বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই চট্টগ্রামে কোটি কোটি টাকা বেসরকারি ভল্টে জমা রেখে ব্যবসা করছে বেসরকারি নিরাপত্তা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সিকিউর সলিউসন্স বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড (গ্রুপ ফোর এস)। নগরীর খুলশীতে ওই প্রতিষ্ঠানের ভল্ট থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা আদান-প্রদান করা হচ্ছে। মাত্র দু’শ গজ দূরে অবস্থিত খুলশী থানা পুলিশকেও তারা অবহিত করছে না। রোববার ভোরে চট্টগ্রামে গ্রুপ ফোরের এই ভল্ট থেকে তিন
কোটি টাকা চুরি হয়। এ সময় চোর তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ভল্টে অবস্থান নিলেও ধরা পড়েনি। টাকাভর্তি বস্তা নিয়ে নির্বিঘ্নে রিকশায় করে চলে যেতেও তার কোনো সমস্যা হয়নি। পরে সিসি ক্যামেরার ছবি দেখে নিরাপত্তাকর্মী শহিদুল হক ওরফে শাওনকে আটক করে র্যাব। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাকা চুরি হওয়ার সময় প্রতিষ্ঠানের ভল্টে ছিল ৫৪ কোটি টাকা। ওইদিন পাহারায় নিয়োজিত ছিল মাত্র দু’জন নিরস্ত্র নিরাপত্তা প্রহরী। আর ছিলেন একজন ফ্রন্ট ডেস্ক অফিসার। খুলশী থানার ওসি মাঈনুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ভল্টে এত টাকা ছিল তা জানা ছিল না। প্রতিষ্ঠানটি কখনও নিরাপত্তার জন্য থানায় আবেদন করেনি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক বেসরকারি ব্যাংক নিরাপত্তা ও সহজ পরিবহনের সুবিধার্থে দীর্ঘদিন ধরে গ্রুপ ফোরের ভল্টে টাকা রেখে আসছে। চুরির ঘটনার সময় যে ৫৪ কোটি টাকা ছিল তার অধিকাংশই বিভিন্ন ব্যাংকের। তবে কোন কোন ব্যাংকের টাকা সেখানে জমা ছিল তার তালিকাটি এখনও পাওয়া যায়নি। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ এবং র্যাবের প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির কোনো অনিয়ম, গাফিলতি আছে কিনা পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম শাখার কর্মকর্তারা জানান, অনুমোদন ছাড়াই গ্রুপ ফোর ভল্ট ব্যবসা পরিচালনা করছে। তবে গ্রুপ ফোরের কর্মকর্তাদের দাবি, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েই তারা ভল্ট ব্যবসা করছেন। তিন কোটি টাকা চুরির ঘটনায় চট্টগ্রাম গ্রুপ ফোরের সিনিয়র ম্যানেজার তারেক মনসুর বাদী হয়ে খুলশী থানায় একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, গ্রুপ ফোর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা-পয়সা নিরাপদে বহন ও রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। সেই সুবাদে কোম্পানির উত্তর খুলশী ৪নং রোডের ওই বাসার নিচতলায় কোম্পানির অফিসের পূর্বপাশের কক্ষে একটি ভল্ট রয়েছে। ৯ অক্টোবর দুপুরে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবু আরমান ভল্টের মধ্যে ৩০ কোটি টাকা রাখেন। এর আগে রাখা বিভিন্ন ব্যাংকের টাকা মিলিয়ে মোট ৫৪ কোটি টাকা ভল্টে ছিল। ১২ অক্টোবর সকালে হিসাব করে দেখা যায়, সেখানে তিন কোটি টাকা কম। ভল্ট খুলে প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরায় টাকা চুরির দৃশ্য দেখা যায়। পরে পুলিশ টাকা উদ্ধারে অভিযানে নামে। মঙ্গলবার ভোরে সদরঘাট সিটি কলেজ মসজিদের মুয়াজ্জিন বশিরুল আলমের শয়নকক্ষ থেকে ২ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার সকালে রাঙ্গামাটি থেকে টাকা চুরির হোতা শাওনকে র্যাব গ্রেফতার করে। বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রামের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ একরাম হোসেন যুগান্তরকে বলেন, গ্র“প ফোর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবন্ধিত কিংবা অনুমোদিত কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। এটি কোম্পানি আইনে নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান। ব্যক্তিগত ভল্টে এ ধরনের টাকা রাখার কোনো এখতিয়ার তাদের নেই। বিষয়টি নিয়মবহির্ভূতভাবে করা হয়েছে। নিজস্ব ভল্টে তারা এভাবে এত বিপুল পরিমাণ টাকা রাখতে পারে না। তবে চট্টগ্রাম গ্র“প ফোরের সিনিয়র ম্যানেজার এবং মামলার বাদী তারেক মনসুর দাবি করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়েই আমরা ভল্ট ব্যবসা করছি। তকে কী পরিমাণ টাকা রাখার অনুমতি রয়েছে তা জানতে চাইলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। সিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ জলিল মণ্ডল জানান, ভল্ট থেকে টাকা চুরির পর প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব সম্পর্কিত বেশকিছু প্রশ্ন উঠেছে। এসব তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সংকটের কারণে এত টাকা চুরি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। ভল্টে এত টাকা রাখার বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন আছে কিনা বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে গঠিত তদন্ত কমিটি।
No comments:
Post a Comment