তিন একর জমি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাজউক। তাও জমিটি ‘ডোবা-নালায়’ পরিপূর্ণ। এখনো সেখান দিয়ে বর্ষায় নৌকা চলে। লোকজন সেখান দিয়ে পারাপারও হয়। অনেক দিন এটি ‘জলাভূমি’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। মতিঝিলে অবস্থিত এই জমির মালিক রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। কিন্তু জমিটির অবস্থান ঠিক বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের পাশে। অনেক দিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জমিটি পাওয়ার জন্য রাজউকে
র কাছে ধরনা দিয়ে আসছে। অনেকটা বলারও চেষ্টা হয়েছে, যা মূল্য চান তাই দেয়া হবে। তবুও জমিটি আমাদের চাই। কিন্তু রাজউক এ বিষয়ে নাছোড়বান্দা। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তারা জানিয়ে দিয়েছে, এখানে অর্থ কড়ির প্রশ্ন কেন আসছে। জমিটির মালিক আমরা, তাই এটিকে কোনো অবস্থায় অন্য কাউকে দেয়া হবে না। কারণ এখানে রাজউকের পক্ষ থেকে ‘রিচার্স’ সেন্টার গড়ে তোলা হবে। এই যখন অবস্থা, তখন উপায় না দেখে বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারস্থ হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে। ব্যাংকিং বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি লিখে বলা হয়েছে, রাজউক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। আপনারা যদি গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সাথে আলোচনা করেন তবে হয়তো বিষয়টি একটি সুরাহা হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম সম্প্রতি ব্যাংকিং সচিবের চিঠি লিখে তিন একর জমি প্রাপ্তির বিষয়ে সহায়তা চেয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, জমিটির অবস্থান মতিঝিল থানার অন্তর্গত মতিঝিল মৌজায়। অনেক দিন ধরেই জমি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাজউকের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চাচ্ছে, ওই জায়গায় নতুন ভবন নির্মাণ করতে। এ লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থও বরাদ্দ রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলছে, জায়গার মালিক রাজউক। এখানে ‘রাজউক ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। তাই এ জমি কোনো অবস্থায় অন্য কোনো সংস্থাকে দেয়া হবে না। সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের দক্ষিণ পাশে তিন একর জায়গায় একটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু গত প্রায় ২২ বছরেও রাজউক কর্তৃপক্ষ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেনি। এ বিষয়ে তাদের কোনো উদ্যোগও দৃষ্টিগোচর হয়নি। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ জায়গায় একটি নতুন ভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছর অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন নেয়। কিন্তু ‘গোল’ বাধে এর পরই। প্রাক-অধিগ্রহণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রাজউক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিলে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সরাসরি ‘না’ বলে দেয়। একই সাথে জানিয়ে দেয়, ১৯৯২ সালের পরিকল্পনা অনুযায়ী শিগগিরই এ জমিতে ‘ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’ তৈরি করা হবে। তাই এ জমি কাউকে দেয়া হবে না। এর পরই বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহায়তা কামনা করা হয়। এ সম্পর্কে ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেমের লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, যুগ যুগ ধরে এ জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। অথচ রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংককে ‘অনাপত্তি’ দেয়নি। বলা হয়েছে, কেপিআইভুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অফিস ভবনগুলো একই চত্বরে হওয়া আবশ্যক। ফলে নির্মিতব্য নতুন ভবনের জন্য প্রস্তাবিত জায়গা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো বিকল্প নেই। অন্য দিকে রাজউকের রিসার্চ ইনস্টিটিউট এ জায়গায় না হয়ে উপযুক্ত অন্য স্থানে হলেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দিয়ে পূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তিন একর ডোবা জমি বাংলাদেশ ব্যাংককে দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অনুরোধ করা হয় চিঠিতে। জানা গেছে, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে ব্যাংকিং বিভাগ থেকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অন্য দিকে সরকারি নিয়মানুযায়ী জলাভূমি ভরাট করে কোনো কিছু নির্মাণ করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে।
No comments:
Post a Comment