Thursday, July 24, 2014

ফুটপাথ থেকে প্রতিদিন পাঁচ কোটি টাকা চাঁদাবাজি:নয়াদিগন্ত

ফুটপাথের চাঁদার রেট বেড়ে গেছে। ঈদ উপলক্ষে এই বৃদ্ধি। কে বাড়িয়েছে, কারা বাড়িয়েছে তা জানেন না ফুটপাথের নি¤œ আয়ের হকাররা। তবে এখন বাড়তি টাকা দিতে হয়। এরপর রয়েছে ঈদের বকশিশ। ‘তা দিতে হবে চানরাইতে।’ জানালেন মতিঝিলের কয়েকজন হকার। এই টাকা কারা নিচ্ছে, কারা ভাগ পাচ্ছে, কোথায় কোথায় যাচ্ছে; এমন কিছুই জানারও অধিকার নেই হকারদের। দিনে বেচা-বিক্রি করবেন, আর সন্ধ্যা হলে তার একটি অংশ তুলে দিতে হবে লাইনম্যানের হাত
ে। তাদের কাছে এই লাইনম্যান নামক ব্যক্তিটিই পরিচিত। বাকী কাউকে চেনেন না তারা। সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন যারা ফুটপাথ ভাড়া দিয়ে অর্থ আদায় করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা রাজধানীর ফুটপাথের হকারদের কাছ থেকে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর ১৬৩ কিলোমিটার ফুটপাথজুড়ে রয়েছে হকারদের ব্যবসা। এর বাইরেও পাড়া-মহল্লাতেও কিছু হকার আছে। তবে তা হকার সংগঠনগুলোর কাছে তালিকাভুক্ত নয়। গোটা রাজধানীর ১২০ টি ফুটপাথে আড়াই থেকে তিন লাখ হকার ব্যবসা করেন। ঈদসহ বিভিন্ন মওসুমে এই হকারদের সংখ্যা আরো ৪০-৫০ হাজার বেড়ে যায়। এই বিপুল সংখ্যক হকার এখন চাঁদাবাজির টার্গেট। হকার সূত্র জানায়, হকাররা কোনো সময়ই চাঁদাবাজি থেকে রেহাই পান না। তবে ঈদ মওসুমে এই অত্যাচার বেড়ে যায় কয়েকগুণ। দিনে গড়ে ১০০ থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হয় তাদের। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি চাঁদা দিতে হয় রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, দৈনিক বাংলা, বায়তুল মোকাররম, জিপিও, গুলিস্তান, সদরঘাট, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী ও নিউমার্কেট এলাকার হকারদের। সূত্র জানায়, এসব ফুটপাথের হকারদের কাছ থেকে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করা হয়। হকার সূত্র জানায়, প্রতিদিন গড়ে রাজধানীর হকারদের কাছ থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা নেয়া হচ্ছে। হকারদের কষ্টার্জিত টাকা চলে যাচ্ছে চাঁদাবাজদের পকেটে। বায়তুল মোকাররম এলাকার এক হকার বলেন, তারা কয়েকটি গ্রুপকে চাঁদা দেন। কোনো গ্রুপকে ১০ টাকা, কাউকে ২০ টাকা, কাউকে ৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। দিনে তাদেরকে এভাবে ২০০-৩০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। পুলিশ সরাসরি না এলেও পুলিশের নির্ধারিত লাইনম্যান আছে, যারা সন্ধ্যা হলেই প্রতি হকারের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ফুটপাথ চাঁদাবাজ হচ্ছে গুলিস্তান এলাকার সালাম বাহিনী, হিন্দু বাবুল বাহিনী, চিংড়ি বাবুল ও জজ মিয়া বাহিনী, মতিঝিল এলাকার সাইদুল মোল্লা, আজাদ, নূর ইসলাম ও হেলাল, বায়তুল মোকাররম এলাকার কোটন ও সাজু, জুরাইন এলাকার সিরাজ তালুকদার, সেলিম, মৌদুদী নূর ইসলাম, যাত্রাবাড়ী এলাকার তোরাব আলী, নিউমার্কেট এলাকার হোসেন, সাত্তার ও রফিক এবং ফার্মগেট এলাকার কানা দুলাল ও শাহ আলম বাহিনী। এরা হকারদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে তা ভাগবাটোয়ারা করে থাকে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। পুলিশ হকার বসিয়ে অর্থ আদায় করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। হকার সংগঠন সূত্র জানায়, কোনো কোনো এলাকায় ফুটপাথের বাইরেও রাস্তার ওপর হকার বসাচ্ছে পুলিশ ও চাঁদাবাজরা। হকার নেতারা বলেছেন, তিন লাখ হকারের কাছ থেকে গড়ে প্রতিদিন অন্তত পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চাঁদাবাজরা। এ নিয়ে তারা অসংখ্যবার পুলিশ, র‌্যাব এবং মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রীদের সাথে আলোচনা করেছেন। কিন্তু রাজধানীর হকারদের চাঁদাবাজমুক্ত করতে পারেননি। বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম নয়া দিগন্তকে বলেন, ঈদ এলেই চাঁদাবাজি ব্যাপক আকার ধারণ করে। এখন দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চাঁদাবাজরা। সরকার খাজনা নিলে এটা বন্ধ হতে পারে। যারা এই চাঁদাবাজি বন্ধ করাবে তারাই এর সাথে জড়িত। প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া এই চাঁদাবাজি সম্ভব নয়। হকাররা পুলিশের ভয়ে চাঁদা দেয়। পুলিশের ভয় দেখিয়ে এই চাঁদা নেয় দুর্বৃত্তরা। ছিন্নমূল হকার্স সমিতির সভাপতি কামাল সিদ্দিকী বলেন, চাঁদাবাজি চলছে। টাকা দিতে না পারলে হকারদের উচ্ছেদ করা হয়। তিনি বলেন, গড়ে এখন ১০০ টাকা চাঁদা নিচ্ছে। এর মধ্যে উৎপাত শুরু হয়েছে হিজড়াদের। তারা প্রতি দোকান থেকে গড়ে ২০০-৩০০ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, ফুটপাথে চাঁদাবাজির ব্যাপারে কোনো অভিযোগ নেই পুলিশের কাছে। যদি এরূপ অভিযোগ থাকে তবে পুলিশ তা তদন্ত করবে।

No comments:

Post a Comment