে মেলেনি। ফলে সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও তাঁর পরিবারকে এখন প্রমাণ করতে হবে তিনি কোথায় ছিলেন এবং কিভাবে ও কখন ভারতে গেছেন। হারিয়ে যাওয়া কিংবা অপহরণ বিষয়ে বাংলাদেশে আইনি পদক্ষেপ থাকলে তা ভারতের আদালতে উপস্থাপন করে সালাহ উদ্দিনের পরিবার কিছুটা হলেও সুবিধা পেত বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মেঘালয়ে এই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দেশটির পুলিশ। সেই মামলার বিচার অথবা দুই দেশের সরকার পর্যায়ে আলোচনা এবং সমঝোতার জন্য অপেক্ষা করতে হবে এখন। নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের বিরুদ্ধেও অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়। যে কারণে এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও দেশে ফেরত আনা যায়নি তাঁকে। অথচ সরকারের কাছে নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ভারত-বাংলাদেশের বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকলেও তাতে রয়েছে অনেক আইনি প্রক্রিয়া। ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর ফৌজদারি মামলায় বিচারাধীন বা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিনিময়ের সুযোগ রেখে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহিঃসমর্পণ চুক্তি (বন্দিবিনিময় চুক্তি) অনুমোদন হয়। তবে সরকার সালাহ উদ্দিনকে ফেরাতে এ চুক্তির ব্যবহার করবে কি না তা জানা যায়নি। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, গণমাধ্যমে সালাহ উদ্দিনকে খুঁজে পাওয়ার সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর বিভিন্ন মহল থেকে হাসিনা আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেনি। হাসিনা আহমেদ ভারত গিয়ে স্বামীকে দেখার পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ে সহযোগিতা করতে চাইলেও গত রাত পর্যন্ত ভিসা পাননি। হাসিনা আহমেদ গণমাধ্যমে সরকারের সহযোগিতা কামনা করলেও ব্যক্তিগতভাবে সরকারের কারো সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেননি। এ অবস্থায় স্বামীর পাশে দাঁড়াতে তিনি কবে সে দেশে যেতে পারবেন তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি যে উদ্দেশ্যে ভারতে যেতে চান, তা দ্রুত ভিসা প্রাপ্তির জন্য সহায়ক নয়। ভ্রমণ, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আবেদন করা হলে তার সপক্ষে ভিসা পেতে যথার্থ নথি যুক্ত করতে হয়। হাসিনা আহমেদ আবেদন করার পর বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতা দূতাবাসে অনুরোধসহ ভূমিকা রাখলেও গত রাত পর্যন্ত তাতে অগ্রগতির খবর নেই। তবে দ্রুতই ভিসা পাবেন বলে আশাবাদী হাসিনা আহমেদ।
No comments:
Post a Comment