Thursday, May 7, 2015

দুর্নীতিতে হাবুডুবু দুই সিটি করপোরেশন:কালের কন্ঠ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বেশির ভাগ মার্কেটই হাতছাড়া হওয়ার পথে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আর প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে 'সাজানো মামলার' অজুহাতে বছরের পর বছর ধরে মার্কেটগুলো করপোরেশনের আওতার বাইরে রয়েছে। ফলে রাজস্ব আয়ের এসব বড় উৎসও এখন বন্ধপ্রায়। এ রকম অসংখ্য দুর্নীতি-অনিয়ম ঘটে চলেছে ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি)। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় আমলাদের দি
য়ে সিটি করপোরেশন পরিচালিত হয়ে আসায় দুর্নীতিতে হাবুডুবু খাচ্ছে দুই করপোরেশনই। রাস্তাকে ভূমি দেখিয়ে আর অস্থায়ী বরাদ্দের মধ্যেই বহুতল ভবন নির্মাণের মতো ভয়াবহ অনিয়মও করছেন কর্মকর্তারা। এসব অভিযোগের পাল্লা যখন ভারী হয়ে ওঠে তখন সম্পত্তি বিভাগ থেকে মার্কেটের দায়িত্ব দেওয়া হয় রাজস্ব বিভাগের ওপর। নতুন এ বিভাগ দায়িত্ব পেয়ে দুর্নীতির আরো এক ধাপ এগিয়ে শত শত কোটি টাকার 'ফাইল গায়েব' করার মতো কাজও করছে। হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর নামে এনজিওর মাধ্যমে নগরবাসীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কোটি কোটি টাকার মশার ওষুধ না ছিটিয়ে বিক্রি করে দেওয়ার মতো অভিযোগও পাওয়া গেছে। পরিবহনের নামে জ্বালানি তেল বিক্রি করে সংশ্লিষ্টরা হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। সরকারি স্বার্থ না দেখে ব্যক্তিস্বার্থে কাজ করছে আইন বিভাগ। মার্কেট থেকে পুকুরচুরি : সিটি করপোরেশনের নিজস্ব জমিতে যেকোনো স্থাপনা করার ক্ষেত্রে নিজেরাই নকশা অনুমোদন করে থাকে। এ ক্ষেত্রে করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীকে আইন করে অথরাইজড অফিসারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি করপোরেশনের জমিতে অনুমোদন না নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করে তাহলে ক্ষমতাপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা তা অপসারণ করবেন। আবার অপসারণ করতে না পারলে ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২ ক্ষমতাবলে তিনিই মামলা দায়ের করবেন। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জায়গায় সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনুমোদনবিহীন নীলক্ষেতে বিশাল আকৃতির ভবন নির্মাণ করা হলেও করপোরেশন একেবারেই নিশ্চুপ। আবার করপোরেশনের এখতিয়ারে থাকায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (রাজউক) কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। তবে এ বিষয়ে ভয়াবহতা অনুধাবন করে রাজউক থেকে সংস্থাটির সচিব ডিএসসিসি বরাবর চিঠি দিয়েছেন। এর পরও টনক নড়ছে না ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষের। উল্টো এ অবৈধ মার্কেটের বৈধতা দিতেই বুয়েটের মতামত নিতে যাচ্ছে তারা। এমনকি জালিয়াতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার এ সম্পদের নথি গায়েব হওয়ার পর তা এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের দাবি, জমির মালিকানা বা বরাদ্দ নিয়ে মামলা থাকলেও নকশা অনুমোদনের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আইনি কোনো বাধা নেই। আর যেকোনো কায়দায় যদি এই অবৈধ ভবনটির বৈধতা দেওয়া হয় তাহলে এটি হবে অনিয়মের আরেকটি দৃষ্টান্ত। এ ব্যাপারে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনসার আলী খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিল্ডিং কোড না মেনে কেউ ভবন নির্মাণ করলে এর দায়ভার আমি গ্রহণ করব না। এ ক্ষেত্রে আইন তার আপন গতিতেই চলবে।' অবৈধ ভবন নির্মাণ স্থগিত ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাজউকের পাঠানো চিঠির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এই মার্কেট নির্মাণে নিয়ম অনুসারে জায়গা ছাড়ার পরিবর্তে ফুটপাতের জায়গাও দখল করা হয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মার্কেটটি নির্মাণ করছে লাবলু অ্যান্ড কম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। শাহাদাৎ হোসেন লাবলু যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতা বলে জানা যায়। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এ মার্কেটকে বৈধতা দিতে উঠেপড়ে লেগেছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। ডিএসসিসির তদন্ত কমিটি ভবনটিকে অবৈধ ঘোষণা করলেও অদ্যাবধি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, অবৈধ এ মার্কেটের বৈধতা দিতে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে। তাই এ ভবনের বৈধতা দিতে মতামতের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বুয়েটকে। এ ছাড়া সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, গুলিস্তান ট্রেড সুপার মার্কেট, বঙ্গবাজার মার্কেট, সায়েদাবাদ মার্কেট, বলধা গার্ডেন, পল্টন, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারে দোকান বরাদ্দেও ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। একের পর এক মার্কেট নিয়ে যখন দুর্নীতির অভিযোগ তখন সম্পত্তি বিভাগ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয় রাজস্ব বিভাগে। কিন্তু এ বিভাগে যাওয়ার পর আগে যা ছিল তাও হারিয়েছে সিটি করপোরেশন। সংস্থার উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদারের সঙ্গে যোগসাজশে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মার্কেটের শত শত দোকান বিনা লটারিতে বরাদ্দ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে এই কর্মকর্তা বরাদ্দগ্রহীতাদের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় নাম দিয়ে তা জায়েজ করেছেন। আবার মার্কেট বা ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতির আরেক হোতা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আশিকুর রহমানও রয়েছেন দাপটের সঙ্গে। ডিএসসিসির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্যতম আশিকুর রহমানকে সম্প্রতি নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে পদোন্নতি দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী করা হয়েছে। রাজস্ব আয়ের বড় একটি খাত ডিএসসিসির দোকান বরাদ্দ। প্রতি বর্গফুট পাঁচ টাকা করে দোকানগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন মার্কেটে দোকান মালিক সমিতির লোকেরা করপোরেশনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা দিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে ওই সব দোকানের ভাড়া আদায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এসব মামলায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যে আইন বিভাগ লড়াই করবে, তারাও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সমঝোতা করে বসে আছে। ঋণের বোঝা ৫০০ কোটি টাকা : সব কিছু ঠিক থাকলে আজ বৃহস্পতিবার ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন সাইদ খোকন। কিন্তু নগরবাসীকে নানা সুবিধা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার নিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসে কতটা কাজ করতে পারবেন তিনি, তা এখন দেখার বিষয়। কারণ দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ৫০০ কোটি টাকা ঋণের বোঝা পড়ছে মেয়রের ওপর। কর্মকর্তাদের কমিশন বাণিজ্যে প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে ঋণের বোঝা ভারী হয়েছে। এসব অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে এরই মধ্যে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার আর্থিক সংকটে পড়েছে ডিএসসিসি। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন না হলেও আয়েশিভাবে আছেন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। নাগরিকসেবার মান বৃদ্ধি করতে ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। এর পর থেকেই ভয়াবহ দুর্নীতি ও আর্থিক সংকটে পড়েছে সংস্থা দুটি। আর্থিক জোগান না দিয়েই কমিশন বাণিজ্য করতে বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়ে ঠিকাদারদের সঙ্গে সমঝোতা করেছেন কর্মকর্তারা। পাওনা টাকা আদায়ে নগর ভবনে বেশ কয়েকবার বিক্ষোভ করেছেন ঠিকাদাররা। বিল পরিশোধ না করায় ডিএসসিসির সুইপার কলোনিসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার বিদুৎ সংযোগ কেটে দিয়েছে ডিপিডিসি। ডিএসসিসির প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহাবুব হোসেন বলেন, 'চলতি অর্থবছরের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ডিএসসিসির শুধু ঠিকাদারদের বকেয়া বিলের পরিমাণ ২০৪ কোটি ৯৮ লাখ আট হাজার ২২৩ টাকা। এ মাসে আরো ৫০ কোটি টাকা যোগ হয়েছে। আরো কয়েকটি বিল আসতে পারে। সব মিলে ঠিকাদারদের ৩০০ কোটি টাকার মতো বকেয়া রয়েছে। আগামী জুন মাস থেকে নতুন বেতন-স্কেল চালু হলে প্রতি মাসে আরো সাত কোটি টাকার বোঝা বাড়বে। রাজস্ব বৃদ্ধির নামে লুটপাট : রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি। সব বাড়িতে 'ডোর টু ডোর' হোল্ডিং নম্বর প্লেট স্থাপন কার্যক্রম শুরু করা হলেও তা নিয়ে উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। ডিএসসিসিতে কাজটি বাস্তবায়নকারী কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা এরই মধ্যে ৪০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ৩৬৭ টাকা করে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আবার ডিএনসিসির পক্ষ থেকে হোল্ডিং জরিপ ও নম্বর প্লেট স্থাপনের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রত্যাশা সমাজ উন্নয়ন সংঘ, সুসমাজ ফাউন্ডেশন ও রেডি এবং ডিজিটালটেক নামের সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রম ওয়ার্ড পর্যায়ে শেষ হবে ১৫ দিনের মধ্যে- এমন কথা বলা থাকলেও চার মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও তা শেষ হয়নি। বর্তমানে উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় রেকর্ডেট হোল্ডিং আছে এক লাখ ৫৬ হাজার। নতুন প্রতিটি হোল্ডিং নম্বরের ফি বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩৭০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এ সংস্থার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা লুটপাট করছেন বলে এরই মধ্যে অভিযোগ উঠেছে। রেডি দোকানও বিক্রি হয় না : সিটি করপোরেশনের মার্কেট মানেই সোনার হরিণ- এমন প্রবাদ সবার মুখে মুখে। কিন্তু ২১ বিঘা ১১ কাঠা জমির ওপর ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে মহাখালীতে নির্মিত বহুতল মার্কেটটি নিয়ে বিপাকে পড়েছে ডিএনসিসি। বারবার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ও রাস্তায় বিলবোর্ড টাঙিয়েও ব্যবসায়ীদের ওই মার্কেটের বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে পারছে না তারা। চারবার ১০টি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে এ পর্যন্ত এক হাজার ১৬৩টি দোকানের বিপরীতে ক্রেতা পাওয়া গেছে মাত্র ২৪ জন। এ অবস্থায় মার্কেটটি নিয়ে কী করবেন- কিছুই বুঝতে পারছেন না ডিএনসিসির কর্মকর্তারা। বিক্রি না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নির্মাণ ও বরাদ্দের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অনিয়মকেই দায়ী করছেন। ডিএনসিসির বাজার শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহাখালী মার্কেটে তলাভেদে প্রতি বর্গফুটের দাম ধরা হয়েছে ১৮ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। এত দামের নজির নেই। এ ছাড়া এসব দোকানের বরাদ্দপ্রাপ্তকে প্রতি মাসে ভাড়াও গুনতে হবে। আর আবেদন করার সময় অর্ধেক মূল্য পরিশোধ করতে হবে। ফলে মার্কেট নির্মাণ করা হলেও এখন দোকান বিক্রি করতে পারছেন না তাঁরা। পার্কিংয়ের নামে হরিলুট : রাজধানীর নিউ মার্কেটে ইজারাদারের হিসাবে পার্কিং থেকে টাকা আদায় হয় কমপক্ষে তিন কোটি ৬০ লাখ। সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া হয়েছে মাত্র আট লাখ টাকায়। আর এ শুভঙ্করের ফাঁকি দেওয়ার ক্ষেত্রে নেওয়া হয়েছে অভিনব কৌশল। নিউ মার্কেট ঘিরে চারটি গেট থাকলেও একটি গেট কাগজপত্রে ইজারা দেওয়া হয়েছে। আর অন্য তিনটি গেট ইজারাবহির্ভূত। কিন্তু বছরজুড়েই সিটি করপোরেশনের প্যাডে ইজারাদারের নাম লিখে সব কয়টি অর্থাৎ চারটি গেট থেকেই পার্কিংয়ের নামে টোল আদায় করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, শুধু ১ নম্বর গেটে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ওই স্থানটির ইজারা আদায়ের জন্য দুই থেকে তিনজন হলেই টোল আদায়কারী যথেষ্ট। কিন্তু পুরো এলাকার টোল আদায় করায় এর সঙ্গে কাজ করছেন ১৫ থেকে ২০ জন। এসব টাকা ভাগাভাগি হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে : দুই সিটি করপোরেশনের নানা অনিয়ম নিয়ে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সপ্তম বৈঠকে আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে ছিলেন কয়েকজন সংসদ সদস্য। কমিটির সদস্যরা বলেন, পশুহাটের ইজারামূল্য ঠিকমতো সরকারি কোষাগারে জমা পড়ে না। যা দাম ওঠে তার চেয়ে কম দেখানো হয়। বিলবোর্ড স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছেই পাওনা ৪২ লাখ দুই হাজার ১৩২ কোটি টাকা। বিলবোর্ডে স্থাপন করা বিজ্ঞাপনের ওপর ভ্যাট না দেওয়ায় রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। পশুহাটের খাস আদায় থেকে মূসক ও আয়কর বাবদ ৪০ লাখ ৫৫ হাজার ৯২৫ টাকা ৬০ পয়সা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়নি। এ ছাড়া অস্থায়ী কোরবানি পশুহাটের ইজারামূল্যের ওপর ২০ শতাংশ হারে কর আদায় করেও তা ভূমি রাজস্ব খাতে জমা দেয়নি সংস্থাটি। এতে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ ২৮ হাজার ৩৩১ টাকা ক্ষতি হয়েছে। সিটি করপোরেশন অযৌক্তিক চাহিদাপত্র প্রণয়ন করে বিদ্যমান গাড়ির সংখ্যা অপেক্ষা মাত্রাতিরিক্ত টায়ার-টিউব সরবরাহে এক কোটি ৬৩ লাখ ২৯ হাজার ৬০০ টাকা ব্যয় করায় ডিসিসির অর্থের অপচয় হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে বিধিবহির্ভূতভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কনসালটেন্সি ফি বাবদ ৪০ লাখ টাকা প্রদান, ওসমানী উদ্যানের সার্বিক উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম, গেণ্ডারিয়া শরাফতগঞ্জ কমিউনিটি সেন্টার কমপ্লেক্সের পাইলিং সাব-স্ট্রাকচার কাজে এমএস রডের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্য ঠিকাদারকে প্রদান করায় ৬১ লাখ ১০ হাজার ৫১৪ টাকা ২৮ পয়সা আর্থিক ক্ষতি, এয়ারপোর্ট রোড, রোকেয়া সরণি, লিংক রোড নির্মাণ প্রকল্পের ৩২ কোটি ৮৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যয়ের হিসাব রেকর্ডপত্র অডিটে উপস্থাপন হয়নি, বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের বিপরীতে পাঁচ কোটি ৩১ লাখ ৪৩ হাজার ১৩৮ টাকা ব্যয়ের নথিপত্র ও পরিমাপ বহি অডিটে পেশ করা হয়নি এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়ক ও ড্রেনেজ অবকাঠামো প্রকল্পের চার কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৩৪১ টাকা ব্যয়ের সমর্থনে অডিটে পেশ করা হয়নি বলে মতামত দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে গতকাল রাতে ডিএনসিসির বিদায়ী প্রশাসক ড. রাখাল চন্দ্র বর্মণ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে করপোরেশনের সার্বিক কল্যাণে কাজ করেছি। এ ক্ষেত্রে নির্বাচিত নয় বলে কোনো রকম দুর্নীতির আশ্রয় নিইনি। তবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে নগরবাসী তাদের তৃণমূল পর্যন্ত সেবা পাবে বলে আমরা আশাবাদী।'    

No comments:

Post a Comment