Thursday, May 7, 2015

কেমন তাদের নেতারা:প্রথম অালো

কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে আজ ভোট দিচ্ছে যুক্তরাজ্যের মানুষ। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ ও বিরোধী দল লেবার পার্টির মধ্যে মূল লড়াইটা হলেও কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বলে মনে হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে মাঝারি ও ছোট দলগুলোও। প্রথম সারির সাতটি দলের নেতাদের পরিচিতি দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি ডেভিড ক্যামেরন (৪৮), কনজারভেটিভ পার্টি: বর্তমান প্রধানমন
্ত্রী। পেশাদার শেয়ার-ব্যবসায়ীর ছেলে তিনি। পড়াশোনা করেছেন এটন কলেজ ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৫ সালে ৩৯ বছর বয়সে দলের হাল ধরেন। অভিবাসন-নীতির মতো প্রথাগত ডানপন্থী ইস্যুগুলো এড়ানোর মাধ্যমে তিনি দলকে ‘বিষমুক্ত’ করার চেষ্টা করেছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় ক্যামেরনকে নিষ্প্রভ মনে হলেও নিজের সুবিধাজনক অতীতই তাঁকে ‘চটকদার’ প্রার্থী বানিয়েছে। অবশ্য, তিনি অতীতের চেয়ে বরং তাঁর অর্থনৈতিক অর্জনের দিকেই তাকাতে বলেছেন ভোটারদের। এড মিলিব্যান্ড (৪৫), লেবার পার্টি: মার্ক্সবাদী বাবা ও মানবাধিকারকর্মী মায়ের ঘরে জন্ম এড মিলিব্যান্ডের। অত্যন্ত রাজনীতি-আচ্ছন্ন যে ঘরে বেড়ে উঠেছেন, তা ছিল বিশ্বজুড়ে বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের পদচারণে মুখরিত। নিজের বড় ভাই ডেভিড মিলিব্যান্ডকে সরিয়ে ২০১০ সালে লেবার পার্টির নেতা হন তিনি। যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ এখন তাঁর সামনে। বেখাপ্পা চালচলন ও একের পর এক হতাশায় ডোবানো পারফরম্যান্সের পর মিলিব্যান্ড এখন যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। এর পাল্লায় ভর করেই তিনি শেষ পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন হতে পারবেন বলে মনে করতে শুরু করেছেন ব্রিটিশ ভোটাররা। নিক ক্লেগ (৪৮), লিবারেল ডেমোক্র্যাটস: এমনিতেই ছোট দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটস। জোট করায় সেই দলেরই নেতা নিক ক্লেগ বর্তমানে ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী। তবে ‘অভিজ্ঞতা’ মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে দলটির জন্য। মতামত জরিপগুলোর ফল বলছে, ক্লেগ ও তাঁর দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটস এখন এতটাই অজনপ্রিয় যে এবারের নির্বাচনে খোদ ক্লেগই নিজের আসনটি হারাতে পারেন। শেষ হয়ে যেতে পারে তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। অনেক ভোটারের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন বাজেট ঘাটতি কমাতে যে কঠোর ব্যয় সংকোচন নীতি নিয়েছে, তাতে ইন্ধন দিয়েছে লিবারেল ডেমোক্র্যাটস। তবে শেষ পর্যন্ত নিজের আসনটি ধরে রাখতে পারলে ক্লেগ বাম বা ডান যেকোনো দিকের ‘কিং মেকার’ হয়ে উঠতে পারেন। নাইজেল ফারাজি (৫১), ইউকে ইনডিপেনডেন্স পার্টি: ইউকে ইনডিপেনডেন্স পার্টিকে (ইউকিপ) একটি জাতীয় শক্তিতে পরিণত করেছেন ফারাজি-ই। অবশ্য, তিনি নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন লড়াইয়ে অবতীর্ণ। রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের মতে, ফারাজির জনপ্রিয় প্রচারণার হালে এখন আর পানি পাচ্ছে না। ব্রাসেলস-বিরোধী ও রাজনৈতিক শুদ্ধাচার-বিরোধী এই ফারাজি একসময় ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট হারম্যান ভ্যান রমপুয়েকে তুলনা করতেন ‘ড্যাম্প র্যাগ’-এর সঙ্গে। পরে ২০১৪ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচনে ইউকিপের শীর্ষস্থান দখলে নেতৃত্ব দেন তিনিই। নিকোলা স্টারজিওন (৪৪), স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি: এবারের নির্বাচনে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই তারকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতাকামী এই নেতা। ইস্পাতের মতো দৃঢ় ও মার্জিত এই রাজনীতিকই হয়ে উঠতে পারেন পরের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তার নির্ধারক। দেশের দক্ষিণ সীমান্তের অতি সামান্য পরিচিত নেতা স্টারজিওন নির্বাচনপূর্ব টিভি বিতর্কের কল্যাণে হয়ে ওঠেন প্রচারণার সবচেয়ে আলোচিত মুখ। সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতিকে তুলোধুনো করে এবং এসএনপিকে ‘প্রগতিশীল শক্তি’ হিসেবে তুলে ধরে পুরুষ-নিয়ন্ত্রিত ব্রিটিশ রাজনীতিতে ঝড় তুলেছেন স্কটিশ ফার্স্ট মিনিস্টার এই নারী। তিনি অবশ্য নিজে সরাসরি কোনো আসন থেকে লড়ছেন না। লিয়ানে উড (৪৩), প্লেইড কিমরু: নির্বাচনে হাতেগোনা কয়েকটি আসন জিততে পারে প্লেইড কিমরু। তবে ওয়েলসের এই দলটির জাতীয়তাবাদীরা তাঁদের অপেক্ষাকৃত অস্পষ্ট অবস্থান থেকে সরে এসে এবার যুক্তরাজ্য জুড়ে প্রভাব বিস্তারের অবস্থান নিতে পারেন। নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে স্বাধীনতাপন্থী এই সমাজতান্ত্রিক দলটি অন্যদের সঙ্গে জোট বেঁধে মধ্য-বামপন্থী লেবার পার্টিকে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করবে। এর মাধ্যমে ওয়েলসের জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রতি সমীহ আদায়ের চেষ্টা করা হবে। নাতালিয়ে বেনেট (৪৯), গ্রিন পার্টি: গ্রিন পার্টির নেতা বেনেট ব্যয় সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছেন। মূলধারার রাজনীতিতে ত্যক্ত-বিরক্ত ভোটারদের সমর্থন আদায়ের দিকে নজর তাঁর। কিন্তু নিজের আসনে জয়ী হতেই বেনেটকে হিমশিম খেতে হবে। তাঁর দল শেষ পর্যন্ত একটিমাত্র আসন পেলেও পেতে পারে।

No comments:

Post a Comment