Tuesday, December 30, 2014

সংঘাত নয়, শান্তি চাই : প্রধানমন্ত্রী:কালের কন্ঠ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার দেশে চমৎকার পরিবেশ বজায় রাখার মাধ্যমে বাঙালি জাতির জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে চায়। তিনি বলেন, 'সংঘাত নয়, আমরা শান্
তি চাই। সকলের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা দেশে একটি সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে চাই। আমাদের লক্ষ্য বাঙালি জাতির জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখা, যাতে বিশ্বে আমরা একটি মর্যাদাসম্পন্ন অবস্থান লাভ করি।' গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে জাতীয় পর্যায়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি মানুষ বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য অনুযায়ী পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন করে আসছে। অন্যদিকে সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছে। এটি একটি ঐক্যবদ্ধ আস্থার প্রমাণ। বাঙালি জাতি এটি সম্ভব করে তুলেছে এবং বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বছরব্যাপী শিল্পাচার্যের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের অংশ হিসেবে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার এবং শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সহধর্মিণী জাহানারা আবেদিনও বক্তব্য দেন। এতে জয়নুল আবেদিন স্মারক বক্তব্য দেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব রঞ্জিত কুমার বিশ্বাস। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আজকে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। ধর্মের লেবাসধারীরা ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা করছে। আমরা গত বছর দেখেছি, কিভাবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের চত্বরে পবিত্র কোরআন শরিফে আগুন দেওয়া হয়। জাতীয় মসজিদ তছনছ করা হয়।' তিনি বলেন, 'একমাত্র আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যই পারে মানুষের এসব অমানবিক আচরণের পরিবর্তন আনতে। আমাদের শিল্পী-সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবীদের এ ব্যাপারে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মানুষের মননে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাঙালি সংস্কৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতা। ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে মানুষে মানুষে মিলন হবে, এটাই বাঙালি সংস্কৃতির মূল কথা। আজকে মাঝেমধ্যে নিজের মনেই প্রশ্ন জাগে, বাঙালি জাতি কি তার সংস্কৃতির মূলধারা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে?' শিল্পাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে শিল্প ও সংস্কৃতি এবং বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশে তাঁর অবদান জাতি চিরদিন গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে। একই সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'তিনিও শিল্পী ছিলেন। তবে তাঁর ক্ষেত্র রং-তুলির জগতে ছিল না। তিনি ছিলেন রাজনীতির নান্দনিক শিল্পী। বাঙালির মানসে তিনি শুধু স্বাধীনতার বীজমন্ত্র এঁকে দিয়েই ক্ষান্ত হননি, তিনি বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন।' তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শিল্পাচার্যের ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তাঁরা মননে-আদর্শে একই ধরনের মত ও পথের অনুসারী ছিলেন। এই দুই বাঙালি মহাপুরুষ বাঙালি সংস্কৃতির উন্নয়ন ও বিকাশে আজীবন কাজ করেছেন।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা শিল্পাচার্যকে বাংলাদেশের সংবিধানের স্কেচ করার দায়িত্ব দেন। তিনি সুচারুভাবে সে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু সোনারগাঁয় বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন স্থাপনের দায়িত্বও দেন শিল্পাচার্যকে। তিনি বলেন, সব শিল্পকর্মই যে লোক-ঐতিহ্যের ধারায় প্রবাহিত হয়, তার বাস্তব রূপায়ণই আজকের ঐতিহাসিক সোনারগাঁর বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন। শেখ হাসিনা বলেন, জয়নুল আবেদিন ছিলেন সাধারণ আটপৌরে মানুষের শিল্পী। সাধারণ মানুষের জীবনচিত্র, দুঃখ-বেদনা ছিল এই মহান শিল্পীর ছবির উপজীব্য। তিনি একাধারে ছিলেন নিসর্গপ্রেমিক, অন্যদিকে তার রং-তুলিতে ফুটে উঠেছে দ্রোহের ভাষা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'কাকতালীয় হলেও আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের সঙ্গে শিল্পী জয়নুল আবেদিনের অনেক মিল খুঁজে পাই আমরা। দুজনেরই জন্ম গ্রামে। ছাত্রাবস্থার একটা সময় তাঁদের কেটেছে ময়মনসিংহে। আমাদের জাতীয় কবি এবং শিল্পাচার্য তৎকালীন পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একই বছর অর্থাৎ ১৯৭৬ সালে মারা যান। দুজনকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সমাহিত করা হয়।' তিনি বলেন, 'একজন শব্দের কারুকার্যের মাধ্যমে অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ করেছেন। অন্যজন রং-তুলির আঁচড়ে সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং বঞ্চনাকে তুলে ধরেছেন।' শেখ হাসিনা বলেন, শিল্পাচার্যের ৪৩-এর দুর্ভিক্ষের ছবিগুলো মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা তুলে ধরার পাশাপাশি তৎকালীন ব্রিটিশ রাজের এ দেশের মানুষের প্রতি চরম অবহেলা এবং মানুষের দুর্দশা লাঘবের ব্যর্থতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল। তিনি বলেন, একইভাবে ১৯৭০ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে মহাপ্রলয়ের পর বঙ্গবন্ধু যেমন ছুটে গিয়েছিলেন দুর্গত মানুষের পাশে, শিল্পী জয়নুল আবেদিনও সেদিন ঘরে বসে থাকতে পারেননি। তিনিও ত্রাণসামগ্রী নিয়ে দুর্গত এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। সেখান থেকে ফিরে শিল্পী আঁকলেন তাঁর বিখ্যাত ছবি 'মনপুরা-৭০'। ৩০ ফুট দীর্ঘ এই শিল্পকর্মে শিল্পী সাইক্লোনের ভয়াবহতা ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি বাঙালির ঘুরে দাঁড়ানোর দৃঢ়চিত্তের ইঙ্গিতও তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবনাশ্রয়ী বাস্তবানুগ শিল্পকর্ম সৃষ্টিতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের কৃতিত্ব সর্বজনস্বীকৃত। সাধারণ মাটির মানুষের বিচিত্র জীবনের বিভিন্ন দিক এবং নিসর্গ, নবান্ন, দুর্ভিক্ষ, জলোচ্ছ্বাস, যুদ্ধ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, জীবজন্তু ইত্যাদি অনায়াসে তাঁর শিল্পকর্মের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। সূত্র : বাসস।    

No comments:

Post a Comment