Sunday, August 10, 2014

ইয়াবা পাচারে প্রাডো ভাড়া!:কালের কন্ঠ

মহাসড়কে যখন প্রাডোর মতো গাড়ি শাঁই শাঁই করে ছুটে চলে তখন অন্য গাড়ি দ্রুত পাশ দিয়ে দেয়। সামর্থ্য বিচারে ধনীরাই এসব গাড়ি ব্যবহার করে। এ কারণে পুলিশও পারতপক্ষে পাশে ঘেঁষে না। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রাডো বেছে নিয়েছে ইয়াবা পাচারকারীরা। টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায় ভাড়ায় পাওয়া যাচ্ছে এ গাড়ি। কঙ্বাজারের কলাতলী এলাকার এক মুদি দোকানদার একাই ভাড়া দেন ১০ থেকে ১২টি প্রাডো। এসব গাড়ির মা
লিক কারা সেটা অবশ্য জানা যায়নি। গত শুক্রবার রাত ১টা ১০ মিনিট থেকে ২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে পুলিশ একটি প্রাডো গাড়ি জব্দ করেছে, যার আসনের সঙ্গে লুকিয়ে টেকনাফ থেকে পাঁচ হাজার ৬০০টি ইয়াবা ট্যাবলেট আনা হচ্ছিল। গাড়িটি জব্দ এবং দুজনকে গ্রেপ্তার করার পরই পুলিশ ইয়াবা পাচারের নতুন এ কৌশল সম্পর্কে জানতে পারে। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে শফি সওদাগর নামে ওই মুদি দোকানির কাছ থেকে গাড়ি ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি জানালেও তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারেনি। পুলিশ এখন শফি সওদাগরের বিস্তারিত খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে। এ ছাড়া আবুল কালাম (৪৫) নামের পলাতক আরো একজনের খোঁজ শুরু করেছে। পুলিশ মনে করছে, আবুল কালামের মাধ্যমে শফি সওদাগরকে পাওয়া গেলে এই নেটওয়ার্কের অনেক তথ্য জানা সম্ভব হবে। অভিযানকালে আটক আসামি আবুল হোসেন (২২) টেকনাফ থানার পুরনো পল্লানপাড়ার নূরুল হকের ছেলে এবং নাসির উদ্দিন (২০) কঙ্বাজার সদরের লারপাড়া সিএনজি পাম্প এলাকার বাসিন্দা নূরুল আমিনের ছেলে। পলাতক আবুল কালামসহ এ তিনজনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শাহ মো. আবদুর রউফ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারকৃত দুই যুবক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, কঙ্বাজার সদরের কলাতলী এলাকার মুদি দোকানি শফি সওদাগর নামের এক ব্যক্তি ১০-১২টি প্রাডো গাড়ি ইয়াবা পাচারের জন্য ভাড়া দেন। এসব গাড়িতে করে পাচারকারীরা নির্বিঘ্নে ইয়াবা পাচার করছে।' তিনি বলেন, 'বিলাসবহুল ও দামি জিপ গাড়িগুলোকে পুলিশ সচরাচর সন্দেহ করে না। এ ধরনের দামি গাড়িতে ভিআইপিরা চলাচল করেন। এখন এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে পাচারকারীরা।' জব্দকৃত গাড়ির কাগজপত্রের তথ্য মতে, ২৬৯৭ সিসির গাড়ির মালিকের নাম আলী আকবর। তিনি ঢাকার গুলশান এলাকার বাসিন্দা। গাড়িটি কিভাবে কঙ্বাজারের মুদি দোকানদার শফি সওদাগর পেয়েছেন সেটাও অনুসন্ধান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার শাহ মো. আবদুর রউফ। কোতোয়ালি থানার পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল শনিবার ভোরে একটি প্রাডো নগরের রাইফেল ক্লাব ও শহীদ মিনার এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিল। এতে পুলিশের সন্দেহ হলেও প্রথম তল্লাশি করেনি। পরে সেখানে দায়িত্ব পালনকারী কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক সঞ্জয় সিনহা গাড়িটিকে থামার সংকেত দেন। এ সময় গাড়িতে দুজন অল্প বয়স্ক তরুণকে দেখে পুলিশের সন্দেহ হয় এবং পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। শুরুতে তারা এলোমেলো তথ্য দেওয়া শুরু করলে দুজনকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এতে পুলিশের সন্দেহ আরো বাড়ে। শেষে গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে আসনের সঙ্গে বিশেষভাবে লুকিয়ে রাখা ইয়াবা ট্যাবলেটগুলো উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুই তরুণ জানিয়েছে প্রাডো গাড়িকে পুলিশ সন্দেহ করে না। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী স্থলপথে অভিযান জোরদার করার পর ইয়াবা পাচার কিছুটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পাচারকারীদের কেউ কেউ সাগরপথে ইয়াবা পাচার শুরু করে। একই সঙ্গে সড়কপথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রাডোর মতো দামি গাড়িও ব্যবহার করছে তারা।      

No comments:

Post a Comment