রাজধানীতে ফের নৃশংস হত্যার শিকার হয়েছেন একজন ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট। তাঁর নাম ওয়াশিকুর রহমান বাবু (২৭)। গতকাল সোমবার সকালে তেজগাঁওয়ে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে তাঁকে। হত্যা শেষে পালিয়ে যাওয়ার সময় চাপাতিসহ জনতার হাতে ধরা পড়েছে দুই মাদ্রাসাছাত্র। জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার পরিকল্পনাসহ নানা তথ্য দিয়েছে পুলিশের কাছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে ফেরার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি
এলাকায় মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ড. অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে খুন করে দুর্বৃত্তরা। সে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার আগেই একই ধরনের হত্যাকাণ্ডে মুক্তচেতনার মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ ঘটনায় জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতাসহ নানা বিষয় নিয়ে চলছে আলোচনা। অনলাইনেও চলছে বিস্তর সমালোচনা। ওয়াশিকুরের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়নের উত্তর হাজীপুর গ্রামের নোয়াবাড়িতে। মতিঝিলের ফারইস্ট এভিয়েশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তিনি চাকরি করতেন। তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ী দীপিকা মোড়ের কাছে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি। বাবা টিপু সুলতানও তাঁর সঙ্গে থাকতেন। আটক দুই যুবক হলো জিকরুল্লাহ ও আরিফুল। জিকরুল্লাহর বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার গজারিয়ায়। সে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার তাফসির বিষয়ে লেখাপড়া করছে। আরিফুলের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস উপজেলায়। সে রাজধানীর মিরপুর-১-এর দারুল উলুম মাদ্রাসায় পড়ে। ঘনিষ্ঠজন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল আনুমানিক পৌনে ১০টায় বেগুনবাড়ীর বাসা থেকে বের হন ওয়াশিকুর রহমান। গন্তব্য ছিল মতিঝিলের কর্মস্থল। সেখানে ফারইস্ট এভিয়েশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিলেন তিনি। বাসার গলিপথ পেরিয়ে দীপিকা মোড়ের কাছে পৌঁছতেই আকস্মিক হামলার শিকার হন তিনি। একযোগে ধারালো চাপাতি নিয়ে দু-তিনজন হামলে পড়ে তাঁর ওপর। উপর্যুপরি চাপাতির আঘাতে মুহূর্তেই ওয়াশিকুরের মুখমণ্ডল ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রাস্তায় পড়ে যান তিনি। আশপাশের লোকজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই খুনিরা দৌড় শুরু করে। এরপর পথচারীরা দুজনকে আটক করলেও খুনিদের একজন পালিয়ে যায়। যে জায়গাটিতে হামলা হয়েছে তার এক পাশে টেক্সটাইল প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার প্রাচীর। সরু রাস্তাটির অন্য পাশে আরেকটি ভবন। ঘটনাস্থলের একটু দূরে মুদি দোকান ও ফার্মেসি রয়েছে। ঘটনার সময় গলির মুখে অনেক মানুষ থাকলেও রাস্তায় কয়েকজন নারী পথচারী ছাড়া তেমন কেউ ছিল না বলে জানা গেছে। ঘটনার সময় খোকন জেনারেল স্টোর নামের মুদি দোকানে অবস্থান করা জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘কয়েকজন নারী চিৎকার করছিলেন রাস্তায়। খরিদ্দারসহ কয়েকজন মিলে এগিয়ে গেলেই দেখা যায় রক্তাক্ত একজন রাস্তায় পড়ে আছে। আর তিনজন দৌড়ে পালাচ্ছে মূল রাস্তার দিকে।’ হামলাকারীরা পালানোর সময় পেছন থেকে জনতা চিৎকার করলে কয়েকজন হিজড়া দুজনকে জাপটে ধরে ফেলে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। এরপর পথচারী ও বাজারের লোকজন পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এলে আটক যুবকদের তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ব্লগার ওয়াশিকুরের লাশ ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন (বাঁয়ে); ঘটনাস্থল থেকে আটক দুই যুবক, যারা খুনের দায় স্বীকার করে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে। ছবি : কালের কণ্ঠ পুলিশের তেজগাঁও জোনের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, হত্যাকাণ্ডের পর দুজন মাদ্রাসাছাত্রকে জনতা আটক করে পুলিশে দিয়েছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আর ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামত সংগ্রহের পাশাপাশি পুলিশ আটক দুজনের হেফাজত থেকে জব্দ করেছে দুটি রক্তমাখা চাপাতি। ধর্ম নিয়ে লেখালেখির কারণে তৈরি হওয়া বিরোধে ওয়াশিকুরকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে আটক দুজন। তাদের বক্তব্য যাচাই করা হচ্ছে। দীপিকা মোড়ের কাছে একটি বাড়িতে সাবলেট থাকতেন ওয়াশিকুর। বাবা মোটর পার্টস ব্যবসায়ী টিপু সুলতানও থাকতেন তাঁর সঙ্গেই। ঘটনার সময় তিনি গ্রামের বাড়ি ছিলেন। বাড়িটির দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন জাকির হোসেন নামের ব্যবসায়ী। তিন রুমের এ বাসার একটি রুম তিনি সাত হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছিলেন ওয়াশিকুর ও তাঁর বাবার কাছে। জাকির হোসেন জানান, সকালে (গতকাল) ওয়াশিকুর যখন অফিসের জন্য বের হন তখন তাঁর (জাকিরের) ছোট নাতনির সঙ্গে দেখা হয়েছে। ‘অফিসে যাই’ বলে হাত নেড়ে বের হয়ে গেছেন ওয়াশিকুর। এরপর সকাল ১১টার দিকে তিনি জানতে পারেন, সামনের গলিতে খুন হয়েছে। কিন্তু তখনো জানতেন না কে খুন হয়েছে। বেশ পরে জেনেছেন। জাকির হোসেনের ভাষ্য মতে, ওয়াশিকুর খুব চুপচাপ ধরনের ছেলে ছিলেন। তাঁর বাবাও নামাজি লোক। হত্যাকাণ্ডের কোনো কারণ সম্পর্কে ধারণা দিতে পারেননি জাকির। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য মতে, বাসা থেকে বেরিয়ে একটু এগোতেই হামলার মুখে পড়েন ওয়াশিকুর। আনুমানিক পৌনে ১০টার দিকে রাস্তার মধ্যে তিনজন পথ আগলে একযোগে চাপাতি নিয়ে তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। রক্তাক্ত অবস্থায় প্রায় আধাঘণ্টা রাস্তায় পড়ে ছিলেন ওয়াশিকুর। পুলিশ পৌঁছে পকেট থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়ে তাঁর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। ততক্ষণে অবশ্য আশপাশের বাসিন্দারা বুঝতে পেরেছে, এ এলাকায় বসবাসকারী যুবকটিই খুনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু বিস্তারিত পরিচয় জানা না থাকায় পথচারীরা কী করবে বুঝতে পারছিল না। পুলিশ রক্তাক্ত ওয়াশিকুরকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। দুপুরের মধ্যেই বিভিন্ন মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠজনরা হাসপাতালে ছুটে যায়। সেখানেই ময়নাতদন্তের জন্য রাখা ছিল ওয়াশিকুরের লাশ। হাসপাতালে ওয়াশিকুরকে দেখতে এসেছিলেন ফারইস্ট এভিয়েশনের মহাব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান। তিনি জানান, ওয়াশিকুর প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সকালে অফিসে না পৌঁছায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ফোন ধরে হত্যাকাণ্ডের কথা জানায়। ওয়াশিকুরের অনলাইন বন্ধু তামান্না সেতু মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বাবু (ওয়াশিকুরের ডাক নাম) মাকে হারিয়েছে অনেক আগে। ও নিরিবিলি থাকত, ঈদেও বাড়ি যেতে চাইত না। বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেও পছন্দ করত না। কর্মজীবনের বাইরে অনলাইনেই সময় কাটাত বেশি।’ প্রায় অভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও তথ্য জানান উপস্থিত বন্ধুদের অনেকে। খালাতো ভাই ইমরান জানান, ওয়াশিকুর এসএসসি পাস করে ঢাকায় আসেন। তিনি অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট কি না তা তাঁর জানা নেই। এক বছর আগে তাঁর এক খালার মাধ্যমে ফারইস্ট এভিয়েশন নামের একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি পান ওয়াশিকুর। ময়নাতদন্ত : ওয়াশিকুরের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আ খ ম শফীউজ্জামান জানান, ওয়াশিকুরের মুখমণ্ডল ও গলায় পাঁচটি ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। চোখের নিচের আঘাতটিই সবচেয়ে মারাত্মক। সেটি চোখের নিচে দিয়ে কান পর্যন্ত চলে গেছে। ওয়াশিকুর হত্যার ঘটনায় গতকাল রাতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। ওয়াশিকুরের ভগ্নিপতি মনির হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এজাহারে চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলো জিকরুল্লাহ, আরিফুল, আবু তাহের ও পরিকল্পনাকারী মাসুম। গতকাল রাতেই ওয়াশিকুরের লাশ নিয়ে স্বজনদের গ্রামের বাড়িতে ফেরার কথা ছিল। আজ মঙ্গলবার সকালে জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হবে। একই চিত্র বারবার : মুক্তমনা লেখক ও ব্লগারদের ওপর এর আগে যেভাবে হামলা করা হয়েছে, ওয়াশিকুরের ওপরও একই পদ্ধতিতে হামলা হয়েছে। ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, খুনিরা ধারালো চাপাতি দিয়ে মাথা ও মুখমণ্ডল ক্ষতবিক্ষত করে। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। একই পন্থায় হামলা হয়েছিল অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ, ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার, এ কে এম শফিউল ইসলাম লিলন ও ড. অভিজিৎ রায়ের ওপর। প্রায় অভিন্ন হামলার শিকার হয়ে প্রাণে বেঁচে গেছেন ব্লগার আসিফসহ কয়েকজন। ওয়াশিকুর ব্লগার হিসেবে তেমন পরিচিতি না পেলেও অনলাইনে নিয়মিত লেখক ছিলেন। মূলত ফেসবুক ও ব্লগে লেখালেখি করতেন তিনি। ফেসবুকে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা দুই হাজারের অধিক। ধর্ম-সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্নজনের লেখা পর্যালোচনা ও সংরক্ষণের চিত্র মিলেছে তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে। তিনি হামলার শিকার হতে পারেন- এমন আশঙ্কার কথা বন্ধুরা জানালে ওয়াশিকুর বলেছেন, ‘অনলাইনে এ জন্য পরিচিতিমূলক কোনো ছবি রাখিনি।’ কিন্তু ছবি না দিলেও হামলাকারীদের নজর এড়াতে পারেননি ওয়াশিকুর। মর্গে দাঁড়িয়ে এ নিয়ে আক্ষেপ করছিলেন বন্ধুরা। বন্ধু ও স্বজনরা জানিয়েছেন, ওয়াশিকুর তেজগাঁও কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেছেন। এরপর ফারইস্ট এভিয়েশন ট্র্যাভেল এজেন্সিতে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছিলেন। দৈনিক বাংলা মোড়ে রহমান মোটর নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে তাঁদের। ছোট বোন শিমুর বিয়ে হয়ে গেছে। অনেকটা সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত ওয়াশিকুর এ ধরনের হত্যার শিকার হবেন তা কারো কল্পনায়ও ছিল না। তিনি ছিলেন মুক্তমনা : মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন ওয়াশিকুর। অনলাইনে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, সামহোয়ার ইনব্লগ ডটনেটে ‘বোকা মানব’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থাকলেও তিনি মূলত ফেসবুকে কয়েকটি অ্যাকাউন্ট থেকে লেখালেখি করতেন। অভিজিৎ খুন হওয়ার প্রতিবাদে ওয়াশিকুর তাঁর একটি ফেসবুক আইডির প্রোফাইল পিকচার বদলে ফেলেন। ‘আই অ্যাম অভিজিৎ’ লেখা কালো শোকের স্টিকার ব্যবহার করেন প্রোফাইলে। তাঁর প্রোফাইল ব্যানারে এখনো লেখা রয়েছে, ‘আই অ্যাম অভিজিৎ, ওয়ার্ডস ক্যান নট বি কিল্ড’। ওয়াশিকুর গত ২৮ মার্চ রাত সোয়া ৮টার দিকে ফেসবুকে লিখেছিলেন- ‘চেহারা খারাপ+সাদাসিধা= ভাইয়া’। হত্যাকাণ্ডের পর গতকাল তাঁর আইডিতে গিয়ে সর্বশেষ এ স্টেটাসটি দেখা গেছে। তবে এর মাধ্যমে তিনি কী প্রতিক্রিয়া জানাতে চেয়েছেন তা আগের কোনো মন্তব্য দেখে বোঝা যায়নি। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ খুন হওয়ার দিন ওয়াশিকুর ঘটনার প্রতিবাদে ফেসবুকে জানান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। ছোট নোটে তিনি লেখেন, ‘এক থাবা বাবার (২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মৌলবাদী হামলায় নিহত ব্লগার রাজীব হায়দার) মৃত্যু হাজার থাবা বাবা জন্ম দিয়েছে। এক অভিজিৎ রায়ের মৃত্যু লাখো অভিজিৎ রায়কে জন্ম দেবে। কলম চলবে, চলতেই থাকবে।...’ সবশেষ গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে লেখা ফেসবুক নোটেও ওয়াশিকুর প্রকাশ করেন দেশচিন্তা। তিনি লেখেন, ‘আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। মোল্লা স্বাধীন, জঙ্গি স্বাধীন, ছাগু (ধর্মান্ধ) স্বাধীন, মুমিন স্বাধীন, দুর্নীতিবাজ স্বাধীন, রাজনৈতিক নেতা স্বাধীন, পাতি নেতা স্বাধীন, ধর্ষক স্বাধীন, সামরিক বাহিনী স্বাধীন, সুশীল সমাজ স্বাধীন, পিনাকী (ব্লগার পিনাকী ভট্টাচার্য) স্বাধীন, শফি হুজুর স্বাধীন, দলদাস স্বাধীন, গার্মেন্টস মালিক স্বাধীন, লঞ্চ মালিক স্বাধীন...স্বাধীন নয় কৃষক-শ্রমিক, স্বাধীন নয় কথিত সংখ্যালঘু-আদিবাসী, স্বাধীন নয় মুক্তচিন্তার মানুষ, স্বাধীন নয় মানুষ হতে চাওয়া মানুষগুলো...।’ প্রতিক্রিয়া অনলাইনে : ওয়াশিকুর খুন হওয়ার খবরে দুই বাংলার ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। ফেসবুকে তো বটেই, এপার বাংলার সচলায়তন ডটকম ব্লগে এবং ওপার বাংলার ব্লগাজিন গুরুচণ্ডালি ডটকমে প্রতিবাদী পোস্ট লেখা হচ্ছে। ব্লগার ও লেখক ফিরোজ আহমেদ ফেসবুক নোটে লিখেছেন, ‘চাপাতিধারীদের অতর্কিত হামলা আতঙ্কের যে সমাজে আমাদের বসবাস, তাতে নবতর সংযোজন। বিজ্ঞান লেখকদের আড্ডা কি আর হবে এই দেশে? আইনস্টাইনের জন্মদিন পরের বছর কি পালন করা যাবে? শিশু-কিশোরদের মা-বাবারা পাঠাবেন তো সাংস্কৃতিক আয়োজনে? ওয়াশিকুরের হত্যাকাণ্ড এই ভীতির সংস্কৃতিকে আরো পাকাপোক্ত করার শয়তানি আয়োজন।’ কারাভোগকারী ব্লগার সুব্রত শুভ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রাজীব হায়দার খুন হন রাত সাড়ে ৯টার দিকে। খুন হওয়ার সময় আশপাশে কেউ ছিল না। অভিজিৎ রায় খুন হন রাত সোয়া ৯টার দিকে। আশপাশে অসংখ্য মানুষ সেই হত্যার দৃশ্য দেখেছে। ওয়াশিকুর খুন হন সকাল ৯টায়! অফিসে যাওয়ার সময় পাবলিকের সামনে! কী বুঝলেন? কয়দিন পর আনন্দ মিছিল করে গিয়ে হত্যা করে আসবে। একটা অশিক্ষিত উন্মাদ জাতিকে শিক্ষিত না করে হাতে ফেসবুক ও ব্লগ নামের এক বিশাল অস্ত্র তুলে দিলে যা হয়। বান্দরের হাতে একটি একে-৪৭ দিয়ে দেখুন না, একই পরিণতি দেখতে পাবেন। সব কথার শেষ কথা- আর কত রক্ত পেলে তোমাদের অনুভূতির হেফাজত হবে?’ ওয়াশিকুরকে খুনের দায়ে অভিযুক্ত দুই মাদ্রাসাছাত্রকে হিজড়ারা জাপ্টে ধরে পুলিশে দেয়। প্রবাসী মুক্তমনা ব্লগার ফারজানা কবির øিগ্ধা এ প্রসঙ্গে ফেসবুকে লেখেন, ‘আজ হিজড়ারা যে সাহস দেখিয়েছে, সেই সাহস যদি আমাদের থাকত, তাহলে আজ হুমায়ুন আজাদ, অভিজিৎ রায়, রাজীব হায়দার, ওয়াশিকুর বাবুরা খুন হতো না। আমরা সবাই নপুংসক।’ বাড়িতে শোকের মাতম : আমাদের লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, রামগঞ্জের হাজীপুর গ্রামের নোয়া বাড়িতে ওয়াশিকুরের জন্য স্বজনদের শোকের মাতম চলছে। ছেলের মৃত্যুর খবরে বাবা অচেতন হয়ে পড়েছেন। একমাত্র বোন আসরাফী সুলতানা সিমুও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। গতকাল দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আহাজারি চলছে। সিমু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা দুই ভাই-বোন। ২০ বছর আগে মা মারা যান। বাবা আমাদের অনেক কষ্টে মানুষ করেছেন। রবিবারও রাতেও ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমার ভাই জীবনে কোনো অপরাধ করেনি। তাহলে কী কারণে তাঁকে এভাবে খুন করা হলো? গ্রামের লোকজন জানিয়েছে, ছোটবেলা থেকে ওয়াশিকুর খুব মেধাবী ও শাস্ত স্বভাবের ছিল। সে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিল না। এলাকায় তার কোনো শত্রুও ছিল না।
No comments:
Post a Comment