Monday, September 8, 2014

জাপানের জন্য লাভটা নগদ:নয়াদিগন্ত

নির্বাচন নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ বর্তমান সরকার নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদ নিয়ে জাপানের সাথে প্রতিযোগিতা করে পারত কি না তা বিবেচ্য বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ ইউরোপীয় দেশগুলো বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যে বিরূপ অবস্থানে রয়েছে সে অবস্থায় সরকার বিশ্বসংস্থায় প্রতিযোগিতা করে কতটুকু সফল হতো তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের হেরে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ছিল। তাই
হেরে না এসে সরকার যদি সম্মানজনকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে বের হয়ে আসতে পারে, তাহলে তো সেটাই ভালো। বলা যায়, খারাপ জিনিসটাকে আমরা ভালো দামে বিক্রি করে দিলাম। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের দুই দিনের ঢাকা সফরের মূল্যায়ন করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও সাবেক কূটনীতিকেরা এমনই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এ সফরে বন্ধুত্বের মর্যাদা দিতে বাংলাদেশ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদের প্রতিযোগিতা থেকে সরে এসে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় গ্রুপ থেকে জাপানের প্রার্থিতাকে সমর্থন দিলো। আর ৬০০ কোটি ডলারের সহায়তা দেয়ার বিষয়টি পুনরুল্লেখ করে জাপান বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় দেশগুলোকে নিয়ে বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বা বিগ-বি উদ্যোগে বাংলাদেশকে অগ্রাধিকারের রাখার ঘোষণা দিয়েছে। রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির : এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, জাপান সরকারভিত্তিক সহায়তা দিচ্ছে না, এটা দেশভিত্তিক। এই সহায়তা কাজে লাগানো গেলে বাংলাদেশ উপকৃত হবে। জাপানের জন্য লাভটা নগদ, বাংলাদেশেরটা বাকি রইল। তিনি বলেন, যৌথ ইশতেহারে সমন্বিত অংশীদারিত্বের বিষয়ে জাপান যে কথা বলেছে তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এই অংশীদারিত্বের ভিত্তি হবে শান্তি, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন। এ কথার অর্থ হলো বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকতে হবে, জনগণের মানবাধিকারকে সম্মান করতে হবে ও আইনের শাসন থাকতে হবে। এই কথাই তো যথেষ্ট। এই অল্প কয়টি শব্দে তারা অনেক কথাই বলে দিয়েছে। রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান : চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান বলেন, জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য পদের প্রতিযোগিতা থেকে সরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রতি একটি সৌজন্যতা দেখালেন। এখন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তার দেশের জনগণকে বলতে পারবেন যে আমি বাংলাদেশ থেকে এই জিনিসটা নিয়ে এসেছি। এটা আবের জন্য কূটনৈতিক অর্জন। বিনিময়ে তারা সরকারি ও বেসরকারি খাতে অনেক সহযোগিতা দিতে যাচ্ছে। এর কতটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব তা জানি না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য এ সফর অন্যভাবে বড় অগ্রগতি। এত দিন আমরা গ্রহীতার কাতারে ছিলাম। এখন আমরা আন্তর্জাতিক অংশীদার হলাম। এই অবস্থানের পরিবর্তনটা একটা বিরাট ব্যাপার। আমরা কি দিলাম, বিনিময়ে কি পেলামÑ বিষয়টাকে এভাবে মূল্যায়ন করা যাবে না। কূটনীতিতে এ ধরনের সৌজন্যতা থাকে। নিরাপত্তা পরিষদের পদ ছেড়ে দিয়ে জাপানের কাছ থেকে আমরা অন্য জায়গায় সমর্থন নিতে পারব। অধ্যাপক শহীদুজ্জামান : প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে বিনিময়ে যা পাওয়া গেল তা কিভাবে মূল্যায়ন করা যায়Ñ প্রশ্ন করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক অধ্যাপক শাহীদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ যে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য পদের জন্য প্রার্থী এই কথাটা খুব একটা শোনা যায়নি। আর যেখানে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুপস্থিত, পশ্চিমা বিশ্ব যেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, সেখানে নিরাপত্তা পরিষদের প্রার্থিতা দেয়াটা একটা হাস্যকর ব্যাপার। জাপান তাদের প্রার্থিতার প্রতি সমর্থন চেয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে হবে এমনটা প্রকাশ্যে আসেনি। তিনি বলেন, প্রার্থী হলেই যোগ্যতার প্রমাণ মেলে না। কোনো দেশ এখন পর্যন্ত বলেনি তারা বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে। বরং বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমর্থন ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে এ ধরনের নির্বাচনে জেতা সম্ভব না। লিয়াকত আলী : একই প্রশ্নের জবাবে দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার লিয়াকত আলী বলেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ১৪ বছর পর বাংলাদেশে এলেনÑ এই ঘটনাটাই বেশ তৎপর্যপূর্ণ। এটা জাপানের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব আবারো তুলে ধরা হলো। আর বাংলাদেশকে সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি জাপানের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পুনর্নিশ্চয়তা দেয়া হলোÑ এটাও গুরুত্বপূর্ণ। এই সহায়তা বাংলাদেশ কিভাবে কাজে লাগাতে পারে সেটাই মূল বিষয়। শিনজো আবের সফরসঙ্গি হিসেবে উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ীদের যে বড় প্রতিনিধিদল এসেছে তা বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে তুলে ধরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টোকিও সফরের খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জাপানের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের আয়োজন করতে পেরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

No comments:

Post a Comment