বিভিন্ন বাহিনীর বিশেষ ভাতা সমন্বয় বা হ্রাসের সুপারিশ করেছে পে-কমিশন। এসব বাহিনীর মধ্যে রয়েছে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও ভিডিপি, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), র্যাব, বিজিবি, নার্সসহ আরো কয়েকটি পেশার লোকজন। বলা হয়েছে, তাদের যে বিশেষ ভাতা দেয়া হয় তা যৌক্তিকীকরণ ও সমন্বয় করা যেতে পারে। সরকার গঠিত অষ্টম পে-কমিশনের এ প্রতিবেদনটি গত ২১ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে হস্ত
ান্তর করেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর আনসার ও ভিডিপি অধিদফতর, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), নার্স ইত্যাদি সার্ভিস এবং সংস্থার জন্য বিভিন্ন হারে বিভিন্ন ভাতা চালু রয়েছে। কমিশনের সুপারিশ হচ্ছে বর্ধিত বেতন কাঠামোর পরিপ্রেক্ষিতে এ ভাতা যৌক্তিকীকরণ ও সমন্বয় করা যেতে পারে। জানা গেছে, পে-কমিশনের প্রতিবেদন তৈরি করার সময় এ সম্পর্কে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও পেশার মানুষের মতামত নেয়া হয়। এখানে বিভিন্ন বাহিনীর জন্য বিদ্যমান ভাতার বিষয়টিও ওঠে আসে। মতামতে বলা হয়, এসব লোক অধিকাংশ ঝুঁকিভাতা পেয়ে থাকেন। এই ঝুঁকিভাতা প্রশাসনে এক ধরনের বৈষম্যের সৃষ্টি করছে। তাই এ ধরনের ভাতা রদ বা যৌক্তিকীকরণ করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্ট মাসে শুধু পুলিশের জন্য ৩০ শতাংশ ঝুঁকিভাতা ঘোষণা করে সরকার। ৫ জানুুয়ারি নির্বাচনের আগে ভাতা বাড়ানোর একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। এরপর দ্রুত প্রস্তাবটি অনুমোদন করিয়ে নেয়া হয়। প্রায় সোয়া এক লাখ পুলিশ এখন ৩০ শতাংশ ঝুঁকিভাতা পেয়ে আসছেন। এ জন্য বছরে সরকারকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ২০০৪ সালে র্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই বাহিনীর সদস্যরা বিশেষ ভাতা পেয়ে আসছে। এ ভাতার হার ৭০ শতাংশ। একই সাথে অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের বিশেষ ভাতা পেয়ে আসছে। এখন যেহেতু পে-কমিশনের প্রস্তাবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা শতকরা শতভাগ বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে, তাই বিভিন্ন বাহিনীর জন্য বিশেষ ভাতা থাকার যৌক্তিকতা কমে এসেছে। কারণ কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হলে এসব বাহিনীর সদস্যদের বেতন ও ভাতা বেড়ে যাবে। তাই কমিশনের পক্ষ থেকে ভাতা সমন্বয় ও যৌক্তিকীকরণের কথা বলা হয়েছে। অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, পে-কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বিভিন্ন বাহিনীর ঝুঁকিভাতা কমানো বা যৌক্তিকীকরণের যে সুপারিশ করেছে তা বাস্তবসম্মত। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা যেকোনো সরকারের পক্ষেই কঠিন। তাই আপাতত এই ভাতা যৌক্তিকীকরণের কোনো সম্ভাবনা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। কারণ এটি স্পর্শকাতর বিষয় এবং এ জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন রয়েছে। প্রসঙ্গত পে-কমিশনের রিপোর্টে বেতনের বিদ্যমান ২০ স্কেলের পরিবর্তে ১৬ স্কেলে নামিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে থাকা সরকারি চাকুরেদের মূল বেতনের সুপারিশ করা হয় ৮০ হাজার টাকা এবং সর্বশেষ ১৬তম ধাপে থাকাদের বেতন হবে আট হাজার ২০০ টাকা। আর অতিরিক্ত হিসেবে সিনিয়র সচিবদের বেতনের প্রস্তাব করা হয়েছে ৮৮ হাজার টাকা একই সাথে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর সচিবদের সাকুল্য বেতনের প্রস্তাব করা হয়েছে এক লাখ টাকা। প্রতিবেদন পাওয়ার পর অর্থমন্ত্রী বলেছেন, পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন শেষে আগামী ১ জুলাই (২০১৫) থেকে এসব সুপারিশ কার্যকর করা হবে। এ ক্ষেত্রে অর্থের কোনো সঙ্কট হবে না।
No comments:
Post a Comment