Wednesday, August 6, 2014

গাজায় ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি কার্যকর:নয়াদিগন্ত

মিসরের প্রস্তাব মেনে নিয়ে ইসরাইল ও হামাস গাজায় ৭২ ঘণ্টার মানবিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। একই সাথে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণাও দিয়েছে ইসরাইল। যুদ্ধবিরতি শুরুর আগেই ইসরাইল সেনা প্রত্যাহার শুরু করে। গতকাল ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা হামাসের সব সুড়ঙ্গ ধ্বংস করার পর গাজা থেকে সৈন্যদের সরিয়ে আনা হচ্ছে। তবে এসব সৈন্য সীমান্তে প্রতি
রক্ষামূলক অবস্থানে থাকবে। ইসরাইল ও হামাসের ৭২ ঘণ্টার নতুন যুদ্ধবিরতি কার্যকরের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুন। একই সাথে তিনি ‘সর্বোচ্চ সংযম’ প্রদর্শন ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকরে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। এ দিকে যুদ্ধবিরতি শুরুর পর নিজেদের বিধ্বস্ত বাড়িঘরে ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা। কিন্তু ইসরাইলি হামলায় সেগুলো যেভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে, তাতে সেখানে বসবাসের কোনো উপায়ই নেই। কেবল ইট-পাথরের স্তূপ হয়ে আছে। গত ২৯ দিনের ইসরাইলি আগ্রাসনে ১,৮৬৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেক নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রয়েছেন। আহত হয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি। ইসরাইল বলেছে, হামাসের হামলায় তাদের ৬৭ জন সৈন্য ও তিনজন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। এ দিকে ব্রিটেনের গাজা নীতির প্রতিবাদে গতকাল পদত্যাগ করেছেন দেশটির ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের সিনিয়র মন্ত্রী ব্যারোনেস সাঈদা ওয়ারসি। খবর আলজাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স ও ও রেডিও তেহরানের। মিসর জানিয়েছে, এই যুদ্ধবিরতি গাজায় সঙ্ঘাতের অবসান ও একটি স্থায়ী সমাধানের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। মিসরের মধ্যস্থতাকারী এবং কর্মকর্তারা জানান, তাদের প্রস্তাবিত ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে উভয় প সম্মত হওয়ায় মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে তা কার্যকর হয়েছে। সোমবার দিনভর মিসরে অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় অংশ নেয় ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসলামিক জিহাদসহ বিভিন্ন গ্রুপ। তবে ইসরাইল সেখানে কোনো প্রতিনিধি পাঠায়নি। মিসরে শান্তি আলোচনায় ফিলিস্তিনের মূল দাবির মধ্যে রয়েছে গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনী ও দীর্ঘ দিনের অবরোধ প্রত্যাহার এবং সীমান্তের সংযোগ পয়েন্টগুলো খুলে দিতে হবে। এ দিকে যুদ্ধবিরতির শর্তানুযায়ী, মিসরের রাজধানী কায়রোতে ইসরাইল ও হামাসসহ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে পরো আলোচনা শুরু হওয়ার কথা। হামাস জানিয়েছে, গাজার ওপর আরোপিত অবরোধ প্রত্যাহার না করা হলে তারা কোনো যুদ্ধবিরতি মানবে না। এর জবাবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মুখপাত্র মার্ক রেগেভ আলজাজিরাকে বলেন, ইসরাইল সব বিষয় নিয়েই আলোচনা করতে প্রস্তুত। তবে তাদের কিছু উদ্বেগের বিষয়ও রয়েছে।  সোমবার ইসরাইল মানবিক কারণে সাত ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এরপরই তারা গাজার উত্তরে একটি শরণার্থী শিবিরে গোলাবর্ষণ শুরু করে। রোববার জাতিসঙ্ঘ পরিচালিত স্কুলে হামলার পর জাতিসঙ্ঘ ও ওয়াশিংটনের কড়া সমালোচনার মুখে ইসরাইল সোমবারের ওই সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়। বাড়ি নয়, ধ্বংসস্তূপে ফিরছেন গাজাবাসী : ইসরাইল ও হামাস ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পর গাজাবাসী তাদের বিধ্বস্ত বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। ৮ জুলাই শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলার মুখে গাজার প্রায় তিন লাখ মানুষ জাতিসঙ্ঘ উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হওয়ার পর তারা হাফ ছেড়ে বাঁচেন। তবে এই যুদ্ধবিরতি সত্যিই কার্যকর হবে কিনা সে সংশয় তাদের মধ্যে ছিল। কারণ ইসরাইল আগেও একাধিকবার যুদ্ধবিরতির কথা বললেও অল্প সময়ের মধ্যেই তারা তা লঙ্ঘন করেছিল। যুদ্ধবিরতির আগে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল লার্নার বলেন, হামাসের তৈরি সুড়ঙ্গগুলো ধ্বংসের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। তবে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর অপর সূত্র জানিয়েছে, এখনো হয়তো কিছু সুড়ঙ্গ অচিহ্নিত থেকে যেতে পারে। ভবিষ্যতে সেগুলো ধ্বংস করা হবে। মর্গে জায়গা নেই : মর্গে জায়গা নেই। তাই ৩৪ মাস বয়সী শিশুর দেহ রাখা হয়েছে আইসক্রিম রাখার ফ্রিজারে। ঘটনাটি মৃত্যুপুরী গাজা উপত্যকার রাফার। সোমবার ইসরাইলি হামলায় আহত হয় তিন বছরের শিশু রাঘাদ মাসুদ। রাফা রিফিউজি ক্যাম্পে ডাক্তারেরা তাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে না ফেরার দেশে চলে যায় মাসুদ। গত শুক্রবার, জাতিসঙ্ঘ ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। কিন্তু যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যেই গাজায় বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। ফলে নিহতের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। মৃতদেহ রাখার জায়গা নেই মর্গগুলোতে। আয়রন ডোম ব্যর্থ : ইসরাইলি সেনাবাহিনী তাদের পেণাস্ত্র প্রতিরাব্যবস্থা আয়রন ডোমের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছে। ইসরাইল সেনাবাহিনী বলেছে, গাজা থেকে ছোড়া ১২০টি রকেটের মধ্যে মাত্র আটটি ঠেকাতে পেরেছে আয়রন ডোম পেণাস্ত্র প্রতিরাব্যবস্থা। অর্থাৎ হামাসের ছোড়া রকেটের মাত্র ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ ঠেকাতে পারছে ইসরাইল-মার্কিন যৌথভাবে গড়ে তোলা এই পেণাস্ত্র প্রতিরাব্যবস্থা। ২০১২ সালে নভেম্বরে আয়রন ডোমের যে কর্মদতা ছিল এখনো প্রায় সেই পর্যায়ে রয়ে গেছে। ২০১২ সালের আট দিনের যুদ্ধে আয়রন ডোম মাত্র ৫ শতাংশ রকেট ঠেকাতে পেরেছিল। কিন্তু সে তুলনায় হামাসের রকেটের দতা অনেক বেড়েছে। এমআইটি টেকনোলজি রিভিউ নামের ওয়েবসাইটের একটি গবেষণাধর্মী নিবন্ধে বলা হয়েছে, আয়রন ডোম হামাসের ছোড়া রকেট প্রতিহত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। গাজা যুদ্ধ নিয়ে সঙ্কটে নেতানিয়াহু : হামাস অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ওপর গণহত্যা চালাতে গিয়ে সঙ্কটে পড়েছেন ইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ কথা বলেছেন ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের অন্যতম মুখপাত্র ফাওজি বারহুম। তিনি বলেছেন, নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধ নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। গাজা যুদ্ধ শেষ হলে নেতানিয়াহু আসল সঙ্কটের মুখে পড়বেন বলেও মন্তব্য করেন হামাসের এ নেতা। ল্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেন ফাওজি বারহুম। হামাসের আরেক মুখপাত্র সামি আবু জুহরি বলেছেন, গাজায় পরাজয়ের পর ইসরাইলের জনগণের ভাঙা মনোবল চাঙ্গা করার জন্য নেতানিয়াহু শনিবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। টেলিভিশনে দেয়া ওই ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, অবরুদ্ধ গাজার বিরুদ্ধে যত দিন প্রয়োজন অভিযান অব্যাহত থাকবে। গাজা সীমান্তের টানেলগুলো ধ্বংসের পর ইসরাইল অভিযান সম্পর্কে নতুন করে মূল্যায়ন করবে বলেও তিনি জানান।

No comments:

Post a Comment