Friday, May 15, 2015

৮শ অভিবাসী ফিরিয়ে দিল মালয়েশিয়া:যুগান্তর

হাজার হাজার বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা অভিবাসী এখন সাগরে ভাসছেন। তাদের সামনে সব রাস্তা বন্ধ। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া কোনো দেশ তাদের আশ্রয় দিচ্ছে না। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংগঠন এবং মানবাধিকার কর্মকর্তাদের অনুরোধও তারা গ্রাহ্য করছে না। বৃহস্পতিবার ৮ শতাধিক বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা অভিবাসী বোঝাই ২টি বোটকে ফিরিয়ে দিয়েছে মালয়েশিয়া। এর আগে বুধবারও একটি বোট ফিরিয়ে দেয়া হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে সাগরে ভাসমান বোটগুল
োতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। বোটগুলোতে খাদ্য-পানির তীব্র সংকট। পানির অভাবে অনেকে নিজের মূত্রপান করতে বাধ্য হচ্ছেন। মালয়েশিয়ার নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে যে খাবার ফেলা হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। একটি স্থানে সাগরে পড়ে যাওয়া খাবার সাঁতরে আনতে গিয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মালয়েশিয়া থেকে যুগান্তরের প্রতিনিধি আহমাদুল কবির জানান, উপকূল থেকে ৮শ’ অভিবাসী বহনকারী দুটি বোট সাগরে ফিরিয়ে দিয়েছে মালয়েশিয়া। ধারণা করা হচ্ছে, এদের মধ্যে বাংলাদেশী ও মায়ানমারের রোহিঙ্গা থাকতে পারে। ৫ থেকে ৬শ’ করে অভিবাসী বোঝাই দুটি বোট বৃহস্পতিবার সকালে উপকূলে ভিড়তে চাইলে ফিরিয়ে দেয় মালয়েশিয়ান নিরাপত্তা বাহিনী। এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ান জুনাইদি বলেন, লংকাবি দ্বীপে প্রায় দেড় হাজার অবৈধ অভিবাসী উদ্ধারের পর পেনাংয়ের উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলে ৫শ’ অভিবাসী বহনকারী একটি বোট পাওয়া যায়। এখন আসলে আমরা কী করতে পারি? তিনি বলেন, যারা আমাদের সীমান্ত ভেঙে ঢুকতে চাইছে তাদের সঙ্গে আমরা এখনও ভালো আচরণ করছি, এখনও তাদের সঙ্গে মানবতাবোধ দেখিয়ে আচরণ করছি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এভাবে অবৈধ অভিবাসীর ঢল সামলাতে হবে। মালয়েশিয়ান এ উপমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখন এ বার্তাই স্পষ্ট দিতে হচ্ছে যে, এ ধরনের অভিবাসীদের আমরা গ্রহণ করতে পারছি না। উল্লেখ্য, বুধবার বিকালে পেনাংয়ের জলসীমায় ৫শ’ অভিবাসী বোঝাই একটি বোট দেখতে পায় স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর লংকাবি দ্বীপের উপকূলে পাওয়া যায় সাড়ে ৩শ’ অভিবাসীবাহী আরেকটি বোট। রাতভর কোনোটিকেই উপকূলে ঘেঁষতে না দিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল হতেই সাগরে ফিরিয়ে দেয় মালেশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী। এদিকে গ্রেফতার এড়াতে বহু আগেই মানব পাচার চক্রের সদস্যরা বোট পরিত্যাগ করেছে। ফলে নাবিকবিহীন অবস্থায় সমুদ্রে ঘুরপাক খাচ্ছে বোটগুলো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সামান্য কিছু খাবার ও পানি ছিল বোটগুলোতে। তা শেষ হয়ে গেছে। বোটগুলোতে খাদ্য ও পানির তীব্র সংকট। অনেকে পানির অভাবে প্রসাব খেতে বাধ্য হচ্ছেন। উপকূলে অভিবাসীদের বোট ভেরা ঠেকানোর কৌশল হিসেবে মলয়েশিয়ার নৌবাহিনী হেলিকপ্টার থেকে বোটগুলোতে প্যাকেটজাত খাবার ফেলা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। একটি স্থানে পানিতে পড়ে যাওয়া এ খাবার সংগ্রহ করতে সাগড়ে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া না খেয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ১২ জনের। বোটের একজন অভিবাসী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, দুই মাস ধরে আমরা সাগরে ভাসছি। আমরা মালয়েশিয়া যেতে চাই কিন্তু আমরা এখনও সেখানে পৌঁছতে পারিনি। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের এ ধরনের আচরণের সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। আশ্রয় দেয়ার আহ্বন এইচআরডব্লিউর : এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা অভিবাসীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটি বলেছে, অভিবাসী বহনকারী বোটগুলোকে ফেরানো বন্ধ করা উচিত। অভিবাসীদের তীরে নিয়ে গিয়ে জরুরিভিত্তিতে তাদের যেসব ত্রাণ প্রয়োজন, অবিলম্বে সেগুলো সরবরাহ করা উচিত। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর অব্যাহত নিপীড়ন চালানোর মাধ্যমে এ সংকট সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন এইচআরডব্লিউর এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি পরিচালক ফিল রবার্টসন। তিনি বলেন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া কর্তৃপক্ষ বোটে আসা অভিবাসীদের এ প্রবাহকে ফিরিয়ে দেয়ার নির্মম নীতি গ্রহণের মাধ্যমে সে সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করেছে, যা হাজার হাজার জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। ফিল রবার্টসন আরও বলেন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর উচিত ত্রিমুখী মানব পিং-পং খেলা বন্ধ করা। বরং তাদের উচিত এ দুর্ভাগ্যপীড়িত বোটগুলো থেকে সবাইকে উদ্ধারে একসঙ্গে কাজ করা। তিনি বলেন, এ সরকারসমূহকে বিশ্ব মূল্যায়ন করবে তারা কিভাবে ভীষণভাবে অরক্ষিত এ পুরুষ-নারী ও শিশুদের সঙ্গে আচরণ করে, তার নিরিখে। আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার (আইওএম) দেয়া তথ্যানুযায়ী, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্র উপকূলসমূহে বোটে ভাসছেন ৮ হাজার বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা। তাদের কাছে পর্যাপ্ত খাবার, পানি বা স্যালাইন কিছুই নেই। এ খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে এইচআরডব্লিউ। মূত্রপান করে জীবনধারণ : থাইল্যান্ডের উপকূলে আন্দামান সাগরে নৌকায় ভাসতে থাকা মানুষজন খাদ্য ও পানির অভাবে এখন এমনই ভয়ংকর দুর্দশার মধ্যে আছে যে, তাদের বেঁচে থাকার জন্য নিজেদের মূত্র পান করতে হচ্ছে। বিবিসির একজন সংবাদদাতা জনাথন হেড এদের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে গিয়েছিলেন। আন্দামান সাগরে মাছ ধরার একটি ট্রলারে তিনি দেখেছেন, প্রায় সাড়ে ৩শ’ রোহিঙ্গা এক সপ্তাহ ধরে খাদ্য ও পানীয়র অভাবে নিজেদের মূত্র পান করে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছেন। জনাথান হেড যখন একটি ইঞ্জিনের জলযানে করে ট্রলারটির কাছাকাছি যান, তখন ট্রলারটি থেকে খাবার এবং পানি চেয়ে লোকজন আকুতি করছিল। তিনি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলেন, লোকজন বোতলে ভরা নিজেদের মূত্র পান করছিল। জনাথন হেডের নিজের জন্য যে পানির বোতল ছিল তিনি সেগুলো ট্রলারটিতে ছুড়ে মারেন।  

No comments:

Post a Comment