Thursday, July 24, 2014

বাংলাদেশীদের কাজের বিরাট সুযোগ ব্রাজিলে:নয়াদিগন্ত

২৫-২৬ বছর আগে প্রথম ব্রাজিলের মাটিতে বাংলাদেশীদের পদার্পণ। বর্তমানে ব্রাজিলে প্রায় পাঁচ হাজার বাংলাদেশীর বসবাস। মাঝে সংখ্যাটা আরো বেশি ছিল। অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ায় সংখ্যাটা কমেছে, মূলত বাংলাদেশীরা ব্রাজিলকে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করেন। দুবাই থেকে প্যারাগুয়ে বা বলিভিয়া হয়ে ব্রাজিলে প্রবেশ করেন তারা। এরপর ব্রাজিল থেকে ভেনিজুয়েলা, কলাম্বিয়া, পানামা, নিকারাগুয়া, কোস্টারিকা,
হন্ডুরাস, গুয়াতেমালা, মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ। তা অবৈধ পথে। এতে একেকজনের ২০-২৫ লাখ টাকা খরচ হয়। সময় লাগে আড়াই থেকে তিন মাস। বাংলাদেশীদের কিছু অংশ ব্রাজিলে আপদকালীন সময়ে কাজ করেন। পরে আর ল্যাটিনের এই দেশটি ত্যাগ করেন না। তাদেরই বক্তব্য যারা ব্রাজিলে না থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তারা আসলেই বোকার স্বর্গে বাস করেন। কারণ ব্রাজিলে তো আয়-রোজগারের ভালো ব্যবস্থা আছে। স্বাধীনভাবে ব্যবসায় করে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের চেয়ে বেশি আয়ের সুযোগ এখানে। ব্রাজিলে সুবিধাটা হলো এখানে একবার প্রবেশ করতে পারলে পুলিশ বা সরকার কোনো সমস্যা করে না। মাঝে মধ্যে কাউকে বা কোনো গ্রুপকে অবৈধভাবে প্রবেশের দায়ে গ্রেফতার করলে ক’দিন পরই আবার ছেড়ে দেয়া হয়। কারণ প্রশাসন নিজ খরচে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারবে না। যেহেতু এরা এ দেশে ঢুকেছে সুতরাং কাজকর্ম করে জীবন চালাক। কোনো সমস্যা নেই। আর এ কারণেই বাংলাদেশীদের খুব পছন্দ দেশটি। আর ব্রাজিলিয়ানদের ব্যবহারও ভালো। সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। প্রবাসী বাংলাদেশীরা মূলত এখানে কাপড়ের ব্যবসায় আর মুরগির খামারে চাকরি করেন। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে মুরগি রফতানি করে ব্রাজিল। সাথে গরুর গোশতও। বিশাল এ দেশে রয়েছে হাজার হাজার মুরগির আর গরুর খামার। হালাল প্রক্রিয়ায় এই গোশত প্রক্রিয়াজাত করতে মুসলমান শ্রমিকের প্রয়োজন। কিন্তু পর্যাপ্ত মুসলমান নেই দেশটিতে। অন্য দিকে আরব দেশগুলো হালাল গোশত ছাড়া নেবে না। যে কারণে মুসলিম শ্রমিকের ব্যাপক চাহিদা এখানে। সরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশ এ সুবিধা নিতে পারে বলে জানান প্রবাসী বাংলাদেশীরা। এ শ্রমিকেরা পরে চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় করতে পারে। যেমনটি এখন করছে। ব্যবসায়ী কাজী মিলনের বক্তব্য, বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে করলে এখানে তুলা, চামড়া, কাঠ এবং গার্মেন্ট শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন। শ্রমবাজার সস্তা এখানে। ব্রাজিলে এসব শিল্প কারখানা স্থাপন করলে বেশ লাভবান হবে তারা। মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপ ব্রাজিলের কাঠের দরজা ও ফার্নিচারের ব্যাপক চাহিদা। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হাসানের মতে, বাংলাদেশ সরকার ব্রাজিল সরকারের সাথে চুক্তি করে এখানে টেকনিক্যাল হ্যান্ড (দক্ষ শ্রমিক) পাঠাতে পারে। এ ছাড়া ডাক্তার, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার মারাত্মক সঙ্কট এখানে। কিছু দিন আগে ব্রাজিল সরকারই ঘোষণা দিয়েছিল তারা বিদেশ থেকে ডাক্তার আনবে। তাই আমি বলবো শুধু মাধ্যপ্রাচ্য ডাক্তার না পাঠিয়ে বাংলাদেশ সরকার যেন ব্রাজিলে ডাক্তার পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। অন্য ব্যবসায়ীদের মতে, ব্রাজিলে ইন্ডিয়ান খাবারের দোকান এবং কাপড়ের দোকান দিয়েও লাভবান হতে পারেন বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা। লেবানিজ আর চাইনিজরা এভাবেই এখানে ব্যবসায় করছে। তা ছাড়া ইউরোপিয়ানরাও দলে দলে আসছে ব্রাজিলে থাকার জন্য। তবে কিছু বাংলাদেশীর কারণে ইমেজ ুণœ হয়েছে বাংলাদেশীদের। এরা কাগজপত্রের আশায় ব্রাজিলের মেয়েকে বিয়ে করে কাগজ পাওয়ার পর সন্তানসহ ওই স্ত্রীকে ত্যাগ করে। কিছু বাংলাদেশী প্যারাগুয়েতে থাকাকালীন প্যারাগুয়েনদের সাথে প্রতারণা করে প্রচুর টাকা মেরে দিয়ে ব্রাজিলে এসেছে। এদের স্বভাব এখানেও বদল হয়নি। আর কিছু বাংলাদেশী নতুন আসা বাংলাদেশীদের কাগজপত্র পাইয়ে দেয়ার নাম করে হাজার হাজার ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ ওই কাগজ পেতে ব্যয় হয় সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ ডলার। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে জয়নাল নামে একজন এখন জেল খাটছে। এসব বিষয় ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে বাংলাদেশীদের ব্যাপারে জানান প্রবাসীরা। এ দিকে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতাও কম পাচ্ছেন তারা, যা অন্য দেশের দূতাবাস দিচ্ছে তাদের নাগরিকদের।

No comments:

Post a Comment