Tuesday, September 16, 2014

ইসলামি দলগুলো বিরোধী জোটের দিকে তাকিয়ে:নয়াদিগন্ত

ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ইস্যুতে আন্দোলনকারী ইসলামি দলগুলো নতুন করে মাঠে নামার জন্য বিরোধী জোটের আন্দোলনের দিকে তাকিয়ে আছে। ২০ দলীয় জোট মাঠে সক্রিয় হলে পরিস্থিতি বুঝে ইসলামপন্থী দল ও সংগঠনগুলোও মাঠে নামবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর বাধার কারণেই দীর্ঘ দিন ধরে এসব দল ও সংগঠন রাজপথে নামতে পারছে না। বিরোধী জোট মাঠে নামার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে এই দলগুলোও মাঠে নামতে সাহসী হবে এবং সংবিধানে আল্লাহর ওপ
র আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপনের দাবিসহ অন্যান্য দাবিতে সক্রিয় হবে। ২০ দলীয় জোটের বাইরে অবস্থানকারী বিভিন্ন ইসলামি দল ও সংগঠনের নেতাদের সাথে কথা বলে আন্দোলন প্রশ্নে তাদের এই মনোভাব জানা গেছে। কোনো কোনো ইসলামি দলের নেতা আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় হতে না পারার পেছনে সুনির্দিষ্টভাবে তিনটি সমস্যার কথা জানিয়েছেন। প্রথমত, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচণ্ড বাধা, দ্বিতীয়ত, মূল রাজনৈতিক শক্তির সক্রিয়ভাবে মাঠে না নামা, তৃতীয়ত, ইসলামি দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা ও বোঝাপড়ার অভাব। তবে একাধিক ইসলামি সংগঠনের নেতারা জানিেেয়ছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাধা বিঘœকে উপেক্ষা করে ঝুঁকি নিয়েই মাঠে নামার ব্যাপারে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে প্রস্তুতিও চলছে। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ইস্যুগুলোকে নতুন করে সামনে আনার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। ইসলামি দলগুলোর মধ্যে ইস্যুভিত্তিক হলেও ঐক্য গড়ে তোলা যায় কিনা তা নিয়েও আলোচনা চলছে। তবে সব দলের নেতারাই অকপটে জানান, রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে মূল বেনিফিসিয়ারি যারা হবে তারা যদি আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় হতো তাহলে অন্যরা তাদের পথ অনুসরণ করত। সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত ২০১৩ সালের ৫ মে রাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের অবস্থানের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের পর থেকেই ইসলামি দল ও সংগঠনগুলো সরকারের রুদ্ররোষের মধ্যেই রয়েছে। কাউকেই রাজপথে কোনো সভা সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। এমনকি কোনো সংগঠনের নেতা সক্রিয় হলেই তাকে হেফাজতের মামলায় গ্রেফতারে হুলিয়া জারি করা হচ্ছে। নানা সংস্থার মাধ্যমে হুমকি দিয়ে আন্দোলন বিমুখ রাখার সব কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে। গত রমজানে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসলামি দলগুলো মাঠে নামার চেষ্টা করলে পুলিশ কিছুটা নমনীয়তা দেখায়। তখন সব ইসলামি দলই কিছু কর্মসূচি পালন করে; কিন্তু সাথে সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় ইস্যুতে মাঠে নামতে না দেয়ার বিষয়ে নানাভাবে ম্যাসেজ পাঠানো হয় দলগুলোর কাছে। রাজধানীতে সাম্প্রতিক কামরাঙ্গীরচর মাদরাসা কেন্দ্রিক কিছুটা সক্রিয় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের দুইজন নেতার নামে হেফাজতের মামলায় হুলিয়া জারি করা হয় বলে জানা গেছে। চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা এ টি এম হেমায়েত উদ্দিন বলেন, কিভাবে আমরা আন্দোলন করব? একটি কর্মসূচি দিলে পুলিশের অনুমতির জন্য দৌড়াতে দৌড়াতে গলদঘর্ম হতে হয়। তাদের কাছে যেতে যেতে জুতা ক্ষয় হয়ে যায়। তারপরও অনুমতি পাওয়া যায় না। আসে নানা হুমকি-ধমকি। আমরা অতীতেও আন্দোলন করেছি। যারা আজকে পুলিশ দিয়ে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করেছে তারাও আন্দোলন করেছে। তখন কোনো ইস্যুতেই আমরা একটি ব্যানার নিয়ে মাঠে নেমে গেছি। কোনো অনুমতির প্রয়োজন হয়নি। পুলিশ এভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচিকে নিয়ন্ত্রণ করেনি। এখনতো কার্যত পুলিশই দেশ চালাচ্ছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি এমন হয়ে গেছে যে, সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা বাদ দেয়ার মতো মারাত্মক ইস্যুটিও যেন চাপা পড়ে যাচ্ছে। সবাই যেন নীরব। তিনি বলেন, এটা সরকারের পুলিশি দমন নীতির কারণে। আসলে ধর্মীয় এসব ইস্যুতে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যায়নি। বাস্তবতা হচ্ছে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে সবাই তাকিয়ে থাকে। তারা সক্রিয় হলে অন্যরাও তাদের ইস্যু নিয়ে সক্রিয় হতো। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে প্রশাসনিক কঠোরতা, বিরোধী জোট আন্দোলনে না থাকা এবং ইসলামি দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার মনোভাব না থাকাই আন্দোলন প্রশ্নে নীরবতার অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন বরাবরই নিজের সাধ্য সামর্থ্য অনুযায়ী আন্দোলন কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। সামনে বৃহত্তর আন্দোলন কিভাবে গড়ে তোলা যায় তা নিয়েও চিন্তাভাবনা করছে। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, প্রশাসন যেভাবে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করছে এভাবে কোনো আন্দোলন করা যায় না। তিনি বলেন, আমরা ৬ মে একটি কর্মসূচি পালন করার পর আমাদের দুইজন নেতার নামে হেফাজতের একটি মামলার হুলিয়া পাঠানো হয়েছে। মাওলানা হামিদী বলেন, তারপরও বড় বিরোধী দলগুলো যদি আন্দোলনের মাঠে থাকতো তাহলে আমরাও মাঠে নামতে সাহস পেতাম। কিন্তু দেশে মারাত্মক রাজনৈতিক সঙ্কট বিশেষ করে নতুন নির্বাচনের মতো বড় ইস্যু থাকার পর সেটা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধী দল মাঠে নেই। এজন্য আমাদের মতো দলগুলোকে নানা হিসাব-নিকাশ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে’র পর থেকে আলেম উলামাদের আর মাঠেই নামতে দিচ্ছে না পুলিশ প্রশাসন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক হেলাল বলেন, এটাতো সত্য কথা যে, সরকার বিরোধী আন্দোলনকারীদের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। তারা মাঠে নামলে অন্যরাও তাদের ইস্যু নিয়ে মাঠে নামতে সাহস পেতো। তিনি বলেন, এর অর্থ এই নয় যে, আন্দোলন থেমে গেছে। আন্দোলন চলবে। কোনো ইসলামি দলের পক্ষে এককভাবে বড় আন্দোলনে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে ধর্মীয় ইস্যুগুলো সামনে আনার জন্য নানা কর্মসূচি নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ অন্য দলগুলো। সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের জয়েন্ট সেক্রেটারি মাওলানা ড. খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, পুলিশ প্রশাসন যা করছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কোনো ঘরোয়া কর্মসূচি করতে গেলে সেখানেও বাধা আসে। সবাইকে ভয়-ভীতির মধ্যে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। এভাবে সভা সমাবেশ আন্দোলন সংগ্রাম করার মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার থেকে আমরা আর কতদিন বঞ্চিত হবো বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, ধর্মীয় যে ইস্যুগুলো সেগুলোর সাথে এ দেশের ৯০ ভাগ মানুষের ঈমান আকিদার বিষয় জড়িত। এই ইস্যুগুলোর আন্দোলনকে সাময়িকভাবে স্তিমিত করে রাখা গেলেও দমিয়ে রাখা যাবে না। বিভাগীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনকে গোছানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনের ইস্যুগুলো আবার সামনে আসছে। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মইন উদ্দীন রুহী বলেন, হেফাজতের ১৩ দফার আন্দোলন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকবে। তবে এই মুহূর্তে নানা কারণে আন্দোলনে নেই হেফাজত। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে পুলিশি বাধা হচ্ছে প্রধান সমস্যা। যেভাবে হেফাজতের নেতাদের মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার নির্যাতন আতঙ্কের মধ্যে রাখা হয়েছে তাতে মাঠে নেমে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। তিনি বলেন, দেশ জাতির এই দুঃসময়ে যে রাজনৈতিক বড় শক্তি মাঠে সক্রিয় হওয়ার কথা তারাও অনেকটা নীরব। ফলে এর প্রভাব অন্য আন্দোলনকারীদের মধ্যে পড়াই স্বাভাবিক। হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, প্রধান রাজনৈতিক জোটের মাঠে না নামতে পারার বিষয়টি অবশ্যই অন্যদেরও প্রভাবিত করছে। হেফাজতের নেতৃত্বের মধ্যেও সেই চিন্তা কাজ করাই স্বাভাবিক। কারণ হেফাজত এককভাবে মাঠে সক্রিয় হলে তাতে হেফাজতকে এককভাবে টার্গেট করে ঘায়েল করার নানা অপকৌশল প্রয়োগ করা হতে পারে। তারপরও হেফাজতের আন্দোলনের নতুন কর্মসূচির ব্যাপারে নেতাদের মধ্যে চিন্তাভাবনা চলছে। সংগঠনের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন। ঈদের পর সারা দেশে শানে রেসালত সম্মেলন করার ব্যাপারে পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। আশা করছি নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে আমরা আমাদের দাবি নিয়ে আবার মাঠে নামতে পারবো।

No comments:

Post a Comment