একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে মনে করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। তবে প্রত্যাশা পূরণ না হলেও রায় মেনে নিয়েছে ক্ষমতাসীন এ জোট। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরাও আশা করেছিলাম আপিল বিভাগ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া শাস্তি বহাল রাখবেন। কিন্তু আপিল বিভাগ সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন। আদালত যে রায় দিয়েছেন তার প্রতি ১৪ দল শ্রদ্ধাশীল। আদালতের প্রতি আমাদের সম্মান রয়েছে। বৈঠকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে কলুষমুক্ত রাখার জন্য সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে ১৪ দল সমর্থন এবং এ উদ্যোগকে অভিনন্দন জানায়। তিনি জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার প্রতি কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমর্থন দেয়ার কথাও জানান। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নাসিম বলেন, আদালতের রায়ের ব্যাপারে যারা সরকারের সাথে জামায়াতের গোপন সমঝোতার কথা বলছেন তারা জ্ঞানপাপী। সমালোচনাকারীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে নাসিম আরো বলেন, তারা অনেক সময় অনেক কথা বলে। এটা অহেতুক ও অযৌক্তিকভাবে বলে। আদালত স্বাধীন ও নিরপে। তাদের (আদালত) ওপর হস্তপে করা শোভনীয় নয়। ১৪ দল সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের ঘাতকদের বিচার করা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ সরকারের গত মেয়াদে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল। বিচারকার্যক্রম এখনো চলছে। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে নাসিম বলেন, জামায়াত বিভিন্ন সময় হরতালের নামে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়েছে। তাদের হরতালে দেশের মানুষের আগেও যেমন কোনো সমর্থন ছিল না, তেমনি আগামী হরতালেও তারা জনগণের সমর্থন পাবে না। এ ছাড়াও জামায়াত হরতালের নামে দেশে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তা মোকাবেলা করবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধান দেশের স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় অর্জন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বারবার সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়াটাও সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন। সংবাদ সম্মেলনে দুর্গাপূজা ও ঈদ উপলে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়। একই সাথে প্রধানমন্ত্রী ‘শান্তিবৃ’ পুরস্কার ও প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজমের ওপর ইউনেস্কো পুরস্কার পাওয়ায় অভিনন্দন জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, জাসদের কার্যকরী সভাপতি মাঈনুদ্দিন খান বাদল ও সাধারণ সম্পাদক শরিফ নূরুল আম্বিয়া, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, বাংলদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নূরুর রহমান সেলিম, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান, জাতীয় পার্টির (জেপি মঞ্জু) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, গণ-আজাদী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস কে শিকদার প্রমুখ।
No comments:
Post a Comment