Thursday, May 7, 2015

পথ পাল্টে সোনা পাচার:যুগান্তর

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বদলি হয়েছে সোনা পাচারের রুট। চোরাচালানিরা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে ঢাকার চেয়ে নিরাপদ ভাবছে। ফলে তারা নতুন পথ দিয়ে সোনা পাচার করছে। এখানেও দু’একটি চালান ধরা পড়ছে। কিন্ত বেরিয়ে যাচ্ছে অনেক বেশী সোনা। এখন দিয়ে প্রতিমাসে ৫শ কোটি টাকার সোনা পাচার হচ্ছে। নিরাপদে সোনা পাচারের সঙ্গে বিমান এবং সিভিল এভিয়েশনের অসাধু কর্মচারীদেও একটি চক্র জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
platinum.ritsads.com/ads/server/adserve/www/delivery/ck.php?n=acd94d5f' target='_blank'> অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকার শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হওয়ায় এই অবৈধ ব্যবসার গডফাদাররা তাদের নিরাপদ রুট হিসেবে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে বেছে নিয়েছে। গত সপ্তাহে পরপর দুই দফায় দুটি বড় সোনার চালান আটক করা হয় চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে। সোনা পাচারে সহায়তা দেয়ার জন্য চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। এই চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করছে প্রকৌশল শাখার এয়ারক্রাফট মেকানিক সাত্তার। তার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের দুর্ধর্ষ কেরিয়ার দিয়ে চলছে সোনা পাচার। সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা হল প্রকৌশল শাখার সুইপার হারাধন, এয়ার ক্র্যাফট ক্লিনার গোলাম সরোয়ার, যানবাহন শাখার ক্যাজুয়াল কর্মচারী সরোয়ার কায়নাত মুকুল, এমটি ড্রাইভার পলাশ কান্তি দে অন্যতম। অভিযোগ উঠেছে এরা সোনা পাচার কাজে বিমানের স্পর্শকাতর এলাকায়ও মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করছে। সেখান থেকে সোনার চালান নিয়ে নির্বিঘ্নে বেরিয়ে আসছে। বিমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। চক্রটির সদস্যদের রক্ষায় মরিয়া খোদ সরকারেরই এক প্রভাবশালী নীতিনির্ধারক। সাত্তার ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার জন্য ওই নীতিনির্ধারক বিমান ম্যানেজমেন্টকে লিখিতভাবে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে। ফলে গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক রিপোর্ট এবং বিমানের অভ্যন্তরীণ তদন্তে এদের বিরুদ্ধে সোনা পাচারের অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তাদের চাকরিচ্যুত করা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, মূল গডফাদার সাত্তারকে চট্টগ্রাম থেকে সিলেট স্টেশনে বদলি করলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এরপর সে আদেশ বাতিল করে সাত্তারকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বদলি করা হয়। তাতেও বাধা দেন ওই নীতিনির্ধারক। কিন্তু চট্টগ্রামে সোনা পাচার বেড়ে যাওয়ায় বিমান ম্যানেজমেন্ট মন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করে তাকে শাহজালাল বিমানবন্দরে বদলির আদেশ বহাল রাখেন। এতে ক্ষিপ্ত হন একই ব্যক্তি। এরপর তিনি সাত্তারের বদলি আদেশ ২ মাসের জন্য স্থগিত করতে লিখিতভাবে বিমানকে নির্দেশ দেন। বিমানের পরিচালক প্রকৌশল উইং কমান্ডার (অব.) আসাদুজ্জামান যুগান্তরকে জানান, বদলির আদেশ বাতিল নয়, ওপরের নির্দেশে ২ মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। দুই মাস পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাকে শাহজালালে ফিরে আসতে হবে। সাত্তারের জায়গায় ইতিমধ্যে অন্য একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ফ্লাইট নামার পর গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজে বিমানের প্রকৌশল শাখা ও পরিচ্ছন্নতা শাখার দুর্নীতিবাজ কর্মীরা পেশাগত কাজে ওই উড়োজাহাজে ঢোকেন। এরপর কাজের ফাঁকে তারা উড়োজাহাজ থেকে সোনার চালান সংগ্রহ করে নিরাপত্তা শাখার যোগসাজশে ৪, ৮ ও ৯ নম্বর গেট দিয়ে বের হয়ে আসেন। সেখানে যানবাহন শাখার নির্দিষ্ট কর্মচারীর মাধ্যমে চালান ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে। ছোট-বড় প্রতিটি চালানের জন্য নিরাপত্তা ইনচার্জকে ২ লাখ টাকা দিতে হয়। এছাড়া যানবাহন শাখার ডেলিভারি ইনচার্জকে দিতে হয় ট্রিপপ্রতি ১ লাখ টাকা। আর ফ্লাইটের বিভিন্ন স্থান কেটে ও টয়লেটের নাটবল্টু খুলে সোনার চালান বের করে আনছে বিমানের প্রকৌশল শাখার অসাধু কর্মচারীরা। এজন্য প্রতি চালানে তারা পাচ্ছেন ১ লাখ থেকে গড়ে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। জানা গেছে, প্রতিটি চালান খালাসের পর অধিকাংশ সময় নিরাপত্তা শাখার ইনচার্জ সাত্তারের-পি ৩৫৮৭৭ কক্ষে এই টাকার ভাগবাটোয়ারা হয়। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে চাঞ্চল্যকর সোনার চালান আটকের দুটি ঘটনার বাস্তব অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে। চট্টগ্রাম পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এক চালানে ৪৯ কেজি সোনা আটক করে শুল্ক ও গোয়েন্দা শাখা। এ ঘটনার সঙ্গে ৪ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী (ক্লিনার) সরোয়ার, জীবন, সুখলালের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওইদিন দুবাইয়ের একটি ফ্লাইট থেকে প্রকৌশল শাখার কর্মীদের সহায়তায় এই চার ক্লিনার ৪৯ কেজি সোনা তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেঁধে নেয়। কিন্তু একটি চালান ক্লিনার হারাধনের শরীরে বাঁধার সময় ওই ফ্লাইটের দায়িত্বরত গার্ড মাসুদ হাতেনাতে তাকে ধরে ফেলে। এরপর শুল্ক ও গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তায় বাকি তিনজনকে তল্লাশি করে চারজনের শরীর থেকে ৪৯ কেজি সোনার বার আটক করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই দিন সাত্তারের ডিউটি ছিল না। এরপরও তিনি রহস্যজনক কারণে ফ্লাইটের নিচে অবস্থান করছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি গোপনে সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে আটক চার পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে ছাড়িয়ে নেন আর সোনাকে পরিত্যক্ত ঘোষণার ব্যবস্থা করেন। পুলিশ জানায়, গত বছরের ২০ মার্চ বিমানের একটি ফ্লাইট থেকে ৩০ পিস সোনা সংগ্রহ করে নিচে নেমে আসে পরিচ্ছন্নতা কর্মী সুখলাল ও জীবন। কিন্তু তাদের গতিবিধি দেখে সন্দেহ হওয়ায় সিভিল এভিয়েশনের সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা কর্মকর্তা দু’জনের শরীর তল্লাশি করেন। এ সময় সুখলালের কাছ থেকে ৩০ পিস সোনার বার উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীকালে তার স্বীকারোক্তি মতে জীবনকেও আটক করা হয়। এরপর চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের মহাব্যবস্থাপক তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আটককৃতদের মোবাইল কললিস্ট যাচাই করে দেখা যায় সুখলালের ফোন থেকে সাত্তারের ফোনে এবং হারাধনের মোবাইলের সঙ্গে সোনা পাচার সংক্রান্ত যোগাযোগের অসংখ্য রেকর্ড রয়েছে। জীবনের মোবাইল ফোন থেকেও যানবাহন শাখার ডেলিভারিম্যান মুকুল এবং সহ-মেকানিকের মোবাইলে অসংখ্যবার যোগাযোগ ও সোনা পাচার সংক্রান্ত বিপুল পরিমাণের ক্ষুদে বার্তার (এসএমএস) রেকর্ড পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে পুলিশ রিমান্ডেও আটককৃতরা সোনা পাচারের সঙ্গে সাত্তার, হারাধন এবং মুকুলের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে। চক্রের সদস্য কারা : সোনা চোরাচালান চক্রের সক্রিয় সদস্যরা হলেন বিমানের প্রকৌশল এবং নিরাপত্তা শাখার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এসব শাখার লোকজনই ল্যান্ড করার পর উড়োজাহাজের ভেতর প্রবেশ করতে পারে। সংশ্লিষ্ট শাখার অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিমানের টয়লেট, গালি, এমনকি ইঞ্জিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বক্স কেটে সোনা চোরাচালান করছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে এই শাখার মধ্যে সাত্তার, হারাধন, নির্মল, সরোয়ার, সাহাদাত, গোবিন্দ, বিক্রম, নজরুল, মরন, রবিন, রিয়াজুল কবির অন্যতম। সম্প্রতি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৬০ কেজি সোনাসহ আটক প্রকৌশল শাখার গ্রেফতারকৃত কর্মচারী মোবাইলের কললিস্টেও এদের মোবাইল নম্বর পেয়েছে পুলিশ। বর্তমানে তারা গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তা শাখার ফজলুল হক, মহিম, যানবাহন শাখার সরোয়ার কায়নাত মুকুল, পলাশ কান্তি দে বর্তমানে গোয়েন্দা নজরদারিতে আছে। ইতিমধ্যে তাদের মোবাইল ফোনের কললিস্ট থেকে পুলিশ চোরাচালানের বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্যও পেয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, যানবাহন সুপারভাইজার আরিফ, বিমান কেন্টিনের বয় সেলিম, সোলেমানের মোবাইল নম্বরগুলো থেকেও চোরাচালান সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান হয়েছে। পুলিশ এসব তথ্য খতিয়ে দেখছে। কে এই সাত্তার : ১৯৯৪ সালে সাত্তার ক্লিনার হিসেবে বিমানের প্রকৌশল শাখায় যোগদান করে। মাস্টার্স পাস করেও তিনি নিজেকে এসএসসি পাস দেখিয়ে ওই চাকরি নেন। যোগদানের পরপরই সাত্তার ডিউটির পাশাপাশি চোরাচালানের বিভিন্ন রুট, পদ্ধতি, পরিকল্পনাকারী হিসাবে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেন। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার মনোহরদী থানার হাতিরদিয়া গ্রামে। বর্তমানে তার গ্রামের বাড়িতে প্রায় বিশ হাজার স্কয়ারফিটের পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণাধীন। একদুরীয়া ইউনিয়ন পরিষদ অফিস সংলগ্ন ও হাতিরদিয়া কলেজের গেটের পাশে প্রায় পনের হাজার স্কয়ারফিটের ইউপ্যাটার্ন মার্কেটের নির্মাণ কাজও চলছে। এছাড়া তার নামে-বেনামে ও শ্বশুরবাড়ির আÍীয়স্বজনের নামে বহু জমি বা ফ্ল্যাট রয়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে জিএসই মোড়ে ওয়েল পার্ক হোটেলের একটি ফ্ল্যাট কিনেন সাত্তার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে ওই ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭৫ লাখ টাকা। তার স্ত্রীর নামে পুঁজিবাজারে প্রায় ২-৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে। চোরাচালান রোধে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ১৩নং গেট দিয়ে সিভিল এভিয়েশন বিমান ও অন্যান্য সংস্থার গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখে। এই গেটের সামনে পুলিশি তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সাত্তার কোনো কিছুই তোয়াক্কা করছে না। সে ওই গেট দিয়ে মোটরসাইকেলে আসা-যাওয়া করে। চোরাচালানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সে একবার চাকরি থেকে সাময়িক বহিষ্কার হয়েছিলেন। চট্টগ্রাম স্টেশনের বিমানের নিরাপত্তা ইনচার্জ ফজলুল হককে টেলিফোনে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল সাত্তার। ওই অভিযোগ তদন্ত করে তাকে চট্টগ্রাম থেকে অন্যত্র বদলির সুপারিশ করলেও মোটা অংকের মাসোয়ারা দিয়ে এই আদেশ বাতিল করান। চট্টগ্রামে তার সহকর্মী তৌহিদুল আলমকেও মোবাইলে প্রাণনাশের হুমকি দেয় সাত্তার। এ ঘটনায় তৌহিদ পতেঙ্গা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সোনা পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও বদলি আদেশ বাতিল নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় তদবির প্রসঙ্গে সাত্তার বলেন, সোনা পাচারের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। তার বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগও ভিত্তিহীন। এতসব সম্পদও তার নয়। যা কিছু আছে সব তার পারিবারিক সম্পত্তি। তার মোবাইল ফোনে সোনা পাচারকারীদের ফোন নম্বর ও এসএমএস সম্পর্কে তিনি বলেন, ওরা সবাই তার সহকর্মী। বদলি নিয়ে তদবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। এসবের কিছুই তিনি জানেন না। সোনা ক্যারিয়ার হারাধন : চট্টগ্রাম স্টেশনে কর্মরত বিমানের প্রকৌশল শাখার সুইপার হারাধনের আগের জীবন আর বর্তমান জীবন আকাশ-পাতাল পার্থক্য। হারাধন এক সময় ফটিকছড়ি স্টোরে ৫০০-৬০০ টাকার বেতনের কর্মচারী ছিলেন। সেখান থেকে বিমানের প্রকৌশল শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব পান। তার আনুগত্যে মুগ্ধ হয়ে প্রকৌশলীরা তাকে সুইপার পদে নিয়োগ দেন। অভিযোগ আছে ওই সময়ে তার নিয়োগে চোরাকারাবারিদের বিশেষ সহযোগিতা ছিল। সে বর্তমানে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের চোরাকারবারিদের আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক। একজন ক্যাজুয়াল সুইপার হিসেবে চাকরি করেও ফটিকছড়ির নারায়ণহাটে গ্রামের বাড়িতে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। চট্টগ্রামে বন্দর টিলায় বন্দর ট্রেড সেন্টারে একটি দোকান নিয়েছেন। যার মূল্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা। সম্প্রতি মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে প্রকৌশল শাখায় তার ছোট ভাই রাজিবকেও সুইপার পদে নিয়োগ দেন। এখন রাজিবকে চট্টগ্রামে বদলির জন্য জোর লবিং করছেন বলে জানা গেছে। চট্টগ্রাম বিজয় নগরের বাসা থেকে অফিসে যাতায়াতের জন্য প্রায় তিন লাখ টাকা দামের একটি নতুন মোটরসাইকেল ব্যবহার করে হারাধন। চোরাচালানে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে হারাধন বলেন, তিনি একজন সুইপার। সোনা চোরাকারবারিরা শত শত কোটি টাকার মালিক। সুইপারদের সঙ্গে তাদের কিসের সম্পর্ক? তাদের যোগাযোগ থাকে রাঘববোয়ালদের সঙ্গে। তার সঙ্গে কারও যোগাযোগ নেই, তিনি এসবের সঙ্গে জড়িতও নন। গোলাম সরোয়ার স্মার্ট সোনা চোরাকারবারি : বিমানে কর্মরত শ্রমিক নেতা পিতার সুবাদে এসএসসি পাস করে এয়ার ক্র্যাফট ক্লিনার হিসেবে যোগদান করেন তিনি। পিতার পরিচিতির সুবাদে দিনে দিনে দুর্ধর্ষ সোনা পাচারের ক্যারিয়ার হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন সরোয়ার। আর অল্প সময়ে চোরাকারবারিদের আস্থা অর্জন করেন। বাসা থেকে অফিসে যাওয়া-আসার জন্য সম্প্রতি আড়াই লাখ টাকায় একটি নতুন মোটরসাইকেল ক্রয় করেছেন। এই মোটরসাইকেল দিয়ে সে নির্বিঘ্নে সোনা পাচার করছে। চোরাচালানের সঙ্গে তার জড়িত থাকা প্রসঙ্গে গোলাম সরোয়ার কোনো কথা বলতে রাজি হননি। সরোয়ার কায়নাত মুকুল : ফেনির জয়নাল হাজারীর ক্লাস কমিটির সক্রিয় সদস্য থেকে মুকুল এখন চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের দুর্ধর্ষ সোনা পাচারকারী। ১৯৯৯ সালে ক্যাজুয়াল কর্মচারী হিসেবে তিনি চট্টগ্রামের যানবাহন শাখায় যোগদান করেন। ২০১৩ সাল থেকে সোনা চোরাচালানের ক্যারিয়ার হিসাবে কাজ শুরু করেন। এ কাজ পরিচালনার জন্য চোরাচালান চক্র তাকে একটি মোটরসাইকেলও কিনে দেয়। ক্যাজুয়েল কর্মচারী হিসেবে তাকে দৈনিক ৪৫০ টাকা ভাতা দেয়া হয়। এটাই তার বৈধ আয়। কিন্তু প্রতি মাসে তার আয় কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা। গত বছরের ২০ মার্চ বিমানবন্দরের প্রকৌশল শাখার সুইপার সুকলাল ও জীবনের স্বর্ণসহ আটকের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা থাকায় তাকে বিমানবন্দর থেকে জেলা অফিসে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীকালে মোটা অংকের মাসোয়ারা দিয়ে বিমানবন্দরের যানবাহন শাখায় ফিরে আসেন। মুকুল বলেন বিমানববন্দরে কারা সোনা পাচার করছে সব গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য আছে। ওদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। ওরা ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেন না বলে জানান। এমটি ড্রাইভার পলাশ কান্তি দে : শাহজালালে কর্মরত থাকলেও মোটা অংকের টাকা দিয়ে পলাশ চট্টগ্রামে বদলি হয়ে সোনা চোরাকারবারির ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করেন। গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ থাকায় অল্প সময়ে সে গুরুত্বপূর্ণ ক্যারিয়র হিসেবে আÍপ্রকাশ করে। এ কারণে তার চাহিদা ও রেট অন্যদের তুলনায় বেশি। এপ্রোন এলাকায় গাড়ি চালানোর ডিউটির আড়ালে সে স্বর্ণের চালান ডেলিভারি দিচ্ছে। এপ্রোন এলাকায় গাড়ি চালানোর সীমা সর্বোচ্চ ১-৪ কিমি. হলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সে প্রায়ই ১০-১৫ কিমি. বেগে এই এলাকায় গাড়ি চালায়। জানা গেছে, এপ্রোনের গাড়ি নিয়ে নেভাল, বাটার ফ্লাই পার্ক, এয়ারপোর্টের সামনে বিভিন্ন পয়েন্টে সে স্বর্ণের বার ডেলিভারি দিয়ে থাকে। চকরিয়া থানার ডুলাহাজারায় গ্রামের ৫ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে পলাশ একটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এ বাড়ি নির্মাণে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। গত বছরের ২০ মার্চ স্বর্ণ আটকের ঘটনায় পলাশকেও জেলা অফিসে স্থানান্তর করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে মোটা অংকের টাকা দিয়ে বিমানবন্দরে ফেরত আসে। এ প্রসঙ্গে পলাশ কান্তি দে বলেন, সোনা পাচারের সঙ্গে তার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। সাত্তারকেও তিনি চেনেন না বলে জানান। চট্টগ্রামে তিনি বদলি হতেও চাননি। কর্তৃপক্ষই তাকে চট্টগ্রামে বদলি করেছেন।  

No comments:

Post a Comment