রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরুর দিন থেকেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জনদুর্ভোগও। গতকাল বুধবারও দেশের বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কে যাত্রীবাহী গাড়ি আটক হওয়ায় মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এ পেশার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিকল্পনা ও কৌশল নিধারণ ছাড়া ঢাকঢোল পিটিয়ে অভিযান শুরু করায় সরাসরি এর প্রভাব পড়ছে জনগণের ওপ
র। এমনিতেই যানজটে সারাক্ষণ নাকাল থাকে জনগণ, তার ওপর রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে গণহারে অভিযান ভোগান্তির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এ দিকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে প্রায় সাড়ে তিন লাখ ‘আনফিট’ গাড়ি রয়েছে। গত তিন দিনের অভিযানে মোবাইল কোর্টের হাতে আটক হয়েছে মাত্র চার হাজারের মতো গাড়ি। আর জরিমানা আদায় হয়েছে প্রায় ২৬ লাখ টাকা। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে দিয়েই ঢাকাসহ সারা দেশে লক্কড়ঝক্কড় মার্কা শত শত গাড়ি সড়ক-মহাসড়কে এখন দিব্যি চলাচল করছে। এর মধ্যে সরকারি গাড়ির সংখ্যা কম নয়। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) বিজয় ভূষণ পালের সাথে গতকাল বুধবার রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, মাননীয় মন্ত্রীর নির্দেশে আমরা গত ১০ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী আনফিট গাড়ি ধরার অভিযান শুরু করেছি। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। আগেও যে এমন অভিযান পরিচালিত হয়নি তা কিন্তু নয়। অভিযানের মধ্যেও শত শত আনফিট গাড়ি খোদ রাজধানী ঢাকাতেই চলাচল করছেÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সব গাড়ি ধরলে তো আর হবে না। সব লোম বাছতে গেলে আর কম্বলই থাকবে না’। এমনিতে অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে বেড়ে গেছে জনদুভোর্গ। তারপরও শুরু হওয়া এই অভিযান আর থামবে না। যারা এখনো ফিটনেস এবং লাইসেন্স করেননি এটা তাদের জন্য সতর্কবার্তা। তবে আশার কথা হচ্ছে অভিযানের পর বিআরটিএ অফিসগুলোতে ফিটনেস করানোর জন্য শত শত গাড়ি লাইন ধরেছে। বিআরটিএ সহকারী পরিচালকেরা (এডি) এসব ফিটনেস করতে এখন রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। এটা অবশ্যই পজিটিভ। তিন দিনের অভিযানে গতকাল বুধবার পর্যন্ত সারা দেশে ফিননেসবিহীন গাড়ি আটক হয়েছে প্রায় চার হাজার। এর মধ্যে প্রথম দিন দুই হাজার ২৪৯টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। জরিমানা আদায় করেছে ১৬ লাখ ৭১ হাজার ৪১০ টাকা। কারাদণ্ড দিয়েছে ২১ জনকে। আর ডাম্পিং স্টেশনে পাঠিয়েছে ৬৫টি গাড়ি। অনুরূপ গত মঙ্গলবার দেশব্যাপী পরিচালিত অভিযানে এক হাজার ৩৯৪টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। জরিমানা হয়েছে ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৫০ টাকা। পাঁচজন চালককে দেয়া হয়েছে কারাদণ্ড আর ডাম্পিং স্টেশনে পাঠানো হয়েছে ৩৪টি গাড়ি। অভিযানের তৃতীয় দিন গতকাল বুধবার একইভাবে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করলেও রাত ৭টা পর্যন্ত পুরো দেশের চিত্র জানাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলরা। তবে বিআরটিএ’র পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) বিজয় ভূষণ পাল বলেন, ঢাকা মহানগরীতে পরিচালিত অভিযানে ৪৯টি মামলা, ৩৯ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা, পাঁচটি গাড়ি ডাম্পিং ও ৯টি গাড়ির কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা শহরে সরেজমিন দেখা যায়, মিরপুর-ফার্মগেট, গুলিস্তান-মতিঝিল রুটে শত শত আনফিট গাড়ি চলাচল করত। এসব গাড়ি ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে দিয়েই চলাচল করলেও সেগুলো ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে এ দিনও বিআরটিসি বাস চলেছে অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেক বেশি। নিয়মিত বাসে যাতায়াত করেন এমন যাত্রীরা গতকাল এ প্রতিবেদককে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিন দিন ধরে বাসা থেকে বের হচ্ছি উটকো ঝামেলা মাথায় নিয়ে। মানে বাস স্টপেজে এসে দাঁড়ালেই দেখছি গাড়ি নেই। যাত্রী শত শত। বাধ্য হয়ে এখন ভিন্ন পথ অবলম্বন করছি। নতুবা অফিস সময় পাওয়া মুশকিল। তারা বলেন, পরিকল্পনা ছাড়া এই অভিযান জানাজানি করে শুরু করায় এর প্রভাব পড়েছে আমাদের ওপর। জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তে আনা উচিত ছিল। তবে এটা একটি ভালো উদ্যোগ। হয়রানি বন্ধের দাবি : গাড়ির কাগজপত্র ও চালকের লাইসেন্স চেকিং এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি ধরার নামে হয়রানি ও মিথ্যা মামলা বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক ও কভার্ডভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়ন। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ট্রাক-কভার্ডভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ট্রাক-কভার্ডভ্যান, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ দাবি করেন। ট্রাক-কভার্ডভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন নূর মোহাম্মদ। সভায় নেতারা গাড়ির কাগজপত্র ও চালকদের লাইসেন্স চেকিংয়ে নামে হয়রানি, জরিমানা, অপমান এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি ধরার নামে মিথ্যা মামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অনতিবিলম্বে এ হয়রানি বন্ধ করে পণ্য পরিবহনের স্বাভাবিকতা বজায় রাখা এবং এই শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানানো হয়। হয়রানি বন্ধ না হলে যেকোনো সময় দেশের পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে বলে নেতারা উল্লেখ করেন। তারা বলেন, প্রয়োজনে গাড়ি বন্ধ করে দেয়া হবে। সভায় বক্তব্য রাখেন ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম মন্টু, আলহাজ মকবুল আহমদ, আব্দুল মোতালেব, মো: আলী আহসান, সাদেকুর রহমান ও আব্দুল জলিল।
No comments:
Post a Comment