Sunday, September 7, 2014

দ্রুত সংশোধন আশা করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম:প্রথম অালো

মুক্তিযুদ্ধের উপপ্রধান সেনাপতি ও সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যান এ কে খন্দকারের লেখা ১৯৭১: ভেতরে বাইরে বইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে যা লিখেছেন, তা বাস্তবতাবিবর্জিত বলে মনে করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম—মুক্তিযুদ্ধ ’৭১। দ্রুত বইটির তথ্য সংশোধন ও পরিমার্জন করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। গতকাল শনিবার সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান কে এম সফিউল্লা
হ, ভাইস চেয়ারম্যান সি আর দত্ত, আবু ওসমান চৌধুরী, সামসুল আলম, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হারুন হাবীবসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ২১ জন সদস্য এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ কে খন্দকারের বহুল বিতর্কিত বইটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতিতে লিপ্ত দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের হাতে বিভ্রান্তি ছড়ানোর নতুন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে বলেও আমাদের আশঙ্কা। আমরা বইটির দ্রুত তথ্য সংশোধন ও পরিমার্জন আশা করছি এবং একই সঙ্গে এ বইয়ের ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম বলছে, ফোরামের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার বীর উত্তমের সদ্য প্রকাশিত ১৯৭১: ভেতরে বাইরে বইটি একান্তভাবেই তাঁর নিজস্ব, যার বক্তব্য ও মন্তব্যের সঙ্গে ফোরামের নীতি, আদর্শ ও ঐতিহাসিক সত্য উপলব্ধির মিল নেই। ফোরামের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৩ বছর পর, মুক্তিযুদ্ধের উপপ্রধান সেনাপতি তাঁর বইতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২৬ মার্চ ১৯৭১-এ প্রদত্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা সম্পর্কে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন, যাকে আমরা চরম দুর্ভাগ্যজনক এবং বস্তুনিষ্ঠ নয় বলে মনে করি। আমরা মনে করি, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা একটি প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক সত্য, যা সারা বিশ্বে সংরক্ষিত আছে। বইটিতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সম্পর্কেও যে দাবি উত্থাপন করেছেন, তা বাস্তবতাবিবর্জিত। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর এমন বিভ্রান্তিকর বক্তব্য আমাদের হতবাক করেছে।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরাচার ও শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাতির ধারাবাহিক রাজনৈতিক সংগ্রাম ও গণমানুষের আত্মত্যাগের চূড়ান্ত পরিণতি, যার মুখ্য নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু এ কে খন্দকার তাঁর বইতে দুর্ভাগ্যজনকভাবে জাতির গৌরবোজ্জ্বল সেই ঘটনাবলির ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সফল রাজনৈতিক নেতৃত্বের যোগ্যতা ও দূরদর্শিতা সম্পর্কেও প্রশ্ন তুলেছেন, যা আমাদের হতবাক করেছে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী যেকোনো ব্যক্তি ও ইতিহাসজ্ঞানসম্পন্ন দেশবাসীর কাছে তাঁর এসব বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত ও গ্রহণযোগ্য নয়।’ বই পোড়ালেন প্রতিমন্ত্রী: প্রথম আলোর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, গতকাল বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কে খন্দকারের ১৯৭১: ভেতরে বাইরে বইটি আগুন দিয়ে পোড়ান তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ। এ সময় তিনি বলেন, ‘ইতিহাস বিকৃতকারীদের আমরা সমাজের সর্বস্তর থেকে প্রতিহত করতে চাই। তাই ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ইতিহাস বিকৃত করা এই বইটি পুড়িয়ে আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’ বিবিসি সংলাপে বিতর্ক: বরগুনা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, বরগুনায় গতকাল ‘বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে অন্যান্য প্রসঙ্গের পাশাপাশি এ কে খন্দকারের বইটি নিয়ে বিতর্ক হয়। এ সময় প্যানেল আলোচকদের মধ্যে তিনজন এবং আলোচনায় অংশ নেওয়া দর্শক-শ্রোতার বেশির ভাগ বলেন, জাতীয় সংসদে সরকারদলীয় সাংসদেরা যেভাবে সমালোচনার ঝড় তুলে বইটিকে নিষিদ্ধের দাবি করেছেন, তা যুক্তিযুক্ত নয়। এতে তথ্যগত ভুল থাকলে তা সংশোধনের পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। তবে প্যানেল আলোচক বরগুনা-১ আসনের সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ বলেন, অবশ্যই এমন একটি বই নিষিদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। পক্ষে-বিপক্ষে বিবৃতি: এ কে খন্দকারের বইটির পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন ৩৯ জন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা বলেন, বইটিতে সাহসিকতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সত্য ইতিহাস প্রকাশ করেছেন এ কে খন্দকার। অথচ সরকার তাঁকে বলছে আইএসআইয়ের এজেন্ট; যা সরকারের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বেরই বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের প্যাডে বিবৃতিদাতারা হলেন হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) আইনুদ্দিন, শমসের মবিন চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত প্রমুখ। আর বইটির বিপক্ষে বিবৃতি দিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় কমিটি। প্রতিবাদ সভা করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড।

No comments:

Post a Comment