রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে ফল পাকানো ও বাজারজাতকরণ রোধে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। এই রায়ে ছয় মাসের মধ্যে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার রোধে নীতিমালা তৈরি এবং দেশের সব সমুদ্র ও স্থল বন্দরে রাসায়নিক পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করতে বলা হয়েছে। ফলে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার রোধে নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ
ের পক্ষে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ১০ মে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ কয়েক দফা নির্দেশনার সঙ্গে রুল দেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ রায় দেন। গতকাল মঙ্গলবার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ পায়। বিষয়টি জানিয়ে গতকাল রিট আবেদনকারীর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করছি, সরকার রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেবে।’ রায়ে বলা হয়, ফল পাকাতে দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের অস্বাস্থ্যকর চর্চার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিবাদীরা ব্যর্থ হয়েছেন। এ অবস্থায় তাঁদের প্রতি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হলো। নির্দেশনায় বলা হয়, ফল পাকাতে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার বন্ধে রায়ের অনুলিপি গ্রহণের ছয় মাসের মধ্যে একটি নীতিমালা তৈরি করতে হবে। বাণিজ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, খাদ্যসচিব ও বিএসটিআইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রতি এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাঠ প্রশাসনে তা ছড়িয়ে দিতেও বলা হয়েছে। দ্বিতীয় নির্দেশনায় বলা হয়, ছয় মাসের মধ্যে দেশের সব স্থল ও সমুদ্রবন্দরে কেমিক্যাল টেস্ট ইউনিট (সিটিইউ) স্থাপন করতে হবে। যাতে আমদানি করা সব ফল রাসায়নিক পরীক্ষা করে অবমুক্ত করা হয় এবং রাসায়নিক পদার্থ মেশানো কোনো ফল যেন দেশের ভেতর প্রবেশ করতে না পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের প্রতি এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজির প্রতি দেওয়া তৃতীয় নির্দেশনায় বলা হয়, আমের মৌসুমে আম পাকানোয় রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার বন্ধে রাজশাহীর ফলবাগান এলাকাসহ দেশের অন্যান্য উৎপাদনকারী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। আরেক নির্দেশনায় বলা হয়, ফলের বাজার ও সংরক্ষণাগার পর্যবেক্ষণ কমিটির মাধ্যমে তদারকি করতে হবে। কেউ যাতে রাসায়নিক পদার্থ মেশানো ফল বিক্রি না করতে পারে, সে জন্য কমিটি প্রতি মাসে সারা দেশের ফল বাজার ও সংরক্ষণাগার তদারকি করবে। পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিএসটিআইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, র্যাবের মহাপরিচালক ও বিএসটিআইয়ের পরিচালকের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়। পঞ্চম নির্দেশনায় ফলে ভেজাল ও রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার রোধে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে সার্কুলার জারি করতে বলা হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র্যাবের মহাপরিচালকের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত বলেছেন, বিষয়টি চলমান পর্যবেক্ষণে থাকবে।
No comments:
Post a Comment