হরিনাথ দের ছেলে সঙ্কর্ষণ দে লিখেছেন, ‘৪৩ মালাকারটোলা লেন থেকে লোহারপুলের ঢাল, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের দূরত্ব। অথচ কী আশ্চর্য, আমি ১৬ বছরের তরুণ অতিক্রম করতে পারলাম না মাত্র ওইটুকু পথ। সেখানে পরম নির্ভাবনায় শুয়ে আছেন আমার প্রাণপ্রিয় পিতা হরিনাথ দে। শুয়ে আছেন আমারই আশৈশব দেখা আরও নয়টি মুখ। কিন্তু আমি যেতে পারলাম না। কথাটা মনে হলে এখনো আমার বুকের ভেতরে কালবৈশাখীর তাণ্ডবের ভয়ংকর ধ্বনি শুনি।...সে সময় আমাদের এলাকায় বশির ও অতুল নামে দুটো পাগল ছিল। বশির ও অতুল বাবা ও মাকে বাবা-মা বলে ডাকত। এই পাগল দুজন বাবার চিকিৎসা ও স্নেহ ও ভালোবাসায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। বাবার মৃত্যুর পর আমরা যখন পালিয়ে নদীর ওপারে, তখন মা বশিরকে বললেন, তোর বাবাকে লোহারপুলে ফেলে এলাম, ওনার কোনো সৎকার হলো না, তুই তোর বাবার মুখাগ্নি করে আয়। সেই বশিরই বাবার মুখে দিয়াশলাইয়ের আগুন দিয়ে মুখাগ্নি করে।’ (সঙ্কর্ষণ দের রচনা। স্মৃতি ১৯৭১, প্রথম খণ্ড (প্রথম প্রকাশ ১৯৮৮), সম্পাদনা রশীদ হায়দার)। আমৃত্যু শিক্ষাব্রতী ও বিজ্ঞানসাধক হরিনাথ দে ১৯৩৭ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৭ পর্যন্ত ভারতের ইন্দোরে মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল ইনস্টিটিটিউটে পুষ্টি কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ফিরে আসেন মাতৃভূমিতে। ১৯৬০ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে যোগ দেন। আমৃত্যু সেখানেই প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। হরিনাথ দে এককভাবে এবং তাঁর শ্রদ্ধেয় সহকর্মী ড. কুদরাত-এ-খুদার সঙ্গে কাজ করে প্রাণরসায়ন ও পুষ্টি সম্পর্কে বেশ কিছু মৌলিক উদ্ভাবন করেন। নিরীহ, শান্ত ও আত্মনিমগ্ন মানুষ হরিনাথ দের সংগীতের প্রতি ছিল বিশেষ অনুরাগ। চাকরিজীবনের শেষ দিকে তিনি পারিবারিক ব্যবসার প্রতিও মনোযোগী হয়েছিলেন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাতেও তিনি দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। তিনি ধর্ম ও বিজ্ঞানকে সমন্বয় করে কিছু তথ্যগত বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করেন। ঈক্ষণ নামে একটি সাময়িকী সম্পাদনা করতেন তিনি। নাট্যদল প্রতিষ্ঠা ও অভিনয়ের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ১৯১৪ সালের ২১ ডিসেম্বরে হরিনাথ দের জন্ম। তাঁর বাবা যদুনাথ দে। মালাকার টোলা লেনেই হরিনাথ দের আদি নিবাস। ১৯৩১ সালে ঢাকার পোগোজ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৩৩ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএসসি, ১৯৩৬-৩৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নশাস্ত্রে যথাক্রমে বিএসসি, অনার্স ও এমএসসি পাস করেন। সব পরীক্ষায় তিনি কৃতিত্বের পরিচয় দেন। ১৯৪২ সালে পুষ্টি রসায়নে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Headlines from most popular newspapers of Bangladesh. বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামগুলো এক নজরে দেখে নিন।
Thursday, December 18, 2014
ড. হরিনাথ দে:প্রথম অালো
হরিনাথ দের ছেলে সঙ্কর্ষণ দে লিখেছেন, ‘৪৩ মালাকারটোলা লেন থেকে লোহারপুলের ঢাল, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের দূরত্ব। অথচ কী আশ্চর্য, আমি ১৬ বছরের তরুণ অতিক্রম করতে পারলাম না মাত্র ওইটুকু পথ। সেখানে পরম নির্ভাবনায় শুয়ে আছেন আমার প্রাণপ্রিয় পিতা হরিনাথ দে। শুয়ে আছেন আমারই আশৈশব দেখা আরও নয়টি মুখ। কিন্তু আমি যেতে পারলাম না। কথাটা মনে হলে এখনো আমার বুকের ভেতরে কালবৈশাখীর তাণ্ডবের ভয়ংকর ধ্বনি শুনি।...সে সময় আমাদের এলাকায় বশির ও অতুল নামে দুটো পাগল ছিল। বশির ও অতুল বাবা ও মাকে বাবা-মা বলে ডাকত। এই পাগল দুজন বাবার চিকিৎসা ও স্নেহ ও ভালোবাসায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। বাবার মৃত্যুর পর আমরা যখন পালিয়ে নদীর ওপারে, তখন মা বশিরকে বললেন, তোর বাবাকে লোহারপুলে ফেলে এলাম, ওনার কোনো সৎকার হলো না, তুই তোর বাবার মুখাগ্নি করে আয়। সেই বশিরই বাবার মুখে দিয়াশলাইয়ের আগুন দিয়ে মুখাগ্নি করে।’ (সঙ্কর্ষণ দের রচনা। স্মৃতি ১৯৭১, প্রথম খণ্ড (প্রথম প্রকাশ ১৯৮৮), সম্পাদনা রশীদ হায়দার)। আমৃত্যু শিক্ষাব্রতী ও বিজ্ঞানসাধক হরিনাথ দে ১৯৩৭ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৭ পর্যন্ত ভারতের ইন্দোরে মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল ইনস্টিটিটিউটে পুষ্টি কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ফিরে আসেন মাতৃভূমিতে। ১৯৬০ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে যোগ দেন। আমৃত্যু সেখানেই প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। হরিনাথ দে এককভাবে এবং তাঁর শ্রদ্ধেয় সহকর্মী ড. কুদরাত-এ-খুদার সঙ্গে কাজ করে প্রাণরসায়ন ও পুষ্টি সম্পর্কে বেশ কিছু মৌলিক উদ্ভাবন করেন। নিরীহ, শান্ত ও আত্মনিমগ্ন মানুষ হরিনাথ দের সংগীতের প্রতি ছিল বিশেষ অনুরাগ। চাকরিজীবনের শেষ দিকে তিনি পারিবারিক ব্যবসার প্রতিও মনোযোগী হয়েছিলেন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাতেও তিনি দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। তিনি ধর্ম ও বিজ্ঞানকে সমন্বয় করে কিছু তথ্যগত বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করেন। ঈক্ষণ নামে একটি সাময়িকী সম্পাদনা করতেন তিনি। নাট্যদল প্রতিষ্ঠা ও অভিনয়ের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ১৯১৪ সালের ২১ ডিসেম্বরে হরিনাথ দের জন্ম। তাঁর বাবা যদুনাথ দে। মালাকার টোলা লেনেই হরিনাথ দের আদি নিবাস। ১৯৩১ সালে ঢাকার পোগোজ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৩৩ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএসসি, ১৯৩৬-৩৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নশাস্ত্রে যথাক্রমে বিএসসি, অনার্স ও এমএসসি পাস করেন। সব পরীক্ষায় তিনি কৃতিত্বের পরিচয় দেন। ১৯৪২ সালে পুষ্টি রসায়নে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment