Tuesday, October 14, 2014

জিএসপি না থাকলেও রপ্তানি কমেনি যুক্তরাষ্ট্রে:কালের কন্ঠ

জিএসপি স্থগিত হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেনি। বরং কোনো কোনো পণ্যের রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে। ফলে জিএসপি নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নয় সরকার। তা সত্ত্বেও নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় শুনানি শেষে জিএসপি পুনর্বহালের আশায় যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ১৬ দফা কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তৎপর আছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। এরই মধ্যে ঢাকার শ্রম পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য পেতে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে শ্রম কর্মকর্তা নিয়োগ দি
য়েছে ওয়াশিংটন। একই সঙ্গে জিএসপি পুনর্বহালে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে নতুন নতুন শর্ত যোগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এসব শর্তারোপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. শওকত আলী ওয়ারেছি কালের কণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের যেসব পণ্য অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা-জিএসপি পেত, গত বছরের ২৭ জুন তা স্থগিত হওয়ার পরও ওইসব পণ্য রপ্তানির ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। বাংলাদেশের প্রধান কোনো রপ্তানি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে এ সুবিধা পেত না। আগে জিএসপি সুবিধা পাওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে প্লাস্টিক, তামাকজাতীয় পণ্য ও সিরামিকসের রপ্তানি ২০১৩ সালের তুলনায় এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই সময়ে বরং বেড়েছে। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৩.১৯ মিলিয়ন ডলারের। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩.৭৭ মিলিয়ন ডলারে। আর চলতি বছরের জানুয়ারি-জুলাই (সাত মাস) সময়ে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৭.৮০ মিলিয়ন ডলারের। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তামাকজাত পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৪.২১ মিলিয়ন ডলার। ২০১৪ সালের জানুয়ারি-জুলাই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.৩০ ডলারে। এ ছাড়া গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে সিরামিকস রপ্তানি হয়েছিল ৬.৫০ ডলার। এবার সাত মাসে এ পণ্যটির রপ্তানি আয় চার মিলিয়ন ডলার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ জিএসপি সুবিধা পেলেও তা পুনর্বহালের জন্য দেশটির দেওয়া শর্ত বাস্তবায়নে কোনো গাফিলতি নেই। নভেম্বরে এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। তাই এর আগেই শর্তগুলো শতভাগ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো তৎপর। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ১৬ শর্তের বেশির ভাগই পূরণ করেছে সরকার। তা সত্ত্বেও নতুন নতুন শর্তারোপ করছে দেশটি। জিএসপি পুনর্বহাল ও যুক্তরাষ্ট্রের নানা শর্তারোপে ক্ষোভ প্রকাশ করে গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের অতি সামান্য অংশ জিএসপি সুবিধা পেত। তাই এ নিয়ে বেশি চিন্তার কিছু নেই। স্বাভাবিক নিয়মে যা হওয়ার, তাই হবে। এদিকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনের বিপারটিসান পলিসি সেন্টারে (বিপিসি) ‘অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেইফটি’ শিরোনামে আয়োজিত এক কর্মশালায় পোশাক খাতের শ্রমিক অধিকার রক্ষা ও কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কতগুলো সুপারিশ করা হয়েছে। ওই কর্মশালায় জিএসপি সুবিধা স্থগিতকারী সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ-ইউএসটিআর, স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও শ্রম দপ্তরের একাধিক প্রতিনিধি এবং সিনেটর উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় সেখানে ছিলেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনও। ওয়াশিংটন থেকে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর মো. সফিকুল ইসলামের পাঠানো বার্তায় বিপারটিসান পলিসি সেন্টারে আয়োজিত কর্মশালা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ব্যবসা ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা), দুই দেশের মধ্যকার পার্টনারশিপ ডায়ালগ, সিকিউরিটি ডায়ালগ ও সামরিক সহযোগিতা বাড়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিনিধি বলেন, ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম দপ্তরের প্রতিনিধি বেইল বলেন, ঢাকা মিশনে যুক্তরাষ্ট্র অতি সম্প্রতি একজন শ্রম কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। তিনি নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াশিংটনকে প্রতিবেদন পাঠাচ্ছেন। বাংলাদেশ সরকার ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র ২৫ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছে। বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিত করার কারণ তুলে ধরে ইউএসটিআর প্রতিনিধি ওয়েডিং বলেন, জিএসপি পর্যালোচনা নিয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে। তিনি বাংলাদেশে সুস্থ শ্রম চর্চা (ফেয়ার লেবার প্র্যাকটিস) রক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন।  এক বছর ধরে বাংলাদেশে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের বিভিন্ন ধরনের পরিদর্শন ও কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরে সিনেটর মিৎসেল বলেন, সংগঠন দুটি তাদের কার্যক্রম সমাপ্ত করলেও বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন পরিস্থিতি এখনো অনেক পিছিয়ে। তিনি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিদেশি ক্রেতাদের নেওয়া উদ্যোগগুলো আরো এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর মানোন্নয়নের জন্য অর্থের জোগান পেতে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে সিনেটর স্লো বলেন, পোশাক খাতের উন্নয়নে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশের পোশাক খাতকে অবশ্যই টেকসই ও কার্যকর দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগোতে হবে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বলেন, ভবিষ্যতে যাতে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার মতো আর কোনো ঘটনা না ঘটে সে জন্য সরকার পোশাক খাতের উন্নয়নে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়েছে।

No comments:

Post a Comment