Wednesday, May 6, 2015

ছাত্রলীগের সম্মেলনের অপেক্ষায় নেতাকর্মীরা:যুগান্তর

ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন ও নতুন কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বলছেন, ‘খুব শিগগির’ সম্মেলন আয়োজন করা হবে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, আগামী জুনের শুরুর দিকে বা জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে এ কাউন্সিল হতে পারে। সংগঠনের নেতারাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
.ritsads.com/ads/server/adserve/www/delivery/avw.php?zoneid=780&n=acd94d5f' border='0' alt='' /> সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশের এক ছাত্র সমাবেশে ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ‘আপনাদের জন্য সুখবর আছে। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় কাউন্সিলের ঘোষণা দেয়া হবে। ত্যাগীরাই সংগঠনের আগামী নেতৃত্ব পাবে।’ এর আগে সকালে যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, ‘জুনের শুরুতে বা ঈদের পর আমরা কাউন্সিল ও জাতীয় সম্মেলন আয়োজনের চিন্তাভাবনা করছি। তার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগরের দুটি সম্মেলন করা হবে। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দিনক্ষণ প্রকাশ করা হবে।’ সরেজমিন দেখা যায়, সোমবার দুপুরে অপরাজেয় বাংলার সামনে সমাবেশে সভাপতির নতুন সম্মেলনের ঘোষণার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দেয়। মধুর কেন্টিনে নেতাকর্মীদের ভিড় জমে যায়। এতদিন যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন তাদের অনেকেও ছুটে আসেন। এ অবস্থা ছিল রাত অবধি। এ সময় বেশ কয়েকজন নেতা জানান, আজকেও যদি সম্মেলন হয়, তাহলে দেখা যাবে বিপুলসংখ্যক নেতার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে গেছে। কেননা গঠনতন্ত্রে রয়েছে, সর্বোচ্চ ২৯ বছর বয়সীরাই ছাত্রলীগের নেতা বা কর্মী হতে পারবেন। এছাড়া গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ দু’বছর। কিন্তু বর্তমান কমিটির বয়স প্রায় ৪ বছর পূর্ণ হওয়ার পথে। যে কারণে বিপুলসংখ্যক নেতার বয়স ২৯ বছর পেরিয়ে গেছে। বিশেষ করে সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সম্পাদকদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশের বয়সই ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার পর্যায়ে নেই। এর ফলে সহসম্পাদক বা সদস্য কিংবা হল ও থানা পর্যায়ের নেতাদের মধ্য থেকে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বানাতে হবে। ফলে সম্ভাব্য নেতৃত্ব যাবে অনভিজ্ঞদের হাতে। এতে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অভিজ্ঞদের অভাবে সংগঠনে কোনো পর্যায়ে কখনও বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তা রোধ করা যাবে না। উল্লেখ্য, ছাত্রলীগের ২০০৬ সালের এপ্রিলের সম্মেলনে ‘বয়স’ প্রথা চালু হয়। এ কারণে সেবার অন্তত ৪০০ নেতা প্রতিযোগিতাই করতে পারেননি। তখন সদস্য পর্যায় থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করতে হয়েছিল। ২০১১ সালে পরের সম্মেলনে অবশ্য এ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটে। সম্পাদক থেকে সভাপতি এবং সহসম্পাদক থেকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু এ সময়েও বয়সের ফাঁদে পড়ে নেতা হওয়ার দৌড় থেকে ছিটকে পড়েন আরও তিন শতাধিক যোগ্য কেন্দ্রীয় নেতা। বর্তমানে এ পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক নাজুক বলে জানান নেতাকর্মীরা। সংগঠনের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সম্পাদকদের মধ্যে বেশির ভাগেরই বয়স পেরিয়ে গেছে। বিশেষ করে ২০১১ সালের নভেম্বরে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের মৌখিকভাবে অনুমোদিত ১৮৩ সদস্যের কমিটির মধ্যে সর্বোচ্চ ১০-১২ জন আছেন যাদের বয়স এখনও ২৯ পার হয়নি। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ২০১৩ সালের এপ্রিলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নতুন করে ঠাঁই দেয়া ২৭৬ জনের। এদের মধ্যে অল্প কয়েকজনের বয়স ২৯ বছরের মধ্যে রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ কমিটি ‘বাংলালিংক দামের কমিটি’ হিসেবে পরিচিত। কেননা এত জুনিয়র পর্যায়ের ব্যক্তিরা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন যে অনেকে নিজেদের নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেও ইতস্তত বোধ করেন। নতুন সম্মেলনের ব্যাপারে সোমবার কয়েকজন নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সংগঠনের অনিয়মিত সম্মেলনের কারণে সুষ্ঠু নেতৃত্বের বিকাশই কেবল বন্ধ থাকেনি, আখের গোছানোর জন্য অনেকেই নানা ধান্ধায় নেমে গেছে। কেননা ২৯ বছর যার পেরিয়ে যাবে তিনি তা বুঝতে পেরে আগেভাগেই হয় চাকরি নিয়ে নতুবা ব্যবসা-ঠিকাদারি নিয়ে সরে পড়েছেন। চাকরি নেয়ার কারণে সংগঠনের অর্ধ-শতাধিক পদ খালি হয়েছিল, যা পূরণ করা হয় ২০১৩ সালে। সংগঠনের নিষ্ক্রিয়তার দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে একজন যুগ্ম সম্পাদক বলেন, বিগত দেড় বছরে সংগঠনের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে চার স্তরের প্রায় ৪০০ নেতার মধ্যে মাত্র ১১ জনকে নিয়মিত পাওয়া গেছে। তারা হলেন- আলী আশরাফ, জয়দেব নন্দী, আবু হানিফ, ইমামুল হক সরকার টিটু, শামসুল কবীর রাহাত, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, হাসানুজ্জামান তারেক, শারমীন সুলতানা লিলি, কাজী এনায়েত, সাইদুর হেমান সোহাগ, আবিদ হাসান। এরা ক্যাম্পাসে ‘ওরা ১১ জন’ নামে পরিচিত। তবুও শংকা : সংগঠনের সম্ভাব্য নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা আশংকা প্রকাশ করে বলেন, যদিও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সম্মেলনের আলোচনা শুরু হয়েছে কিন্তু জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে সম্মেলন না হলে সেপ্টেম্বরের আগে আর তা হবে না। কেননা জুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়ে রয়েছে পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর। আর আগস্ট আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে শোকের মাস হিসেবে বিবেচিত। তাই কোনোভাবে জুন-জুলাই পার হলে পরের দু’মাসে আর সম্মেলন নাও হতে পারে। এ ব্যাপারে সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ‘জাতীয় সম্মেলন নিয়ে কোনো ধূম্রজাল নেই। আমরা শিগগিরই সম্মেলনের সার্বিক তথ্য প্রকাশ করব।’ সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, ‘ছাত্রলীগের মোট ১০১টি জেলা শাখা। নিয়ম হচ্ছে সব শাখার সম্মেলন শেষ করে নতুন কাউন্সিলর তালিকা তৈরি করে সম্মেলন আয়োজন করা। আর ১৮-২০টি জেলার সম্মেলন বাকি রয়েছে। এ সম্মেলনগুলো খুব দ্রুত শেষ করেই সম্মেলন হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে আমরা দেশরতœ শেখ হাসিনাকে চাচ্ছি। তাই সম্মেলনের তারিখটা প্রধানমন্ত্রীর সময় দেয়ার ওপরও নির্ভর করছে।’  

No comments:

Post a Comment