Thursday, July 24, 2014

বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে চীন-জাপানের জন্য:কালের কন্ঠ

এশিয়ার দুই বড় অর্থনীতির দেশ চীন ও জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ শিল্প প্লট বরাদ্দ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দেশের পাঁচটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪০টি প্লট ও দুটি শিল্প ইমারত সংরক্ষিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ ছাড়া দেশটির বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫০০ একর জমির ওপর বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রক্রিয়াও
শুরু করেছে সরকার। একই সঙ্গে চীনের বিনিয়োগকারীদের জন্য চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ অঞ্চল প্রতিষ্ঠারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান ও চীন সফর শেষে তাঁর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে এসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশের নিটওয়্যার রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধার ক্ষেত্রে তিন স্তরের রুলস অব অরিজিনের শর্ত কমিয়ে এক স্তরে নামিয়ে আনার বিষয়ে জাপান সরকারের অঙ্গীকার আদায়েও তৎপর হয়ে উঠেছে সরকার। এ ব্যাপারে কাজও শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিদ্যমান নীতিতে নিটওয়্যার রপ্তানির ক্ষেত্রে জাপানে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে হলে বাংলাদেশকে নিজস্বভাবে কমপক্ষে সুতা উৎপাদন করে তার থেকে নিটওয়্যার তৈরির পর রপ্তানি করতে হবে। এটি এক স্তরে নামিয়ে আনা হলে সুতা বিদেশ থেকে এনে শুধু নিটওয়্যার তৈরির পর তা রপ্তানি করলেই শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যাবে। দেশের নিটওয়্যার রপ্তানিকারকরা দীর্ঘদিন ধরে জাপানের কাছে এমন সুবিধা চেয়ে আসছিলেন।  গত ২৫ থেকে ২৮ মে প্রধানমন্ত্রী জাপান সফর করেন। ওই সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে ২১ দফার একটি ইশতেহার স্বাক্ষরিত হয়। আর ৬ থেকে ১১ জুন শেখ হাসিনা চীন সফরে গিয়ে সেখানেও চীনের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে একটি যৌথ ইশতেহার স্বাক্ষর করেন। ওই দুই সফরে উঠে আসা বিভিন্ন ইস্যুর বাইরেও দেশ দুটির সঙ্গে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় নানা ইস্যু নিয়ে কাজ করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমার্ধে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ঢাকা সফরের কথা রয়েছে। এর আগেই দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে স্বাক্ষরিত যৌথ ইশতেহার বাস্তবায়নে অগ্রগতি অর্জন করতে চায় বাংলাদেশ। তা ছাড়া জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আগামী বছরের শুরুতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রথমবারের মতো নিয়মিত বার্ষিক আলোচনার জন্য ‘ফরেন অফিস কনসালটেশনস’-এর উদ্যোগ নেওয়া হবে। জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য শিল্প প্লট বরাদ্দ দেওয়া বা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে টোকিওতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও ঢাকায় অবস্থিত জাপানি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও এ ক্ষেত্রে সমন্বয়ের কাজ করছে। একই সঙ্গে জাপান ও বাংলাদেশের শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ‘সরকারি-বেসরকারি অর্থনৈতিক সংলাপ’ আয়োজনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের নামের একটি তালিকা জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। জাপানের জনগণ, বিশেষ করে শিশুদের বাংলাদেশের প্রকৃতি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানাতে এক জোড়া রয়েল বেঙ্গল টাইগার পাঠাবে বাংলাদেশ। এ জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সময় বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন ত্বরান্বিত করতে ঢাকায় হাইব্রিড ধান ল্যাবরেটরি স্থাপন এবং সুপার হাইব্রিড ধান উৎপাদনে বীজ হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ও চীনা প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে চীন যাওয়ার অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শিগগির এ সফর আয়োজনের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমার ইকোনমিক করিডর (বিসিআইএম-ইসি) সৃষ্টির জন্য আঞ্চলিক সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনে একমত হয়েছে সরকার। এ জন্য বাংলাদেশপক্ষের সমীক্ষা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) তত্ত্বাবধানে মার্চ মাসে শুরু হয়েছে। এর প্রতিবেদন তৈরির কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। বিসিআইএম-ইসির দ্বিতীয় জয়েন্ট স্টাডি গ্রুপের বৈঠক আগামী আগস্ট মাসে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

No comments:

Post a Comment