![](https://lh3.googleusercontent.com/-YAXbyPmacBM/VKi0_kR09NI/AAAAAAAAGxo/YX3vWeZ5IvU/98977_2-1.jpg)
েবে আনায়াসেই অভিহিত করা যায়। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বকে তছনছ করে দেয়ার ভয়ঙ্কর তৎপরতা দেখা গেছে পুরো বছর। নজিরবিহীন এই সন্ত্রাসে কখনো গাজা, কখনো পাকিস্তান, কখনো মিসর, লিবিয়া, ইরাক ও সিরিয়া আক্রান্ত হয়েছে। আবার আন্তর্জাতিক দরবারে সুনাম অর্জন করতে চলা মালয়েশিয়াকে জব্দ করতে আঘাত হানা হয়েছে এর বেসামরিক এয়ারলাইন্সের ওপর। বছরটি আবার যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা দীর্ঘ বৈরিতা অবসানের বছর হিসেবেও মনে থাকবে। বিদায় বছরে সবচেয়ে নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছে গাজা উপত্যকায়। মানবতার ইতিহাসে এমন হত্যাকাণ্ড আর ঘটেছে কি না সন্দেহ। ৮ জুলাই শুরু হওয়া হামলাটি দীর্ঘ ৫১ দিন স্থায়ী হয়েছিল। বিশ্বের সবচেয়ে বর্ণবাদী দেশ ইসরাইল অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে গাজায় হামলা চালিয়েছিল। শিশু, নারী, বয়োবৃদ্ধ, কাউকেই তারা ছাড় দেয়নি। অন্তত দুই হাজার ২০০ লোক নিহত হয়েছিল ফিলিস্তিনিদের পুরোপুরি শেষ করে দেয়ার মিশনে নেমেছিল ইসরাইলিরা। এই ঘটনায় হামাসের প্রতিরোধও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দৃঢ়প্রত্যয়, সততা আর ল্েযর প্রতি অটল থাকলে সামান্য শক্তি নিয়েও পরাশক্তিকে মোকাবেলা করা যায়, সেটি হামাস-বীরেরা নতুন করে প্রমাণ করেছে। আবার এই ঘটনাই নতুন করে ফিলিস্তিনিদের আন্তর্জাতিক মঞ্চে হাজির করেছে। ওই ঘটনার পর ব্রিটেন, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি পাশ্চাত্য দেশের পার্লামেন্ট ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব পাস করেছে। অর্থাৎ গাজা আক্রমণ ইসরাইলের জন্য হিতে বিপরীত হয়েছে। চলতি বছর পাকিস্তান ছিল আরেকটি সন্ত্রাসপীড়িত এলাকা। অন্তত দু’টি ভয়াবহ আক্রমণে পুরো পাকিস্তান কেঁপে ওঠে। প্রথমটি হয়েছিল জুনে জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আক্রমণ। ওই হামলায় ২১ জন নিহত হয়। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর পেশোয়ারে সামরিক বাহিনী পরিচালিত স্কুলটিতে চরমপন্থীদের হামলা সব কিছুকে ছাপিয়ে যায়। ১৩২ স্কুলছাত্রসহ অন্তত ১৪৮ জন নিহত হয় ওই নৃশংসতায়। এ ধরনের জঘন্য ঘটনা ইতিহাসে খুব কমই ঘটেছে। পাকিস্তান অবশ্য রাজনৈতিক কারণেও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় স্থান পেয়েছে। বিশেষ করে সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন ইমরান খান। ওই আন্দোলনে সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিয়েও সৃষ্টি হয় প্রশ্ন। নওয়াজ মতায় থাকতে পারবেন কি না তা নিয়েও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। ভারতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির অভিষেক সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি ৩৩৬টি আসন পায়। এই ভূমিধস বিজয় দলটিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। আর বিদায়ী কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৫৮টি আসন। এত কম আসন নিয়ে তারা বিরোধী দলে বসার মর্যাদাও হারিয়ে ফেলে। কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদের কশাঘাতে ওই দেশেই সংখ্যালঘুদের পরিণতি কী হয়, প্রতিবেশীদের ওপর কেমন প্রভাব পড়ে, সেটি দেখার বিষয়। এরই মধ্যে ‘ঘর আপসি’ তথা অন্য ধর্মাবলম্বীদের হিন্দুকরণ যে হারে শুরু হয়েছে, তাতে কেউই স্বস্তিতে থাকতে পারছে না। মুসলিম বিশ্বের ইয়েমেন, আফগানিস্তান, মিসর ছিল অস্থির। মিসরে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইয়েমেন চলছে শিয়া-সুন্নি সঙ্ঘাত। আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলেও শান্তি সুদূরপরাহত বলে মনে হচ্ছে। লিবিয়ায় এখন দু’টি সরকার সক্রিয়। ইরাক তিন ভাগে বিভক্ত। দেশ দু’টিতে নিকট ভবিষ্যতে শান্তি ফিরবে কি না কেউ জানে না। পাশ্চাত্যের অনেকে এখন প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন, মোয়াম্মার গাদ্দাফি ও সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করাটা ভালো হয়েছে কি না? গণতন্ত্রের বুলি কপচালেও মার্কিন নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য কল্যাণকর কিছু উপহার দিতে পারেনি। এরই মধ্যে উত্থান হয়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামের এক সংগঠনের। তারা এরই মধ্যে সিরিয়া ও ইরাকের সীমানা মুছে দিয়েছে। পাশ্চাত্যের তরুণদের আকৃষ্ট করার মাধ্যমে তারা তাদের কার্যক্রমে নতুন মাত্রার সৃষ্টি করেছে। এই সংগঠনের অগ্রযাত্রা রুখতে যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু খুব বেশি লাভ এতে হয়েছে বলে মনে হয় না। মুসলিম বিশ্বের কয়েকটি দেশে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। আফগানিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে মতার হস্তান্তর ঘটল। অনেক গোলযোগ, হুমকি, আশঙ্কার মধ্যে আশরাফ গানি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। দেশটির অস্তিত্ব নিয়ে যে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি কিন্তু রয়েই গেছে। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ড. আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ কতদিন এটি মেনে নেবেন, সেই সংশয় থেকেই যাচ্ছে। তা ছাড়া পাশ্চাত্যের প্রতি অন্ধ আনুগত্য দেশবাসী কতদিন গ্রহণ করবে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন রয়ে গেছে। আরব বসন্তের সূতিকাগার তিউনিসিয়ায় ২০১৪ সালে পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়। এতে নিদা তিউনেস ৮৬টি আসন পেয়ে প্রধান দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আগেরবার জয়ী আন নাহদা পার্টি দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও সাবেক একনায়কের সমর্থক জয়ী হয়েছেন। এমনটি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো মিসরের অবস্থা যাতে সেখানে না হয়, তা নিশ্চিত করতে আন নাহদা পার্টি বিপুল ছাড় দেয়। তাদের ল্য ছিল, এখন জটিলতা হলেও শেষ পর্যন্ত যাতে গণতন্ত্র যাতে অব্যাহত থাকে। বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়াতেও ২০১৪ সালে নির্বাচন হয়। তাতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন জোকো উইদোদো। যুক্তরাষ্ট্রেও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ছিল প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্য বিপর্যয়। আইন পরিষদ হাতছাড়া হয়ে গেছে ডেমোক্র্যাটদের। খুব সম্ভবত ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট এক দলের আর আইন পরিষদের উভয় করে প্রাধান্য অন্য দলের হলো। এই ঘটনা আগামী দুই বছর বিশ্বের এক নম্বর দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে অচল করে দেবে বলেই বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করছেন। ওই প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও পড়বে। রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করতে পারে। ইউক্রেন পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার কোনো লণ দেখা যাচ্ছে না। এই সঙ্কট অনেক দিন ভোগাবে বিশ্বকে। বছরের শুরুতে প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলে রাতারাতি অস্থির এলাকায় পরিণত হয় দেশটি। দেশটি নিয়ে আমেরিকা-রাশিয়া ছায়াযুদ্ধ শুরু হয়। ক্রিমিয়া দখল করে নেয়। আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ইবোলা ভাইরাসের বিস্তৃতি ২০১৪ সালে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। বিদায়ী বছরে এটি ছিল অন্যতম ইস্যু। অন্তত সাত হাজার লোক মারা গেছে এই রোগে। অনেকের কাছে এটি ছিল আফ্রিকায় চীনকে প্রতিরোধ করার পাশ্চাত্যের নতুন খেলা। বছরের শুরুর দিকেই চীন যাওয়ার পথে ২২৭ যাত্রী নিয়ে মালয়েশিয়ার একটি বোয়িং বিমান ‘গায়েব’ হয়ে গিয়েছিল। বলা হয়ে থাকে, বর্তমানে বিশেষ করে পরাশক্তিগুলোর নজরদারিব্যবস্থা এত নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ যে, এর জাল গলে একটি মাছিও বের হতে পারে না। কিন্তু আস্ত একটি বিমান কোথায় গেল, কেউ জানল না। আতিপাতি করে প্রায় পুরো বিশ্ব চষে ফেলেও সামান্য সূত্র মিলল না। এর মাত্র কয়েকটি দিন পর ইউক্রেনের আকাশে ওই মালয়েশিয়ান বিমান সংস্থারই আরেকটি বিমান ভূপাতিত হলো। কিভাবে? কারা পেণাস্ত্রটি ছুড়েছিল? কেউ জানে না। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ চলছে। কিন্তু সুস্পষ্ট প্রমাণ কোনো পই দিতে পারছে না। মার্কিন-কিউবা বৈরিতার অবসান চলতি বছরের বিরাট ঘটনা হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সেই ১৯৬১ সাল থেকে তাদের মধ্যে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন ছিল। ১৭ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তার কিউবান প্রতিপক্ষ রাউল ক্যাস্ট্রো সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা ঘোষণা করেন।
No comments:
Post a Comment