দীর্ঘ ১৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। কিন্তু বিভক্ত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রকে। কারণ ভাগ হওয়ার পর তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও উত্তরে নগর ভবন নির্মাণের জায়গাই খুঁজে পাওয়া যায়নি। আবার অবস্থানগত কারণে দক্ষিণের তুলনায় উত্তরে তেমন কোনো
সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নেই। ১০টি আঞ্চলিক নির্বাহী অফিসকে ভাগ করে দুই পাশে পাঁচটি করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গড়ার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে প্রায় এক লাখ ৫৬ হাজার হোল্ডিং নিয়ে পৃথক হওয়া ডিএনসিসির বাসিন্দারা দুর্ভোগে রয়েছে। সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ, পাঠাগার-গ্রন্থাগার, ব্যায়ামাগার, স্টাফ কোয়ার্টার, ডে-কেয়ার সেন্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার- সবই পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মধ্যে। ফলে উত্তরের লোকজন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আওতার বাইরে রয়ে গেছে। সিটি করপোরেশনের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দাতব্য চিকিৎসালয় দক্ষিণে ১৮, উত্তরে ২, শরীর চর্চাকেন্দ্র দক্ষিণে ১৪, উত্তরে ২, পাঠাগার দক্ষিণে ৭, উত্তরে ২, কমিউনিটি সেন্টার দক্ষিণে ৩১, উত্তরে ৭, কোয়ার্টার দক্ষিণে ৭, উত্তরে ১, মাতৃসদন দক্ষিণে, ৩ উত্তরে শূন্য, নগর হাসপাতাল দক্ষিণে ২, উত্তরে শূন্য, মহিলা কলেজ দক্ষিণে ১, উত্তরে শূন্য, জাদুঘর ও নাট্যমঞ্চ দক্ষিণে ২, উত্তর শূন্য। এ ব্যাপারে ডিএনসিসিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক বলেন, 'এখনো নগর ভবন নির্মাণের জন্য জায়গা পাওয়া যায়নি। এর পরও আমি নির্বাচিত হতে পারলে পর্যায়ক্রমে অন্য সব নাগরিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানও নির্মাণের ব্যবস্থা করব।' উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা নিজামুল হক বলেন, 'উত্তরা এলাকায় প্রায় ১০ লাখ লোকের বাস। অথচ এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য সিটি করপোরেশনের কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেই। নেই কোনো পাঠাগার বা কমিউনিটি সেন্টার। অথচ সিটি করপোরেশন উত্তরা থেকে বিপুল রাজস্ব পাচ্ছে।' একই কথা বলেন মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাসিন্দা সিকদার রিপন হোসেন। তিনি বলেন, বৃহত্তর মিরপুরে ২০ লাখেরও বেশি লোকের বসবাস। সেখানে সিটি করপোরেশনের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নেই বললেই চলে। সিটি করপোরেশনের স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, নাট্যমঞ্চ ও জাদুঘর, শরীর চর্চাকেন্দ্র কিছুই নেই। ঢাকার গোড়া পত্তন সেই বুড়িগঙ্গা নদী ঘিরেই সিটি করপোরেশনের সব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। সময়ের প্রয়োজনে রাজধানীর আয়তন বেড়ে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ হলেও এসব এলাকার জন্য নগর সেবা ব্যবস্থার কথা চিন্তা করা হচ্ছে না। রিপন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'যে কারণেই হোক সিটি করপোরেশন বিভক্ত হওয়ার পর আমরা মিরপুর, উত্তরা, গুলশান, বনানী, মহাখালীসহ নতুন ঢাকার লোকজনের জন্য সেবা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করার কথা। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ আছে বলে মনে হয় না।' ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সিটি করপোরেশন ভাগ করা হলেও সেবার মান বাড়েনি। এর মূল কারণ জনপ্রতিনিধি না থাকা। সীমানা আর দপ্তর ভাগ হওয়ার পরও উত্তর সিটি করপোরেশনে কোনো সেবামূলক প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়নি। ফলে এখানে নগর স্বাস্থ্যসেবা, কমিউনিটি ক্লিনিক, শরীর চর্চাকেন্দ্র, কমিশনার কার্যালয়, ডে-কেয়ার সেন্টার, লাইব্রেরিসহ বেশ কিছু সেবামূলক প্রতিষ্ঠান দ্রুত দরকার। তা না হলে উত্তর সিটি করপোরেশনের নাগরিক সেবা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়বে।' ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বি এম এনামুল হক এ ব্যাপারে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নাগরিক সেবা বাড়ানোর জন্যই সিটি করপোরেশন ভাগ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ডিএনসিসিতে কাজও করা হচ্ছে। কিন্তু খালি জায়গা না পাওয়ায় নতুন কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাচ্ছে না। করপোরেশন ভাগ হওয়ার ফলে দক্ষিণের তুলনায় উত্তরে অনেক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানই নেই। এগুলো আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে, প্রয়োজনীয়তার কথা চিন্তা করে পর্যায়ক্রমে সবই করা হবে।'
No comments:
Post a Comment