Thursday, May 7, 2015

রাজ্যসভায় সর্বসম্মত ভোটে স্থলসীমান্ত বিল পাস:কালের কন্ঠ

ঐতিহাসিক দিন হিসেবে আখ্যা দিয়ে ভারতের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্তচুক্তি বাস্তবায়নে দেশটির ১১৯তম সংবিধান সংশোধনী বিল পাসের ঘোষণা দিয়েছেন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে কইরান। ভারতের ২৪২ আসনের আইনসভার উচ্চকক্ষের ১৮১ সদস্যের এক পক্ষে এমন ভোট দেওয়া এক বিরল ঘটনা। অন্যদিকে এতসংখ্যক সাংসদও কোনো ভোটের সময় উপস্থিত থাকেন না। রাজ্যসভায় ২৩২ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসেন। বাকি ১২ জনকে সিলেক্
ট করা হয় এবং একজন আলংকারিক। ভারত সরকার গত রাতেই বিলটিতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্বাক্ষর নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সেটি লোকসভায় উত্থাপন করবে বলে জানিয়েছে। যেহেতু লোকসভায় বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল, সেহেতু এই বিল পাসের ক্ষেত্রে আর কোনো বাধার মুখে পড়তে হবে না দেশটির সরকারকে। যেহেতু পরশু লোকসভার অধিবেশন শেষ হবে, তাই এ সময়ের মধ্যেই বিলটি পাস হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ২টায় ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ রাজ্যসভায় বিলটি উত্থাপন করেন এবং বলেন, এই সংবিধান সংশোধন করার মধ্য দিয়ে সীমান্তচুক্তি বাস্তবায়ন করা হলে দুই দেশের সম্পর্ক ১৯৭১ সালের মতোই আরো সুদৃঢ় হবে। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে দুই দেশের মধ্যে এই সীমান্তচুক্তি সই করেছিলেন তৎকালীন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এর ৪১ বছর পর ওই চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফর করেন এবং এ বিষয়ে সমঝোতা করেন। এর আগে ৩৫ বছর এই চুক্তি সম্পাদন না হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এ নিয়ে তেমন কোনো জরিপ চালানো হয়নি। রাজ্যসভায় পাস করার আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৩১ জন প্রতিনিধি বিলটির ওপর আলোচনা করেন। প্রায় প্রত্যেকেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে এ বিল উত্থাপনের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং এর পক্ষে মত দেন। এ আলোচনায় নানা রকম দৃশ্যের অবতারণা হয়। সিপিএমের রাজ্যসভা সদস্য ঋতব্রত ভট্টাচার্য আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, ‘আমার শরীরে উদ্বাস্তুর রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। তাই আমি জানি, ওই ছিটমহলের মানুষগুলোর কষ্ট-দুর্দশা। এরই মধ্যে আরেকজন সাংসদ মাইক হাতে নিয়ে গাইতে শুরু করেন ‘শোনো, একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠ...’ গানটি। পিনপতন নীরবতায় ওই গান উপভোগ করেন স্পিকারসহ ১৮১ জন সাংসদ। স্থানীয় সময় বিকেল পৌনে ৫টায় প্রথমে ধ্বনি ভোটে এবং পরে ইন্টিগ্রেট ভোটিং সিস্টেমের মাধ্যমে বিলটি পাস হয়। রাজ্যসভায় উপস্থিত ১৮১ সদস্যের সবাই বিলের পক্ষে থেকে সংবিধান সংশোধনী বিলে ভোট দেন। বিল পাস হওয়ার পর সুষমা স্বরাজ সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং ভারতীয় সংসদীয় ইতিহাসে এটিকে একটি বিরলতম দিন বলে আখ্যায়িত করেন। এর আগে বিল পেশ করার সময় তিনি বলেন, ‘মনমোহন সিং এটি করে গিয়েছেন, আমরা সেটি এগিয়ে নিয়ে গেলাম। ভোট দিতে এদিন রাজ্যসভার কার্যদিবসের দ্বিতীয়ার্ধ্বে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংও উপস্থিত ছিলেন। তাঁকে উদ্দেশ করে সুষমা স্বরাজ বলেন, মনমোহন জিসহ আমরা সবাই ভারতের উন্নয়ন চাইছি। বাংলাদেশের সঙ্গে এই চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বিশ্বের কাছে আমরা যে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে বিশ্বাসী, সেই বার্তা পৌঁছাবে।’ এর আগে রাজ্যসভায় কংগ্রেসের ডেপুটি লিডার গোলাম নবী আজাদ বিজেপিকে এই বিল উত্থাপনের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘মানবিক সংকট সমাধানে আমরা সবাই একমত হয়ে একটি কাজ করতে পারছি, এটাই আনন্দের।’ তিনি বাংলাদেশ সরকারকেও অভিনন্দন জানান। কংগ্রেসের তরফে বিল নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রদীপ ভট্টাচার্য ছিটমহলসহ সীমান্তে নানা ধরনের সমস্যা এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে মিটে যাবে বলে মন্তব্য করেন। বিল উত্থাপনের সময় সুষমা স্বরাজ খানিকটা রসিকতা করে বলেন, ২০১৩ সালে ১৮ ডিসেম্বর যেভাবে বিলটি রাজ্যসভায় তোলা হয়েছিল, সেটি অপরিবর্তিত রেখে আজ তোলা হচ্ছে। তবে কয়েকটি বিষয় পাল্টেছে। এক সেদিনের তারিখ ছিল ১৮ ডিসেম্বর, আজ ৬ মে। ২০১৩ সাল ছিল, এখন ২০১৫ সাল। আগে সালমান খুরশিদ জি ছিলেন, সেখানে আমি এসেছি... এইভাবেই হাস্যোজ্বল সুষমা স্বরাজ ১১৯তম সংবিধান সংশোধনী বিলটি উত্থাপন করেন। বিল নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি বলেন, ‘আমি অবাক হচ্ছি, এ বিষয়ে ৩১ জন বক্তব্য রাখলেন। তাঁদের কেউই এই বিল নিয়ে নেতিবাচক কোনো কথা বলেননি। তবে দুজন দুটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। সে প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, ছিটমহল বিনিময় হলে সীমান্ত সুরক্ষার ক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকির প্রশ্ন নেই। তা ছাড়া দুই দেশের ছিটমহলের মানুষের ওপরই তাঁদের দেশ নির্বাচন করার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যেসব ভারতীয় আছে, তারা ইচ্ছা করলে আসতে পারে। কিন্তু আমার কাছে যত দূর খবর, সেই সংখ্যাটি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজারের বেশি নয়। আর বাকিরা বাংলাদেশেই থাকবে। আবার এই দিকে যেসব বাংলাদেশি রয়েছে, তারা থেকে গেলে তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে তিনি অনুরোধ করেন, যেসব ভারতীয় বাংলাদেশি হিসেবে নাগরিকত্ব পাবে, তাদের যেন বাংলাদেশের অন্য নাগরিকদের মতোই সব ধরনের সুবিধা ও সুযোগ দেওয়া হয়।’ বিল পাস হওয়ার ঘোষণা শোনার পর সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু লবিতে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আজকে যেভাবে একসঙ্গে এই বিলটি পাস হলো এটি নজিরবিহীন হয়ে থাকবে। আগামীতেও জাতীয় ইস্যুতে আমরা সবাই এভাবে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’ ছিটমহল চুক্তি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনী বিল পাস হওয়ায় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ভারত-বাংলাদেশের ছিটমহল বিনিময় নিয়ে আন্দোলনকারীরা।

No comments:

Post a Comment