রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান। ঐশী দীর্ঘ দিন ধরে ইয়াবা আসক্ত ছিল। উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করত। বন্ধু-বান্ধব নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত বাইরে সময় কাটাত। দুই হাতে টাকা উড়াত নেশা ও আমোদ ফূর্তির জন্য। ঐশীর মা-বাবা এ কাজে বাধা দেয়ায় ঐশী তার বন্ধুদের সাথে পরিকল্পনা করে মা-বাবাকে খুন করে। ঐশী রাজধানীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ত। মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে মা, বাবা খুন হওয়ার ঘটনা এর আগেও কয়েকবার গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। তা ছাড়া সামান্য বকাঝকা ও শাসনের কারণে মা-বাবা অথবা ভাইয়ের ওপর অভিমান করে কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। কিন্তু ১৬ বছরের উচ্ছৃঙ্খল মেয়ের হাতে এভাবে মা-বাবাকে একসাথে খুনের ঘটনায় ভীষণভাবে শঙ্কিত অনেক অভিভাবক। খুনের এ ঘটনায় বিস্ময়ে হতবাক দেশবাসী। তাই অনেক মা-বাবা এখন সন্তানের খারাপ খবর জানার পরও তাকে শাসন করতে ভয় পাচ্ছেন। পাছে কোনো দুর্ঘটনা যদি ঘটে যায়। শাসন করতে গিয়ে যদি আরো খারাপ পরিণতি হয় সে আশঙ্কায় তারা উৎকণ্ঠিত। কেরানীগঞ্জের আফরোজা বেগমের (আসল নাম নয়) কলেজপড়–য়া মেয়ে সাবিনা সারাক্ষণ কানে মোবাইল লাগিয়ে রাখে। কানে ইয়ারফোন আর দুই হাতে মোবাইল নিয়ে বসে বসে বাটন টেপাটেপি; এটাই তার একমাত্র কাজ। মোবাইল আসক্তির কারণে সাবিনা তাদের বাসায় কোনো আত্মীয়স্বজন এলে তাদের সাথে ঠিকমতো কথাবার্তা বলে না। সাবিনাও যদি মা-বাবার সাথে কোনো আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যায় সেখানে গিয়েও কারো সাথে কথা বলে না। সারাক্ষণ মোবাইল কানে লাগিয়ে সে আড়ালে আড়ালে থাকতে পছন্দ করে। নিয়মিত কলেজে গেলেও সে ঠিকমতো পড়াশোনা এবং খাওয়া দাওয়া করে না। আফরোজার আত্মীয়স্বজন সাবিনাকে এক ধরনের অসুস্থ হিসেবে আখ্যায়িত করে তার বিষয়ে সতর্ক হতে পরামর্শ দেন। আফরোজা বেগম নিজেও এটাকে একটি সমস্যা হিসেবে বুঝতে পারে এবং বেশ কয়েকবার মেযের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত যখন তাকে মোবাইল ত্যাগ করার জন্য চাপ দেয়া হয় তখন সাবিনা আত্মহত্যার হুমকি দেয়। এতে ঘাবড়ে যান আফরোজা বেগম। তিনি এ নিয়ে আর ঘাঁটাঘাঁটি করেননি। সাবিনা কোনো মতে এ বছর এইচএসসি পাস করার পর একটি ছেলের হাত ধরে পালিয়ে যায় কয়েক দিন আগে। তখন সবাই অনুধাবন করতে পারে সাবিনা আসলে দিনরাত তার ছেলেবন্ধুর সাথেই কথাবার্তা বলত ও এসএমএস বিনিময় করত। সাবিনা পালিয়ে যাওয়ার খবর শোনার পর আফরোজা বেগম নির্বিকার বসে থাকেন। আত্মীয়স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশীরা পরামর্শ দেন কাজী অফিস, বাস স্টেশন, লঞ্চঘাট ও সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নিতে এবং তাদের ধরে আনতে। কেউ কেউ থানা পুলিশে খবর দেয়ারও পরামর্শ দেন। কিন্তু আফরোজা বেগম তার স্বামীকে কড়া নিষেধ করেন এ রকম কোনো কিছু না করতে। কারণ যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন তাকে ফিরিয়ে এনেও দুর্নাম ঘোচানো যাবে না। তা ছাড়া ধরে এনে জোর করে আটকেও রাখা যাবে না মেয়েকে। কারণ এতেও যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং শেষে সবার জীবন ছারখার হতে পারে। তাই তিনি সব কিছু মেনে নিয়ে একেবারে চুপচাপ থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন। আফরোজা বেগমের মতো অনেক মা-বাবাই আজ এভাবে আতঙ্কিত সন্তান শাসন নিয়ে। দুশ্চিন্তার নাম ইয়াবা : সন্তানের মাদকাসক্ত হয়ে পড়া নিয়ে অভিভাবকের উদ্বেগ দুশ্চিন্তা অনেক আগে থেকেই ছিল। তবে ইয়াবার কারণে তাদের উৎকণ্ঠা অনেক বেড়েছে। একই সাথে নেশা ও যৌনউত্তেজক ট্যাবলেট হিসেবে পরিচিতি পাওয়ায় এটা যুবসমাজের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে এর বিস্তার ঘটে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন হাত বাড়ালেই মেলে মাদক বিশেষ করে ইয়াবা। অভিজাত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, কলেজ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক হারে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়েছে। উচ্চবিত্ত অভিজাত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টার্গেট করে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা; কারণ মাদক গ্রহণে দরকার অর্থ। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে ইয়াবা আসক্ত হয়ে পড়ার খবর এখন গণমাধ্যমের নিয়মিত শিরোনাম। গ্রেফতারকৃত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে মাঝে মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের নাম উঠে আসে। ঢাকায় প্রতিদিন যে লাখ লাখ পিস ইয়াবা বিক্রি হয় তার প্রধান ক্রেতা উঠতি বয়সী ছেলেমেয়ে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে ঢাকার প্রায় সব অলিগলিতে রয়েছে ইয়াবা সরবরাহকারী। ব্যবসায়ীরা প্রথমে তরুণ-তরুণী ছাত্রছাত্রীদের টার্গেট করে ইয়াবা সেবনের জন্য। এরপর সেবনকারীরা একপর্যায়ে হয়ে যায় ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সরবরাহকারী। কারণ এর মাধ্যমে তাদের ইয়াবা সেবনের খরচ উঠে আসে। মাদক নিরাময় কেন্দ্রে আগে হেরোইন আসক্তসহ অন্যান্য মাদকাসক্তকে নিয়ে আসত অভিভাবক। কিন্তু এখন বেশির ভাগ মা-বাবা সেখানে নিয়ে যাচ্ছেন ইয়াবা আসক্তদের। ইয়াবার ছোবলে বিপন্ন হচ্ছে অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর জীবন। বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে পরিবার। মাদক ও যৌনতা অনেক ক্ষেত্রে পরস্পর সম্পৃক্ত। পর্নোগ্রাফি, মাদক, প্রেম, পরকীয়া, ধর্ষণ এসব কারণে সঙ্ঘাত, হানাহানি, গুম খুনের ঘটনা ঘটছে। সন্তান নিখোঁজ, গুম, খুন, অজ্ঞাত পরিচয় লাশ উদ্ধার প্রভৃতি খবরের পেছনে অনেক সময় থাকে মাদকের ছোবল। এসবের ফলে এমন সব জটিল সমস্যায় জড়িয়ে তরুণ-তরুণী ও শিক্ষার্থীরা এমনসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্ম দিচ্ছে যাতে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় মানুষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইয়াবার বিস্তার এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এ ব্যবসায় ছড়িয়ে পড়া এবং ধরা পড়ার খবরে কোনো অভিভাবকই এখন আর এই ভয়ানক ছোবল থেকে সন্তানকে নিরাপদ ভাবতে পারছেন না। কখন কোন সহপাঠীর মাধ্যমে তার সন্তানের হাতেও চলে আসে ইয়াবা এ দুর্ভাবনায় অস্থির অভিভাবকেরা। গত ৪ আগস্ট এক হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়েছেন চট্টগ্রামের দুই কলেজছাত্র। তারা বাকলিয়া থানা পুলিশকে জানিয়েছেন তাদের অর্ধশতাধিক বন্ধু ও বান্ধবী এ নেশায় আসক্ত। লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইয়াবা এনে বিক্রি করছে। গ্রেফতার হওয়া দু’জন হলেন চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মিনহাজুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম মডেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আতিকুল ইসলাম তারেক। মাদক শুধু শহরের ঐশীদের ধ্বংস করছে না বরং এর আগ্রাসন ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলা এমনকি গ্রামপর্যায়ে। উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা ও বিদ্যুতের কারণে গ্রামের যেসব হাটবাজারে শহরের ছোঁয়া লেগেছে সেখানেও ছড়িয়ে পড়েছে মাদকের আগ্রাসন। ঢাকার আশপাশের কোনো কোনো শহর উপশহর ভাসছে মাদকের জোয়ারে। ফলে উপজেলা ও গ্রামপর্যায়ের স্কুল-কলেজপড়–য়া সন্তানেরাও জড়িয়ে পড়ছে এ মাদক নেশায়। অভিভাবকেরা তাই কোনো সন্তান এসএসসি পাসের পর আর তাকে গ্রামে রাখতে সাহস করছেন না। বিশেষ করে ঢাকার আশপাশে নারায়ণগঞ্জসহ অনেক এলাকায় মাদকের ব্যাপক বিস্তারের কারণে এলাকায় ছেলেমেয়ে রেখে পড়াতে সাহস করছেন না অনেকে। কিন্তু ঢাকায় পাঠালেও যে নিরাপদ থাকবে তারও নিশ্চয়তা নেই। অনেক অভিভাবক তাই দিশাহীন সন্তানের দুর্ভাবনায়। তাদের আকুতি আমরা এখন কী করতে পারি? তাদের প্রশ্ন কোথায় রেখে কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করালে সন্তানটি নিরাপদে লেখাপড়া শেষ করে বের হতে পারবে এবং তারাও একটু স্বস্তিতে থাকতে পারবেন।
Headlines from most popular newspapers of Bangladesh. বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামগুলো এক নজরে দেখে নিন।
Friday, November 28, 2014
সন্তান শাসনেও শঙ্কা-৫:নয়াদিগন্ত
রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান। ঐশী দীর্ঘ দিন ধরে ইয়াবা আসক্ত ছিল। উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করত। বন্ধু-বান্ধব নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত বাইরে সময় কাটাত। দুই হাতে টাকা উড়াত নেশা ও আমোদ ফূর্তির জন্য। ঐশীর মা-বাবা এ কাজে বাধা দেয়ায় ঐশী তার বন্ধুদের সাথে পরিকল্পনা করে মা-বাবাকে খুন করে। ঐশী রাজধানীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ত। মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে মা, বাবা খুন হওয়ার ঘটনা এর আগেও কয়েকবার গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। তা ছাড়া সামান্য বকাঝকা ও শাসনের কারণে মা-বাবা অথবা ভাইয়ের ওপর অভিমান করে কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। কিন্তু ১৬ বছরের উচ্ছৃঙ্খল মেয়ের হাতে এভাবে মা-বাবাকে একসাথে খুনের ঘটনায় ভীষণভাবে শঙ্কিত অনেক অভিভাবক। খুনের এ ঘটনায় বিস্ময়ে হতবাক দেশবাসী। তাই অনেক মা-বাবা এখন সন্তানের খারাপ খবর জানার পরও তাকে শাসন করতে ভয় পাচ্ছেন। পাছে কোনো দুর্ঘটনা যদি ঘটে যায়। শাসন করতে গিয়ে যদি আরো খারাপ পরিণতি হয় সে আশঙ্কায় তারা উৎকণ্ঠিত। কেরানীগঞ্জের আফরোজা বেগমের (আসল নাম নয়) কলেজপড়–য়া মেয়ে সাবিনা সারাক্ষণ কানে মোবাইল লাগিয়ে রাখে। কানে ইয়ারফোন আর দুই হাতে মোবাইল নিয়ে বসে বসে বাটন টেপাটেপি; এটাই তার একমাত্র কাজ। মোবাইল আসক্তির কারণে সাবিনা তাদের বাসায় কোনো আত্মীয়স্বজন এলে তাদের সাথে ঠিকমতো কথাবার্তা বলে না। সাবিনাও যদি মা-বাবার সাথে কোনো আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যায় সেখানে গিয়েও কারো সাথে কথা বলে না। সারাক্ষণ মোবাইল কানে লাগিয়ে সে আড়ালে আড়ালে থাকতে পছন্দ করে। নিয়মিত কলেজে গেলেও সে ঠিকমতো পড়াশোনা এবং খাওয়া দাওয়া করে না। আফরোজার আত্মীয়স্বজন সাবিনাকে এক ধরনের অসুস্থ হিসেবে আখ্যায়িত করে তার বিষয়ে সতর্ক হতে পরামর্শ দেন। আফরোজা বেগম নিজেও এটাকে একটি সমস্যা হিসেবে বুঝতে পারে এবং বেশ কয়েকবার মেযের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত যখন তাকে মোবাইল ত্যাগ করার জন্য চাপ দেয়া হয় তখন সাবিনা আত্মহত্যার হুমকি দেয়। এতে ঘাবড়ে যান আফরোজা বেগম। তিনি এ নিয়ে আর ঘাঁটাঘাঁটি করেননি। সাবিনা কোনো মতে এ বছর এইচএসসি পাস করার পর একটি ছেলের হাত ধরে পালিয়ে যায় কয়েক দিন আগে। তখন সবাই অনুধাবন করতে পারে সাবিনা আসলে দিনরাত তার ছেলেবন্ধুর সাথেই কথাবার্তা বলত ও এসএমএস বিনিময় করত। সাবিনা পালিয়ে যাওয়ার খবর শোনার পর আফরোজা বেগম নির্বিকার বসে থাকেন। আত্মীয়স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশীরা পরামর্শ দেন কাজী অফিস, বাস স্টেশন, লঞ্চঘাট ও সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নিতে এবং তাদের ধরে আনতে। কেউ কেউ থানা পুলিশে খবর দেয়ারও পরামর্শ দেন। কিন্তু আফরোজা বেগম তার স্বামীকে কড়া নিষেধ করেন এ রকম কোনো কিছু না করতে। কারণ যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন তাকে ফিরিয়ে এনেও দুর্নাম ঘোচানো যাবে না। তা ছাড়া ধরে এনে জোর করে আটকেও রাখা যাবে না মেয়েকে। কারণ এতেও যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং শেষে সবার জীবন ছারখার হতে পারে। তাই তিনি সব কিছু মেনে নিয়ে একেবারে চুপচাপ থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন। আফরোজা বেগমের মতো অনেক মা-বাবাই আজ এভাবে আতঙ্কিত সন্তান শাসন নিয়ে। দুশ্চিন্তার নাম ইয়াবা : সন্তানের মাদকাসক্ত হয়ে পড়া নিয়ে অভিভাবকের উদ্বেগ দুশ্চিন্তা অনেক আগে থেকেই ছিল। তবে ইয়াবার কারণে তাদের উৎকণ্ঠা অনেক বেড়েছে। একই সাথে নেশা ও যৌনউত্তেজক ট্যাবলেট হিসেবে পরিচিতি পাওয়ায় এটা যুবসমাজের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে এর বিস্তার ঘটে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন হাত বাড়ালেই মেলে মাদক বিশেষ করে ইয়াবা। অভিজাত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, কলেজ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক হারে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়েছে। উচ্চবিত্ত অভিজাত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টার্গেট করে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা; কারণ মাদক গ্রহণে দরকার অর্থ। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে ইয়াবা আসক্ত হয়ে পড়ার খবর এখন গণমাধ্যমের নিয়মিত শিরোনাম। গ্রেফতারকৃত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে মাঝে মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের নাম উঠে আসে। ঢাকায় প্রতিদিন যে লাখ লাখ পিস ইয়াবা বিক্রি হয় তার প্রধান ক্রেতা উঠতি বয়সী ছেলেমেয়ে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে ঢাকার প্রায় সব অলিগলিতে রয়েছে ইয়াবা সরবরাহকারী। ব্যবসায়ীরা প্রথমে তরুণ-তরুণী ছাত্রছাত্রীদের টার্গেট করে ইয়াবা সেবনের জন্য। এরপর সেবনকারীরা একপর্যায়ে হয়ে যায় ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সরবরাহকারী। কারণ এর মাধ্যমে তাদের ইয়াবা সেবনের খরচ উঠে আসে। মাদক নিরাময় কেন্দ্রে আগে হেরোইন আসক্তসহ অন্যান্য মাদকাসক্তকে নিয়ে আসত অভিভাবক। কিন্তু এখন বেশির ভাগ মা-বাবা সেখানে নিয়ে যাচ্ছেন ইয়াবা আসক্তদের। ইয়াবার ছোবলে বিপন্ন হচ্ছে অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর জীবন। বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে পরিবার। মাদক ও যৌনতা অনেক ক্ষেত্রে পরস্পর সম্পৃক্ত। পর্নোগ্রাফি, মাদক, প্রেম, পরকীয়া, ধর্ষণ এসব কারণে সঙ্ঘাত, হানাহানি, গুম খুনের ঘটনা ঘটছে। সন্তান নিখোঁজ, গুম, খুন, অজ্ঞাত পরিচয় লাশ উদ্ধার প্রভৃতি খবরের পেছনে অনেক সময় থাকে মাদকের ছোবল। এসবের ফলে এমন সব জটিল সমস্যায় জড়িয়ে তরুণ-তরুণী ও শিক্ষার্থীরা এমনসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্ম দিচ্ছে যাতে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় মানুষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইয়াবার বিস্তার এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এ ব্যবসায় ছড়িয়ে পড়া এবং ধরা পড়ার খবরে কোনো অভিভাবকই এখন আর এই ভয়ানক ছোবল থেকে সন্তানকে নিরাপদ ভাবতে পারছেন না। কখন কোন সহপাঠীর মাধ্যমে তার সন্তানের হাতেও চলে আসে ইয়াবা এ দুর্ভাবনায় অস্থির অভিভাবকেরা। গত ৪ আগস্ট এক হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়েছেন চট্টগ্রামের দুই কলেজছাত্র। তারা বাকলিয়া থানা পুলিশকে জানিয়েছেন তাদের অর্ধশতাধিক বন্ধু ও বান্ধবী এ নেশায় আসক্ত। লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইয়াবা এনে বিক্রি করছে। গ্রেফতার হওয়া দু’জন হলেন চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মিনহাজুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম মডেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আতিকুল ইসলাম তারেক। মাদক শুধু শহরের ঐশীদের ধ্বংস করছে না বরং এর আগ্রাসন ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলা এমনকি গ্রামপর্যায়ে। উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা ও বিদ্যুতের কারণে গ্রামের যেসব হাটবাজারে শহরের ছোঁয়া লেগেছে সেখানেও ছড়িয়ে পড়েছে মাদকের আগ্রাসন। ঢাকার আশপাশের কোনো কোনো শহর উপশহর ভাসছে মাদকের জোয়ারে। ফলে উপজেলা ও গ্রামপর্যায়ের স্কুল-কলেজপড়–য়া সন্তানেরাও জড়িয়ে পড়ছে এ মাদক নেশায়। অভিভাবকেরা তাই কোনো সন্তান এসএসসি পাসের পর আর তাকে গ্রামে রাখতে সাহস করছেন না। বিশেষ করে ঢাকার আশপাশে নারায়ণগঞ্জসহ অনেক এলাকায় মাদকের ব্যাপক বিস্তারের কারণে এলাকায় ছেলেমেয়ে রেখে পড়াতে সাহস করছেন না অনেকে। কিন্তু ঢাকায় পাঠালেও যে নিরাপদ থাকবে তারও নিশ্চয়তা নেই। অনেক অভিভাবক তাই দিশাহীন সন্তানের দুর্ভাবনায়। তাদের আকুতি আমরা এখন কী করতে পারি? তাদের প্রশ্ন কোথায় রেখে কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করালে সন্তানটি নিরাপদে লেখাপড়া শেষ করে বের হতে পারবে এবং তারাও একটু স্বস্তিতে থাকতে পারবেন।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment