Wednesday, May 6, 2015

আরও তিন ঘাঁটির খোঁজ, তিনটি কঙ্কাল উদ্ধার:প্রথম অালো

থাইল্যান্ডের শংখলা প্রদেশের প্রত্যন্ত সাদাও এলাকায় গভীর জঙ্গলে গতকাল মঙ্গলবার মানব পাচারকারীদের আরও দুটি নতুন ঘাঁটির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর একটিতে পাওয়া গেছে একটি কঙ্কাল। এ ছাড়া সেখান থেকে কয়েক শ কিলোমিটার দূরে নতুন একটি ঘাঁটির খোঁজ মিলেছে। সেখানে পাওয়া গেছে দুটি কঙ্কাল। সাদাও এলাকায় এর আগে খোঁজ পাওয়া দুটি ঘাঁটির একটিতে গত সোমবার পাঁচটি কবর পাওয়া গেছে। পাচার বা অপহরণের মাধ্যমে নেওয়া বাংলাদেশি ও
রোহিঙ্গাদের দেহাবশেষ এ কবরগুলোতে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর এএফপি, এপি ও বিবিসির। এদিকে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে থাইল্যান্ডে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শুরু করা সরকারের অভিযানে সেখানকার অভিবাসীদের মধ্যে হয়রানি ও ধরপাকড়ের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। থাই পুলিশ জানায়, মালয়েশিয়া সীমান্তবর্তী শংখলা এলাকার ওই জঙ্গলে সন্ধান পাওয়া পাচারকারীদের দ্বিতীয় ঘাঁটি ইতিপূর্বে পাওয়া ঘাঁটিটি থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে। প্রথম ঘাঁটিতে একটি গণকবর থেকে গত শুক্র ও শনিবার ২৬টি দেহাবশেষ পাওয়া যায়। সেগুলো বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার পুলিশের মুখপাত্র প্রায়ুত থাভর্নসিরি বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যায় মানব পাচারকারীদের দ্বিতীয় শিবিরের সন্ধান পেয়েছি আমরা। সেখানে পাঁচটি কবর পাওয়া গেছে। তবে কবরগুলোতে কোনো মৃতদেহ আছে কি না, সে ব্যাপারে আমরা এখনো নিশ্চিত নই। কর্তৃপক্ষ এটা খতিয়ে দেখছে।’ পুলিশ মুখপাত্র প্রায়ুত জানান, ওই দিন থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ সরকারি কর্মকর্তাকে মানব পাচারে জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বুধবার সো নাইং ওরফে আনওয়ার নামে মিয়ানমারের একজন নাগরিককেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কর্তৃপক্ষের ধারণা, সে পাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা। এদিকে থাই পুলিশের অভিযানে সাদাও অঞ্চলের খাও কায়েউ পর্বত এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুটি নতুন ঘাঁটির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর একটি ঘাঁটি থেকে মাটিচাপা কঙ্কাল পাওয়া গেছে। অন্য ঘাঁটি থেকে মুঠোফোন চার্জার ও কিছু কাপড় পাওয়া গেছে। এ থেকে ধারণা করা হয়, খুব অল্প সময় আগে ওই এলাকায় ছেড়েছে পাচারকারীরা। শংখলা পুলিশের কমান্ডার মেজর জেনারেল অ্যাম্ফুন বুয়ারুবপর্ন জানান, তাঁরা অভিযান চালিয়ে যাবেন। পাচারকারীরা পাচারের শিকার ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়েই পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে মনে করছেন তাঁরা। থাই পুলিশ জানায়, শংখলা এলাকায় মানব পাচারকারীদের বড় ঘাঁটি ছিল বলে তাদের ধারণা। সম্ভবত কিছুদিন আগে তারা এলাকাটি ছেড়ে গেছে। নৌকায় করে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের ওই বন্দিশিবিরে এনে আটকে রাখা হতো। পরে স্বজনদের কাছ থেকে আদায় করা হতো মুক্তিপণ। টাকা দিতে না পারায় অনেকে দীর্ঘ সময় বন্দী থেকে অনাহারে ও রোগে মারা যান। এদিকে সাদাও থেকে কয়েক শ কিলোমিটার দূরে ফাং এনগা প্রদেশে পাচারকারীদের একটি পরিত্যক্ত ঘাঁটি থেকে দুটি কঙ্কাল উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তারা। ওই দুটি কঙ্কালের একটি দেখে বোঝা যায়, কোনো ব্যক্তিকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। দীর্ঘদিন থেকেই বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী অভিযোগ করছে, থাইল্যান্ডের সরকার সে দেশের মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, এমনকি পাচারকাজে নিজেদেরও জড়িয়ে ফেলেছে তারা। তবে আন্তর্জাতিক মহলের নানা অভিযোগ, সমালোচনা ও নিষেধাজ্ঞার হুমকির প্রেক্ষাপটে থাই জান্তা সরকার গত কয়েক মাস হলো মানব পাচারে জড়িত ব্যক্তিদের পাকড়াওয়ে অভিযান শুরু করেছে। গত শুক্রবার গণকবর থেকে অভিবাসীদের দেহাবশেষ পাওয়ার পর ওই সমালোচনা আরও বেড়ে যাওয়ায় চলমান অভিযানে গতি এনেছে তারা। আতঙ্কে অভিবাসীরা: পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শুরু করা অভিযানে সন্দেহভাজন কয়েকজন অভিবাসীকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এতে হয়রানি ও ধরপাকড়ের আতঙ্কে ভুগছেন থাইল্যান্ডে বসবাসকারী অভিবাসীরা। যে গণকবর থেকে ২৬ জন অভিবাসীর দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়, সেই স্থানের শিবির থেকে সম্প্রতি দুই অভিবাসীকে আটক করে পুলিশ। তাদের একজন মিয়ানমারের ১৫ বছরের এক কিশোর ও অপরজন তার বন্ধু। দুজনের কারও নাম প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ। তবে ওই কিশোরের বন্ধুর বাড়ি চট্টগ্রামে বলে দাবি করা হয়েছে। আটক করে নিয়ে যাওয়ার আগে ওই কিশোর সাংবাদিকদের বলেছে, ‘পুলিশ যখন বন্দিশিবিরটিতে (প্রথম) তল্লাশি শুরু করে, তখন আমরা কাছের আরেকটি শিবিরের দিকে দৌড় দিই। এ সময় তারা আমাদের ধরে ফেলে। শিবির ছেড়ে পালানোর সময় পাচারকারীরা আমাদের দুজন ও কয়েকজন রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে ফেলে যায়।’

No comments:

Post a Comment